Thomas Cup Final 2022: ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন ইন্দোনেশিয়াকে হারিয়ে ব্যাডমিন্টনে প্রথমবার বিশ্বসেরা ভারত

থমাস কাপে প্রথম সোনা জয় ভারতের। ইতিহাসের পাতায় নাম তুলে ফেললেন শ্রীকান্ত-লক্ষ্যরা।

Thomas Cup Final 2022: ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন ইন্দোনেশিয়াকে হারিয়ে ব্যাডমিন্টনে প্রথমবার বিশ্বসেরা ভারত
Image Credit source: Twitter
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 15, 2022 | 3:55 PM

ব্যাংকক:গ্যালারির একটা দিক যেন দখল করে ফেলেছিল ভারতীয় সমর্থকরা। টানা স্লোগান উঠছিল ‘ভারতমাতা কি জয়’। কে জানত, তাই আচ্ছন্ন করে ফেলবে ভারতীয় টিমকে। থমাস কাপের (Thomas Cup 2022) ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি চ্যাম্পিয়ন হওয়া টিমের নাম ইন্দোনেশিয়া। মোট ১৪বার জিতেছে তারা। তার পর চিন, ১০বার। মালয়েশিয়া জিতেছে ৫বার। খেতাব জয়ের তালিকায় নামই ছিল না যাদের, সেই ভারত কিনা ইন্দোনেশিয়াকে (Indonesia) ৩-০ উড়িয়ে ইতিহাস তৈরি করে ফেলল। কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালেও এতটা ভয়ঙ্কর ছিলেন না কিদাম্বি শ্রীকান্ত (Kidambi Srikanth), লক্ষ্য সেনরা (Lakshya Sen)। ইন্দোনেশিয়ার বিরুদ্ধে থমাস কাপের ফাইনালে অবিশ্বাস্য পারফর্ম করে বিশ্বসেরা ভারতীয় টিম।

শুরু থেকেই বিস্ফোরক ছিল ভারতীয় শাটলারদের খেলা। কোর্টে অপ্রতিরোধ্য মনোভাব নিয়েই নেমেছিলেন প্রবাসী বাঙালি লক্ষ্য সেন। প্রথম গেমটা ৮-২১ হেরেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় গেমে দারুণ ভাবে ফিরে এসেছিলেন। অ্যান্থনি জিন্টিংয়ের বিরুদ্ধে ২১-১৭ জিতে নেন ভারতীয় তরুণ। তীব্র লড়াই করার পরও তৃতীয় গেমটাও জেতেন। তবে আনফোর্সড এররের কারণে জিন্টিংকে প্রচুর পয়েন্ট দিয়েছেন। না হলে খেলা এতটাও গড়াত না। তৃতীয় গেমের শুরুতে ৩-৬ পিছিয়ে ছিলেন লক্ষ্য়। কিন্তু সেখান থেকে খেলা ঘুরিয়ে দেন। ২১-১৬তে হারিয়ে দিলেন প্রতিপক্ষকে। কেন এই মুহূর্তের ভারতের অন্যতম সেরা শাটলার তিনি, প্রমাণ করে দিলেন। থমাস কাপের শুরুটা একেবারেই ভালো যাচ্ছিল না। চোটের কারণে গ্রুপ পর্বের কয়েকটা ম্যাচ খেলেনওনি। সেই তিনিই ফাইনালে নেমে চমকে দিলেন। প্রথম টাইটাই জিতে নিলেন বিশ্বের ৫ নম্বর ব্যাডমিন্টন প্লেয়ারের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে সময় নিলেন এক ঘণ্টা ৫ মিনিট। কিন্তু থমাস কাপের ফাইনালে শুরুতেই ভারতকে তাতিয়ে দিলেন লক্ষ্য। ভারতের প্রাক্তন কোচ, যাঁর অ্যাকাডেমি থেকেই উত্থান লক্ষ্যর, সেই বিমল কুমার বলে দিলেন, ‘জিন্টিংয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচটা ফিফটি-ফিফটি ছিল। কিন্তু সেটাই লক্ষ্য ৬০-৪০তে নিয়ে যেতে পেরেছিল। যে কারণে জিততে পারল।’

টিম ইভেন্টের ক্ষেত্রে বরাবর দেখা গিয়েছে, প্রতিপক্ষের উপর যদি চাপ তৈরি করা যায়, যত ভালো টিমই হোক না কেন ফোকাস নড়ে যায়। ইন্দোনেশিয়ার ক্ষেত্রে তাই হল। থমাস কাপ জেতার দুরন্ত রেকর্ড যাদের মতো আর কোনও দেশের নেই, সেই তারাই কিনা ভারতের মতো হিসেবের বাইরে থাকা টিমের সামনে পড়ে কেঁপে উঠল। লক্ষ্য যে কাজটা শুরু করেছিলেন, সেটাই এগিয়ে নিয়ে যান ভারতীয় জুটি সাত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি ও চিরাগ শেঠী। লক্ষ্যের ম্যাচেরই মতো যেন খেললেন তাঁরা। প্রথম গেমটা ১৮-২১য়ে হেরেছিলেন ইন্দোনেশিয়ান জুটি এহসান-সুকামুলজোর কাছে। দ্বিতীয় গেমে প্রবল ভাবে ঘুরে দাঁড়ান তাঁরা। যে ভুলগুলো করেছিলেন প্রথম গেমে, তার আর পুনরাবৃত্তি দেখা যায়নি। ২৩-২১ জেতার পর তৃতীয় গেমটাও ২১-১৯ জেতেন সাত্বিক-চিরাগ।

প্রথম দুটো টাই জিতে ২-০ করে ফেলা ভারতকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ৩-০ ইন্দোনেশিয়ার শাটলার জোনাথন ক্রিস্টিকে স্ট্রেট গেমে হারিয়ে চিরকালীন ইতিহাস তৈরি করে ফেলেন কিদাম্বি শ্রীকান্ত। আগের দুটো ম্যাচে সে ভাবে খেলতে পারেননি। ফাইনালে কিন্তু শ্রীকান্ত নামলেন তাঁর পুরনো ফর্ম নিয়েই। ক্রিস্টিকে উড়িয়ে দিলেন ২১-১৫, ২৩-২১এ। আগের দুটো ম্যাচে ভারতকে জেতানো এইচএস প্রণয়কে নামতেই হল না।

ফাইনালের কমেন্ট্রি করতে করতে অপর্ণা পোপাট বলছিলেন, ‘ব্যাডমিন্টন মূলত সিঙ্গলস খেলা। ব্যক্তিগত নৈপুন্যই তুলে ধরে শাটলাররা। কিন্তু টিমগেম পাওয়া সাফল্য অনেক বেশি উদ্বুদ্ধ করে। সারা ভারত থমাস কাপের ফাইনাল নিয়ে এই কারণেই এতটা মেতে ছিল। আজ স্বপ্নপূরণ হল আমাদের মতো ব্যাডমিন্টন প্রেমীদের।’