City in Turkey’s Cappadocia: মাটির নিচে আরশিনগর… তবে এ পড়শিদের হয়তো আপনি চেনেন না!
Ancient City Derinkuyu: তুরস্কের ক্যাপাদোসিয়া অঞ্চলের এক ব্যক্তি কিছুদিন ধরেই দেখছিলেন যে, তাঁর মুরগি হঠাৎ-হঠাৎই হারিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে বাড়ি সারাতে গিয়ে তাঁর নজরে আসে এক বিশাল সুড়ঙ্গ। BBC-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সুড়ঙ্গের অন্দরেই অবস্থিত ডেরিনক্যুয়ু।
‘বাড়ির কাছে আরশিনগর, সেথা পড়শি বসত করে/আমি একদিনও না দেখিলাম তারে…’ না, এ পড়শিকে আপনি চাইলেও দেখতে পাবেন না। কারণ একটাই, আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে ছিল তার বাস। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যা, তা হচ্ছে তার বা তাদের বাস ছিল আপনার পায়ের নিচে! সম্প্রতি তুরস্কের ক্যাপাদোসিয়া অঞ্চলে (Turkey’s Cappadocia Region) মিলেছে এমনই এক বিশাল বাড়ির খোঁজ, যা দেখলে আপনার মাথা ঘুরে যেতে বাধ্য! বারান্দা, বেডরুম থেকে আস্ত একটা চার্চ, স্কুলবাড়ি―সব একটাই বাড়ির মধ্যে, তবে আজকের বাড়ির সঙ্গে তার পার্থক্য একটাই। মাটির নিচে নামলে তবেই এই বাড়িতে প্রবেশ সম্ভব।
মাটির নিচে ‘আরশিনগর’
তুরস্কে এই বাড়ির সন্ধান মিলেছে আচমকাই। সূত্রের খবর, বাড়ির মেরামতির কাজ করতে গিয়ে দেওয়ালে একটি অংশ হঠাৎ খসিয়ে ফেলেন এক ব্যক্তি। আর তখনই নজরে আসে অচেনা, অজানা, অন্ধকারাচ্ছন্ন দ্বার। ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৮০ মিটার নীচে স্থিত এই গুহাসদৃশ বাড়িতে থাকত সেসময়ের প্রায় ২০,০০০ মানুষ! সূত্রের খবর, প্রাচীন শহর ‘ডেরিনক্যুয়ু’ (Ancient City Derinkuyu) ছেড়ে নাগরিকরা মাটির উপরে উঠে আসেন প্রাচীনকালেই। তবে এই শহর যে কোথায়, তার খোঁজ মেলেনি দীর্ঘদিন! অবশেষে মিলল এই হারিয়ে যাওয়া শহর। জানা যাচ্ছে, তুরস্কের ক্যাপাদোসিয়া অঞ্চলের এক ব্যক্তি কিছুদিন ধরেই দেখছিলেন যে, তাঁর মুরগি হঠাৎ-হঠাৎই হারিয়ে যাচ্ছে। অবশেষে বাড়ি সারাতে গিয়ে তাঁর নজরে আসে এক বিশাল সুড়ঙ্গ। BBC-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, এই সুড়ঙ্গের অন্দরেই অবস্থিত ডেরিনক্যুয়ু।
পাথরে পাথরে ‘লেখা’…
আপাতত UNESCO-এর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট (UNESCO World Heritage Site) তালিকায় স্থান পেয়েছে এই নগরী। ভূগর্ভস্থ শহরের প্রায় ১৮টি ধাপ রয়েছে, এর মাত্র ৮টিতেই প্রবেশাধিকার পেয়েছেন পর্যটকরা। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, গুহানগরীর ভিতরের সকল ভাস্কর্য বা আসবাবই তৈরি হয়েছে আগ্নেয়গিরির পাথর দিয়ে। আগ্নেয়গিরি থেকে বেরিয়ে আসা ছাই বা ‘Tuff’-কে সহজেই ভেঙেচুরে, খোদাই করে শক্তপোক্ত আসবাব তৈরি সম্ভব বলে জানাচ্ছেন প্রস্তরবিশেষজ্ঞরা।
কারা থাকত এই গুহানগরীতে?
BBC-এর রিপোর্ট বলছে, তুরস্কের প্রায় ৬০০ বাড়ির অন্দরে এখনও পর্যন্ত এই নগরীর প্রবেশদ্বারের খোঁজ মিলেছে। প্রাথমিকভাবে মাটির নিচে থাকা একটি বাড়ি বলে যাকে ভুল করেছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা, পরে দেখা যায় বাড়ি না, এটিই আসলে সেই হারিয়ে যাওয়া মায়ানগরী! তুরস্কের সংস্কৃতি মন্ত্রকের (Turkey’s Department of Culture) বিবৃতি বলছে, খ্রীস্টের জন্মের প্রায় ৭০০-৮০০ বছর আগে তৈরি হয়েছিল এই নগরী। তখন সেখানে ছিল ফিরিজিয়ানদের (Phrygians) বসবাস। ৩৭০ খ্রীস্টপূর্বে লেখা একটি কাব্যে সর্বপ্রথম এই নগরীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
মাটির নিচে এ কেমন স্কুল!
প্রথমে শুধুমাত্র খাদ্যশস্য-অস্ত্রশস্ত্র লুকিয়ে রাখার জন্য ব্যবহৃত হত। পরে এই নগরী বসবাসের জন্য ব্যবহার করতে শুরু করে ফিরিজিয়ানরা। বিজ্ঞানীদের মতে, যুদ্ধের সময়ে সর্বোচ্চ ২০,০০০ মানুষও থেকেছে এই নগরে। ইতিহাস বলছে, গ্রিসের সঙ্গে তুরস্কের যুদ্ধ লাগার দরুণ গ্রিকরা এই শহর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়। ১৯২০-এর পর এই অন্ধকারপুরীতে কেউই থাকতেন না বলে জানা যাচ্ছে। ১৯৬৩ সালে এই শহর পুনরুদ্ধার করার পর প্রত্নতাত্ত্বিকরা খুঁজে পান নানাবিধ সামগ্রী। ওয়াইন বা তেল তৈরির ঘর, এমনকি খাদ্য-শস্য জমা রাখার ঘর, ডাইনিং হল―সবই ছিল এই গুহাশহরে। তবে শুধু থাকা-খাওয়া নয়, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের পাশাপাশি ধর্মকর্মের জন্য একটি চ্যাপেল (Chapel) ও ধর্মীয় স্কুলও ছিল মাটির প্রায় ১০০ মিটার নীচে!
গরু-ছাগল ঘাস খেত মাটির নিচেই?
প্রাচীন বলে যে অনুন্নত, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই এ শহরকে নিয়ে—জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। মায়া-অ্যাজটেক বা সিন্ধু সভ্যতা, অন্যান্য মানবসভ্যতার মতো এই নগরেও ছিল নানাবিধ কৌশল, যা রপ্ত করে দিনের পর দিন সুস্থভাবে মাটির নিচে বসবাস করত ফিরিজিয়ানরা। সহজে বাতাস চলাচলের জন্য ছিল ভেন্টিলেশন সিস্টেম (Ventilation System)। গরু-ছাগল-মুরগির ন্যায় গৃহপালিত প্রাণীর মল-মূত্রে যাতে গোটা শহরে বিকট পরিবেশ না তৈরি হয়, তার জন্য তাদের মাটির কাছাকাছি রাখতে করা ছিল আলাদা ব্যবস্থা। মাটির উপরের পৃথিবীর মানুষদের আটকানোর জন্য দরজায় ছিল ভারী পাথরের চাঁই। ভিতরে আলোর জন্য ছিল ফুটো করা পাথরের টুকরো, তার ভিতরে জ্বলত আলো!