সোনম মালিক (Sonam Malik)। বয়স ১৯। আর এই বয়সেই এক যুদ্ধে জয়ী হয়েছেন তিনি। সোনম নামটা কুস্তিমহলে সর্বসাকুল্যে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। কিন্তু তিন বছর আগেই কেরিয়ার শুরু হতে না হতেই, শেষ হতে বসেছিল হরিয়ানার মেয়ে সোনমের। ২০১৭ সালে এক প্রতিযোগিতায় কাঁধে মারাত্মক চোট পান তিনি। ডান হাত ও কাঁধ পুরোপুরি অসাড় হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লড়াই থামাননি সোনম। সব বাধা বিপত্তি পেরিয়ে, মনের জোরে প্রায় দেড় বছর পর কুস্তিতে ফেরেন। টোকিও গেমসে ভারতকে পদকের আশা জোগাচ্ছেন জাতীয় গেমসে সোনাজয়ী ও গ্রিসের আথেন্স ওয়ার্ল্ড ক্যাডেট গেমসে সোনাজয়ী এই হরিয়ানার মেয়ে। টোকিও অলিম্পিকে (Tokyo Olympics) মেয়েদের ৬২ কেজি বিভাগে অংশগ্রহণ করতে চলেছেন সোনম।
ভারতের সবচেয়ে কম বয়সি মহিলা কুস্তিগির (Indian Wrestler) হিসেবে টোকিও অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন সোনম। গত এপ্রিলে কাজাখাস্তানে হওয়া এশিয়ান অলিম্পিক কোয়ালিফায়ারের ফাইনালে পৌঁছেই টোকিওর টিকিট নিশ্চিত করে ফেলেন সোনম। ম্যাটে তাঁর লড়াই গোটা বিশ্বে চর্চা শুরু করে দেয়। কুস্তিমহলেও বেশ পরিচিত হয়ে ওঠেন তিনি।
আজমের মালিকের তত্ত্বাবধানে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু স্পোর্টস কমপ্লেক্সে প্রশিক্ষণ নিতে থাকেন সোনম। যখন সোনম স্নায়ুর রোগে ভুগছিলেন, সেইসময় ছ’মাস তাঁর জন্য ভীষণ কঠিন ছিল। এমনটাই বলছেন তাঁর কোচ। হরিয়ানার সোনপাতের মেয়ে সোনমের কোচ আজমের বলেন, “২০১৭ সালে সোনম যখন স্নায়ুর রোগে ভুগছিল, তখন ও হাত দিয়ে কোনও জিনিস ধরতে পারত না। শুধু তাই নয়, কিছু তুলতেও পারত না। ওর ডান হাত ও কাঁধ পুরো অসাড় হয়ে গিয়েছিল। চিকিৎসক তখন ওকে কুস্তির কথা ভুলে যেতে বলেছিলেন। বলেছিলেন ওই পরিস্থিতিতে কীভাবে ও বাঁচবে, সেটাই ভাবতে। তবে চিকিৎসক বলেছিলেন, সোনমের ভাগ্যে থাকলে ও সুস্থ হয়ে উঠবে।”
সোনমের বাবা রাজেন্দ্রর মালিকও কুস্তিগির ছিলেন। মেয়ের সুস্থতায় তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। তার কথায়, “আমার সীমিত উপার্জনের কারণে আমি সোনমকে শহরের বড় চিকিৎসকের কাছে ট্রিটমেন্ট করাতে পারিনি। আমরা দেশি উপায় (আয়ুর্বেদিক) অবলম্বন করে ওকে সুস্থ করে তুলেছি। আমার মনে হয় ঈশ্বর চাইতেন সোনম যেন ম্যাটে ফেরে, তাই মাত্র ছ’মাসের মধ্যে ও সুস্থ হয়ে ওঠে।” যদিও পুরো একবছর ধরেই সোনমের চিকিৎসা চলেছিল।
২০১৮ সালেই ম্যাটে ফেরেন সোনম মালিক। সেই বছর এশিয়ান ক্যাডেট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওয়ার্ল্ড ক্যাডেট চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন। তারপর ২০১৯ সালে আরও এক বিশ্ব ক্যাডেট চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছিলেন সোনম। পরপর ভালো পারফরম্যান্সের সুবাদে তাঁকে সিনিয়র লেভেলে তুলে আনা হয়েছিল। তারপরই সকলের নজর কাড়তে শুরু করেন হরিয়ানার সোনম। রিও অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পাওয়া সাক্ষী মালিককে ২০২০ সালে লক্ষ্ণৌতে হওয়া জাতীয় ট্রায়ালে হারান সোনম। এর মাঝে আরও তিন বার সাক্ষী মালিককে পরাজিত করেছিলেন সোনম।
৪ অগস্ট অলিম্পিকের ম্যাটে নামবেন সোনম। তার আগে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে সোনম বলছেন, “আমি জানি আমার বিভাগে প্রচুর প্রতিযোগিতা রয়েছে। আমিই জয়ের দাবিদার একমাত্র নই। তবে আমার দিনে যে কোনও সেরা খেলোয়াড় থাকলেও আমি তাঁকে হারাতে পারব। যদি কেউ আমাকে হাল্কাভাবে নেয়, সেটা তার জন্যই ক্ষতির হবে।” তিনি যোগ করেন, “আমি আমার পুরনো প্রতিযোগিতার ভিডিও ফুটেজগুলো দেখছি। সেই মতো মনের মধ্যে ছক কষে নিচ্ছি।”
আরও পড়ুন: Tokyo Olympics 2020: টোকিও থেকে সরলেন অ্যাঞ্জেলিক কেরবেরও