রায়গঞ্জ: আলমাস কবিরের (Alamas Kabir) স্বপ্নভঙ্গ। শুরু রাজনৈতিক তরজা। পাসপোর্ট বিভ্রাটে কুয়েতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ এশিয়ান ইয়ুথ অ্যাথেলেটিক চ্যাম্পিয়ানশিপে (Asian Youth Athletics Championships) ভারতের (India) হয়ে ২০০ মিটার দৌড়ে দেশের একমাত্র প্রতিযোগী হিসেবে অংশ নেওয়া হল না রায়গঞ্জের আলমাস কবিরের। আশা ছিল দেশকে পদক এনে দেবেন তিনি। কিন্তু পাসপোর্টের মেয়াদ কম থাকায় ভেস্তে গেলো তাঁর সেই স্বপ্ন। এই নিয়ে শুরু রাজনৈতিক তরজা। বাংলাকে পিছিয়ে দিতে চক্রান্ত, ষঢ়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে কেন্দ্র ও বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যানী। আগামী মঙ্গলবার তৃণমূলের তরফে পথে নামা হবে বলে জানিয়েছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক। পালটা কটাক্ষ বিজেপির। আলমাসের সঙ্গে এই ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য তদন্তের দাবী তুলেছেন দুই ফুল শিবিরই। আর রাজনৈতিক তরজার মাঝেই আগামীর স্বপ্ন দেখছে আলমাস।
এ বছর কুয়েতে বসেছে অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়ান চাম্পিয়নশিপের আসর। সেখানেই রিলে ও ২০০ মিটার দৌড়ে সুযোগ পেয়েছিলেন রায়গঞ্জের শীতগ্রাম এলাকার তিওরডাঙ্গি গ্রামের ১৭ বছরের আলমাস কবির। তাঁর স্বপ্ন ছিল দেশকে পদক এনে দেওয়ার। কিন্তু পাসপোর্টে গোলযোগ থাকায় ভঙ্গ হয়েছে আলমাসের সেই স্বপ্ন। নিয়ম অনুয়ায়ী পাসপোর্টের মেয়াদ ছয় মাস থাকা জরুরী। কিন্তু আলামাসের পাসপোর্টে তা না থাকায়, কুয়েত দেশ তাঁকে ভিসা দেয়নি বলে জানান তিনি।
আলমাস জানায়, কলকাতা অফিসে পাসপোর্টের জন্য জরুরীভিত্তিক আবেদন করেছিলেন তিনি। এরপর পাসপোর্টও পেয়েছিলেন। কিন্তু ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে যে নিয়ম থাকা প্রয়োজন তাঁর সেটি জানা ছিল না। যদি বিষয়টি পাসপোর্ট অফিস থেকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হত তা হলে হয়তো এই অঘটন ঘটত না। এখন কুয়েতে ২০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতা চললেও সেই মাঠে নেই আলামাস। তার জায়গায় বাড়িতে বসেই সেই খেলা দেখতে হল আলমাসকে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় রাজ্যের হয়ে জাতীয় স্তরে পদক জেতেন আলমাস। এর পর ২১ সেপ্টেম্বর দেশের হয়ে রিলে ও দৌড় দুই বিভাগে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায় সে। সেই অনুযায়ী, গত ১১ অক্টোবর কুয়েত যাওয়ার জন্য দিল্লি থেকে বিমান ধরতে গেলে আলমাস দেখে তাঁর ভিসার অনুমোদন হয়নি। এই প্রথম বার দেশের জার্সি পরে বিদেশের মাটিতে দৌড়ানোর কথা ছিল আলমাসের। কিন্তু ভারাক্রান্ত মন নিয়ে তাঁকে ফিরতে হয় বাড়িতে। আলমাস এ ভাবে বাড়ি ফিরে আসায় হতাশ তাঁর পরিবার ও প্রতিবেশীরাও।
এ দিকে আলমাসের এই পাসপোর্ট বিভ্রাট নিয়ে ইতিমধ্যেই রায়গঞ্জে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা। রায়গঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যানী অভিযোগ তুলে বলেন, “পাসপোর্ট বিভাগ কেন্দ্রীয় সরকারের। বাংলাকে পিছিয়ে দেওয়ার জন্য কেন্দ্র ও বিজেপি নেতৃত্ব সব দিক দিয়েই চক্রান্ত করছে। আর বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি আলমাসকে ষঢ়যন্ত্র করে আটকে দিয়ে, বাংলাকে আটকে দেওয়া হয়েছে।” রায়গঞ্জে আগামী মঙ্গলবার কেন্দ্র ও বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিবাদ মিছিল হবে বলে জানিয়েছেন রায়গঞ্জের বিধায়ক কৃষ্ণ কল্যানী।
তবে কৃষ্ণর এই অভিযোগ আর রাস্তায় নামার কটাক্ষ করে পালটা দিয়েছেন বিজেপির উত্তর দিনাজপুর জেলা সভাপতি বাসুদেব সরকারও। রাজ্যে ক্রীড়া ক্ষেত্রে যারা দায়িত্বপ্রাপ্তরা রয়েছেন তাঁরা প্রত্যেকেই শাসক দলের, আর এতে তাঁদেরই গাফিলতি আছে বলে দাবী করেছেন তিনি। যদিও শাসক বিরোধী দু’পক্ষই এই বিষয়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন। তবে তাঁকে নিয়ে রাজনৈতিক তরজা শুরু হলেও আলমাস জানিয়েছেন, তিনি আবারও প্রস্তুতি নেবেন। দেশের হয়ে অন্য কোনও প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য।