আসানসোল: অনেকটা সময় পেরিয়েছে। এখনও যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না। ছাত্রজীবনেও তাস খেলতেন সঞ্জিৎ দে। এই খেলাকে এখনও অনেকেই ‘জুয়া’ হিসেবেই দেখেন। সঞ্জিতের বাড়ির লোকেরও ছেলের এই তাস খেলার নেশায় ভালো লাগত না। বাবা-মা পছন্দ করতেন না। কিন্তু পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। বাড়ির সেই ছেলের জন্য গর্বিত সঞ্জিতের পরিবার। তার কারণ, সোনার পদক। আন্তর্জাতিক মঞ্চে দেশকে গর্বিত করা। কথা হচ্ছে আসানসোলের যুবক সঞ্জিৎ দে-কে নিয়ে নিয়ে।
আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ব ব্রিজ চ্যাম্পিয়নশিপ। দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন আসানসোলের মহিশীলার দক্ষিণপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জিৎ দে এবং কলকাতার বিনোদ সাউ জুটি। পেয়ারস ইভেন্টসে সোনা জিতেছে ভারতের এই জুটি। সোনা জিতে বাড়ি ফেরার পর থেকেই আসানসোলের সঞ্জিতকে ঘিরে উন্মাদনা। কলেজ জীবন থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে তাস খেলায় হাতেখড়ি। কিন্তু তখনও তাস খেলাকেই জীবনের লক্ষ্য হিসেবে ধরে নেননি সঞ্জিৎ। পরবর্তীকালে বড় খেলোয়াড়দের সঙ্গে পরিচয় হওয়ার পর প্রেরণা পান। কন্ট্রাক্ট ব্রিজ খেলায় উৎসাহিত হন সঞ্জিৎ। ২০১৫ সালে ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্স। আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে যে আকাশ পাতাল তফাৎ তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। সোনাজয়ী সঞ্জিৎ দে বলেন, ‘অসাধারণ একটা অনুভূতি হচ্ছে। আমেদাবাদে সিলেকশন পর্ব হয়েছিল। বিনোদের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলাম। বাছাই পর্বের শেষ দিকে একটু পিছিয়ে পড়লেও ঘুরে দাঁড়িয়েছি। দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাই। প্রথম বার দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি, এটা ভেবেই রোমাঞ্চ হচ্ছিল। আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রথম বার। এই খেলায় কিংবদন্তিদের সামনে থেকে দেখা। টিম ইভেন্টে ভালো করতে পারিনি। জুটিতে বিনোদের সঙ্গে গোল্ড। স্নায়ুর চাপ, নতুন অভিজ্ঞতার রোমাঞ্চ, সঞ্জীত দে ও বিনোদ সাউ ফ্রম ইন্ডিয়া বলে পোডিয়ামে যখন ডাকা হল, বুঝে পাচ্ছিলাম না কী হচ্ছে।’ কথা বলার সময় পুরো দৃশ্যটা যেন আরও একবার তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠল।
আর্জেন্টিনার বুয়েনস আইরেসে ২২ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর ব্রিজের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ হয়। পেয়ার্স ইভেন্টে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ এবং সোনার পদক। সঞ্জিৎ দে আরও জানিয়েছেন, আগামী দিনে দেশের হয়ে এশিয়ান গেমস কিংবা আরও বড় ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের ইচ্ছে রয়েছে। সঞ্জিতের বাবা রঞ্জিত দে ও মা বুলা দে জানিয়েছেন, ছাত্রাবস্থায় সঞ্জিৎ তাস খেলতো, একেবারেই ভালো লাগত না। কিন্তু এখন ছেলের জন্য গর্ব হচ্ছে। ছেলে বিশ্ব জয় করেছে।