অভিষেক সেনগুপ্ত
২০০৯ সালে কত বয়স ছিল তাঁর? নায়কের বয়স ২২। আর যাঁকে পরবর্তী নায়ক বাছা হবে, তখন ছিলেন মাত্র ৮ বছরের কিশোর। দৌড়ের দুনিয়ায় পা-ও রাখেননি। স্বপ্ন দেখা দূরের গল্প। কে জানত, সেই ২২ বছরে পৌঁছে তাঁকেই খোদ নতুন উসেইন বোল্ট বলা হবে! রিও অলিম্পিকেই শেষবার দেখা গিয়েছিল স্প্রিন্টের দুনিয়ার বাদশাকে। যতদিন ছিলেন, কেউ ধারে-কাছে পৌঁছতে পারেনি। তিনি চলে যাওয়ার পরও বদলায়নি ছবি। ৯.৫৮ আজও অজেয়। বোল্টের তাজ মাথায় দেবেন, এমন লোক কি সহজে পাওয়া যায়? ছেলে হোক আর মেয়ে, জামাইকাই গত দেড়টা যুগ শাসন করেছে গতির দুনিয়া। সেই সাম্রাজ্যেই নতুন রাজার উত্থান হতে চলেছে?
প্যারিস অলিম্পিকে নতুন নায়ক হতে পারেন কিশানে থমসন। মাত্র এক বছরের পেশাদারি কেরিয়ার। তাতেই হইচই ফেলে দিয়েছেন। অলিম্পিকের ট্রায়ালে ৯.৯১ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়েছেন থমসন। তাতে অবশ্য থেমে থাকেননি। ৯.৭৭ সেকেন্ডে জামাইকার জাতীয় খেতাব জিতে হইচই ফেলে দিয়েছেন। গত দু’বছরের নিরিখে যা সেরা। স্টিফেন ফ্রান্সিসের ছাত্র ডায়মন্ড লিগেও ৯.৮৫ সেকেন্ডে দৌড়েছেন। বড় মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন, তার প্রমাণ মিলেছে। অলিম্পিকেও কি সেরাটা দিতে পারবেন?
প্যারিসে লড়াইটা মূলত তিনজনের। যুক্তরাষ্ট্রের নোয়া লাইলসের ডায়মন্ড লিগের ১০০ মিটারে সম্প্রতি দৌড়েছেন ৯.৮১ সেকেন্ডে। যা তাঁর ব্যক্তিগত সেরা। কেনিয়ার ফার্দিনান্দ ওমানায়ালার সেরা সময় ৯.৭৯ সেকেন্ড। এই তিনের দিকেই নজর থাকবে অলিম্পিকে। তবে বোল্টের দেশোয়ালি ভাই থমসনই চমকে দেবেন, এমনই মনে করছেন অনেকে। একটাই প্রশ্ন থাকছে থমসনকে নিয়ে, চোট প্রবণতা। গত কয়েক বছর ধরে টানা চোটের কবলে পড়েছেন। সিন বোনের চোট কতটা সেরেছে, সংশয় আছে অনেকেরই। অলিম্পিকে যদি সেরাটা দিতে পারেন, তা হলে থমসনই হবেন নতুন নায়ক। প্রশ্ন হল, বিশ্ব মিটে বোল্টের সেই ম্যাজিক ফিগার ৯.৫৮ ভাঙতে পারবেন? যে কোনও অবিশ্বাস্য রেকর্ড গড়ার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে অনেক কিছু। ফিটনেস, আত্মবিশ্বাস আর ওই দিনটা। যদি সব মিলিয়ে দিতে পারেন থমসন, হয়তো বোল্টের পৃথিবীতে পা রাখবেন। যদি নাও পারেন, ধারেকাছে পৌঁছতে পারলেও ২২ বছরের থমসনকে বোল্টের উত্তরসূরী বেছে নেবে দুনিয়া।
থমসনের সোজা থিওরি। শুরুতেই ঝড় তোলা। যে থিওরি দিয়ে বাজিমাত করেছিলেন বোল্ট। থমসন বলছেনও, ‘আমার কোচ বলেছেন, শুরুর ৬০ মিটারটা দৌড়ও। বাকি আর দরকার নেই।’ বোল্টও এটাই করতেন। দ্রুত সেরে ফেলতেন কাজ। অন্যরা ফিনিশিং লাইনে পৌঁছনোর আগেই বোল্ট পদক ঝুলিয়ে ফেলতেন গলায়। এই কারণেই বোল্ট ছিলেন কিংবদন্তি। তাঁরই দেশের ছেলে কি এমনটা করে দেখাতে পারবেন? হয়তো বোল্ট নিজেও তাকিয়ে আছেন অলিম্পিকের সেরা ইভেন্টের দিকে।