ভারতীয় অলিম্পিকে এমন ঘটনা আগে ঘটেনি। যে মেয়ে দেশে সোনা আসার স্বপ্ন দেখাচ্ছিলেন, তিনিই শেষ মুহূর্তে বাদ পড়লেন অলিম্পিক থেকে। প্যারিস অলিম্পিকে মঙ্গলবার রুপো নিশ্চিত করে ফেলেছিলেন ভারতীয় কুস্তিগির বিনেশ ফোগাট। আজ, বুধবার কয়েক ঘণ্টা পর সোনার জন্য ফাইনালে নামার কথা ছিল বিনেশের। মাত্র ১০০ গ্রাম ওজন বেশি থাকায় ৫০ কেজি বিভাগ থেকে বাতিল করা হল বিনেশ ফোগাটকে। যা জানা যাচ্ছে, মঙ্গলবার রাতে ইভেন্টের পর বিনেশের ওজন ২ কেজি বেড়ে যায়। আজ, বুধবার ফাইনাল। সকাল সাড়ে ৮টায় তাঁকে ওজন পরীক্ষা দিতে হত। তাই সারারাত জগিং, স্কিপিং ও সাইক্লিং করেছেন তিনি। এও শোনা যাচ্ছে, চুলও খানিকটা কেটে ফেলেছেন। শেষ পর্যন্ত ১ কেজি ৯০০ গ্রামের বেশি ওজন কমাতে পারেননি। মাত্র ১০০ গ্রাম বেশি হওয়ার জন্য অলিম্পিকের স্বপ্ন শেষ। হঠাৎ করে ওজন বাড়ল কেন তাঁর? এত শরীরচর্চা করেও কেন কমল না ওজন? কী বলছেন চিকিৎসকেরা?
TV9 বাংলা ডিজিটালকে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত বলেন, “পিরিয়ড শুরুর আগে একটু ব্লোটিং (স্ফীতভাব বা পেট ফুলে যাওয়া) দেখা দেয়, এর জন্য ওজন বাড়তে পারে। কিন্তু ২ কেজি নয়।” তিনি ব্যাখ্যা করেন, ঋতুচক্রের আগে শরীরে ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের ভারসাম্য দেখা দেয়, তরলের পরিমাণও বাড়ে, এর জেরে মহিলাদের দেহের ওজনও হেরফের হয়। কিন্তু রাতারাতি বিনেশের ২ কেজি ওজন বৃদ্ধিতে অবাক হয়েছেন চিকিৎসকেরাও।
প্যারিস অলিম্পিক থেকে মাত্র ১০০ গ্রামের জন্য বিনেশের ছিটকে যাওয়ার প্রসঙ্গে নারায়ণ মেমোরিয়াল হাসপাতালের কনস্যালট্যান্ট ফিজিশিয়ান ডাঃ সৌম্য গায়েন বলেন, “রাতারাতি এভাবে ওজন বেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। হয়তো তিনি এই কয়েকদিনের মধ্যে যৌন মিলনে লিপ্ত হয়েছেন অথবা এমন কোনও ড্রাগ (যে ড্রাগ ওয়ার্ল্ড অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সি দ্বারা নিষিদ্ধ) নিয়েছেন যার জেরে ওজন বেড়ে গিয়েছে। যদি কোনও ড্রাগ নিয়ে থাকেন, সেটা ইউরিন পরীক্ষাতেই ধরা পড়ে যেত। এমনও হতে পারে সারারাত ওয়ার্ক আউটের জন্য কোনও এনার্জি বুস্টিং খাবার খেয়েছেন। সেটার জন্যও ওজন বাড়তে পারে। কিন্তু ২ কেজি ওজন বেড়ে যাওয়া কোনওভাবেই সম্ভব নয়।” এই প্রসঙ্গে সহমত চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস। রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ কার্ডিয়াক সায়েন্সেস হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ অরিন্দম বিশ্বাস TV9 বাংলা ডিজিটালকে বলেন, “কোনও মেডিসিন নিয়েছিলেন কিংবা সঠিক ডায়েট মেনে চলেননি, এছাড়া কোনওভাবেই এভাবে ওজন বেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়।”
স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ পুরবী চ্যাটার্জিও সহমত পোষণ করেছেন ডাঃ দাশগুপ্তর সঙ্গে। ডাঃ পুরবীর কথায়, হঠাৎ করে ওজন বেড়ে যাওয়া সম্ভব নয়। পিরিয়ডের আগে অনেক মহিলারই ওজন বাড়ে। হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং দেহে তরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়াই এর পিছনে দায়ী। তবে, এই বাড়তি ওজনও ৫০০ গ্রামের বেশি খুব একটা হয় না। একজন খেলোয়ার কিন্তু কখনওই ডায়েট নিয়ে ছেলেখেলা করেন না। তা-ই দীর্ঘদিন ধরে ভুল খাদ্যাভ্যাসে জেরে ওজন বেড়েছে তাও দাবি করতে পারছেন না চিকিৎসকেরা। তবে, এই মুহূর্তে ডিহাইড্রেশন হওয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বিনেশ।
রাতারাতি ২ কেজি ওজন বৃদ্ধি এবং এত কঠোর পরিশ্রমের পরও ১০০ গ্রাম ওজন না ঝরানো—বিনেশের কাছে মেনে নেওয়া কঠিন। স্বপ্নের অপমৃত্যু। একইভাবে, চিকিৎসকেরাও হতাশ এই ঘটনায়। TV9 বাংলা ডিজিটালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ডাঃ চন্দ্রিমা দাশগুপ্ত জানিয়েছেন, “বিনেশ ফোগাট আমাদের হৃদয়ে আছেন। এমন একটা বিষয় ঘটেছে বলে আমরা ভীষণই হতাশ।”