কলকাতা: জলই জীবন, জলেই জীবন। নেহা ঠাকুরের ক্ষেত্রে যেন দুটোই ধ্রুব সত্য। হানঝাউ এশিয়ান গেমসে মঙ্গলবার মোট তিনটি পদক জিতেছে ভারত। একটি করে সোনা, রুপো ও ব্রোঞ্জ। ইকুস্ট্রিয়ান ড্রেসজ টিম ইভেন্টে ঐতিহাসিক সোনা জয় ভারতের। দীর্ঘ ৪১ বছরের ব্যবধানে এই স্পোর্টসে সোনা। বাকি দুটি পদক সেইলিংয়ে। এর মধ্যে আলাদা করে বলতে হয় ১৭ বছরের নেহা ঠাকুরের কথা। ডিঙ্গি ILCA 4 ইভেন্টে রুপো নেহার। দিনের শুরু হয়েছিল তাঁর পদকেই। কেন নেহাকে নিয়ে এত আলোচনা? বিস্তারিত জেনে নিন TV9 Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
‘আমরা কোনও দিন সমুদ্র দেখিনি, কিন্তু আমার মেয়ে সমুদ্রে দেশের পতাকা উড়িয়েছে’, নেহার সাফল্যকে এ ভাবেই বর্ণনা করেছেন তাঁর বাবা মুকেশ ঠাকুর। গত পাঁচ দিনে ১১টি রেস! কতটা শক্তি প্রয়োজন আন্দাজ করার জন্যও মানসিক শক্তি থাকতে হবে। মাত্র ১৭ বছরেই তাঁর স্ট্যামিনা এনং এন্ডুরেন্স মুগ্ধ করার মতোই। জলই জীবন, এ তো অনেক ছোট বয়সেই হয়েছিল নেহার জীবনে। সেই গল্পই শোনা গেল তাঁর বাবার মুখে।
বাবাকে বলতেন, সাঁতার শেখাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। মধ্যপ্রদেশের ছোট্ট একটা গ্রাম থেকে উঠে আসা নেহার। সেখানে ছোট খাটো কিছু খরস্রোতা নদী রয়েছে। অবশ্য নদী বলা যায় কিনা সেটাও প্রশ্ন। বাধের জল ছাড়লে তাতে স্রোত থাকে। নেহার জন্য সেটুকুই যথেষ্ঠ ছিল। জল আছে, স্রোত আছে, আর কী চাই! সাইকেল কিংবা বাইকের টিউব নিয়েই সাঁতার শেখা শুরু নেহার। মুকেশ ঠাকুর বলেন, ‘ওর কাছে সময় কাটানো বলতে এটাই পছন্দ ছিল। সাইকেল, বাইকের টিউব নিয়েই সাঁতার শিখতে যেত। এরপর ভোপালে ট্রেনিংয়ের সুযোগ পায়। তারপর ও ওখানে চলে যায়। মেয়ের সফর যেন সেখান থেকেই শুরু। পদকও জিতল।’
মধ্যপ্রদেশ সেইলিং অ্যাকাডেমি থেকে একটি ট্রায়ালের ব্যবস্থা হয়েছিল। কোচ জিএল যাদব দায়িত্বে ছিলেন। নেহার এক দাদা বিশাল সিং ঠাকুর নিজেও শিখতেন। নেহাকে অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করার পরামর্শ তাঁরই। মুকেশ ঠাকুর আরও বলেন, ‘বড় নদী কিংবা লেকে সাঁতারে কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না নেহার। কিন্তু ট্রায়ালেই ও তাক লাগিয়ে দেয়। প্রবল হাওয়া, জলের স্রোত, গভীরতা বোঝার যেন সহজাত ক্ষমতা ছিল ওর মধ্যে। ওকে সেইলিংয়ে যুক্ত করে দিই। কখনও একাই নৌকোয় বেরিয়ে পড়ত।’
ভাগ্যিস, জলের সঙ্গে এতটা বন্ধুত্ব হয়েছিল নেহার। এশিয়ান গেমসে দেশের জন্য পদক জিততে পারলেন। অভিজ্ঞতা বাড়বে, সাফল্যের খিদেও। এরপর হয়তো পদকের রংও বদলাবে। দেশের ঝুলিতে আরও বড় ইভেন্টে, সেরা পদক এলেও অবাক হওয়ার নেই। জলেই যে জীবন খুঁজে নিয়েছে নেহা!