নয়াদিল্লি: মারণ ভাইরাস করোনা (COVID-19) কেড়ে নিয়েছে প্রিয়জনকে। সেই শোক এখনও কাটেনি। তার মধ্যেই অলিম্পিকে অংশ নিতে চলেছেন ভারতীয় তারকা শাটলার চিরাগ শেঠী (Chirag Shetty)। টোকিও অলিম্পিকে ছেলেদের ডাবলসে সাত্বিকরাজ রানকিরেড্ডির (Satwiksairaj Rankireddy) সঙ্গে জুটিতে খেলবেন চিরাগ। টোকিও যাওয়ার আগে এক সাক্ষাৎকারে চিরাগ জানালেন অলিম্পিক (Olympics) নিয়ে তাঁর স্বপ্নের কথা এবং করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কীভাবে তিনি তাঁর মামাদাদুকে হারিয়েছেন।
এপ্রিল মাসে মুম্বইয়ে ট্রেনিংয়ের সময় দাদুকে হারিয়েছিলেন চিরাগ। তাঁর কথায়, “এপ্রিল মাসে ভারতে করোনার পরিস্থিতি রীতিমত খারাপ ছিল। করোনার কারণে প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছিল, যা দেখাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমার পরিবারে আমি মামাদাদুকে হারিয়েছিলাম। তখন বেশ কঠিন সময় ছিল।” চিরাগ বলেন, “তবে একটাই ভালো বিষয় ছিল, আমি অনুশীলন চালিয়ে যেতে পেরেছিলাম। যার জন্যই আমি নিজেকে ওই শোকের থেকে কিছুটা দূরে রাখতে পেরেছি। ব্যাডমিন্টন আমাকে সত্যিই ভীষণ সাহায্য করেছিল। কিন্তু সত্যি বলতে গেলে, পুরো সময়টা ভীষণ কঠিন ছিল।”
প্রায় তিন মাস হতে চলল করোনা কেড়ে নিয়েছে চিরাগের প্রিয়জনকে, সেই ভয় এখনও তাড়া করে তাঁকে। তাঁর কথায়, অলিম্পিকে সুরক্ষাবিধি নিশ্চিত করা হলেও, অংশগ্রহণকারী অ্যাথলিটরা এখনও করোনাকে অবশ্যই ভয় পাবেন। চিরাগ বলেন, “এই কঠিন সময়ে অলিম্পিকে খেলা সৌভাগ্যের ও ভীষণই গর্বের। মহামারি এখনও চলছে, ফলে সকলেই ভুল রিপোর্টের বিষয়টি নিয়েও কিছুটা আতঙ্কে রয়েছে। তাই আমরা জানি না, টোকিওতে বিষয়টা কেমন হতে চলেছে। থাইল্যান্ডে যে ভাবে ভুল করোনা রিপোর্ট নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল, শুধু আমি নই, সকল অ্যাথলিটই এই পরিস্থিতিতে চিন্তিত। ফের ওই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে।”
করোনা তাঁর অনুশীলনে যথেষ্ট ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। এমনটাই বলছেন চিরাগ। তাঁর কথায়, “এই পরিস্থিতিতে অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন ছিল। প্রথমত বিভিন্ন টুর্নামেন্ট বাতিল হয়ে গিয়েছিল। সেটাও একটা প্রভাব ফেলেছিল। এপ্রিল-মে মাসে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করার পর তো লকডাইন হয়ে গেল। ওই সময়টা আমাদের ট্রেনিংয়েও অনেক বাধা বিপত্তি তৈরি হয়েছিল।”
আরও পড়ুন: Tokyo Olympics 2020: অলিম্পিকের টেনিস থেকে পদক আনতে সময় লাগবে, বলছেন লিয়েন্ডার
২৩ বছর বয়সী চিরাগ কিন্তু সব কিছুর মধ্যেও পজিটিভ থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেছেন, “করোনার প্রভাব অলিম্পিকেও পড়বে সেটা ঠিক। কিন্তু ব্যাক্তিগতভাবে আমদের মাথার মধ্যে চলছে যে, এই পরিস্থিতিতে এত বড় টুর্নামেন্ট যখন আয়োজিত হচ্ছে, আমাদেরও তৈরি থাকতে হবে প্রতিদিন নতুন পরীক্ষার জন্য। করোনা আবহেও অলিম্পিক। এটাই বড় ব্যাপার। যতটা সম্ভব আমাদের নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে হবে।”
ভারতের ব্যাডমিন্টন ডাবলসের তারকা জুটি গত কয়েক বছরে তিনজন কোচের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। গত কয়েক মাস ধরে চিরাগ-সাত্বিকরাজ জুটি নতুন বিদেশি কোচ ম্যাথিয়াস বোয়ের অধীনে অনুশীলন করছেন। ম্যাথিয়াস প্রাক্তন বিশ্বের এক নম্বর এবং লন্ডন অলিম্পিকে রুপো পাওয়া চ্যাম্পিয়ন। নতুন কোচের ব্যাপারে চিরাগ বলেন, “ম্যাথিয়াসের সঙ্গে এখনও পর্যন্ত সত্যিই বেশ ভালো প্রশিক্ষণ হয়েছে। ডিফেন্সের মতো বেশ কয়েকটি নির্দিষ্ট জায়গায় গত ৫-৬ মাস ধরে আমরা বেশ কাজ করছি। তিন কোচের মধ্যে একটা বিষয় আলাদা সেটা হল, ম্যাথিয়াস বেশ টেকনিক্যাল।” তিন কোচের কাছ থেকেই কিছু না কিছু আলাদা শিখেছেন চিরাগ-সাত্বিকরাজ। সেই সব অলিম্পিকের মঞ্চে কাজে লাগবে, আশাবাদী চিরাগ। টোকিও অলিম্পিকের (Tokyo Olympics) গ্রুপ এ তে রয়েছেন চিরাগ-সাত্বিকরাজ।
আরও পড়ুন: বিশেষ অলিম্পিক সম্মান নোবেলজয়ী বাঙালি মহম্মদ ইউনুসকে