বরাবরই তাঁর সহজিয়া ভাব, দরদিয়া মন! রতন টাটার (Ratan Tata) সহজ-সরল জীবনযাপন এবং নম্রতা সব সময়ই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। দেশের প্রথম সারির শিল্পপতি হয়েও সোজাসাপ্টা এবং ছাপোষা সাধারণ মানুষের জীবনযাপনই তাঁকে শ্রেষ্ট করে তুলেছে। সেই রতন টাটা যখন টাটা ন্যানো (Tata Nano) গাড়ি চড়ে মুম্বইয়ের তাজ হোটেলে (Taj Hotel) পৌঁছলেন, স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করল। বহু বছর আগে তিনি ‘সমস্ত ভারতীয়’-র জন্য টাটা ন্যানো লঞ্চ করেছিলেন, যার দাম রাখা হয়েছিল ১ লাখ টাকা। ‘এক লাখি ন্যানো’ বলা হত গাড়িটিকে। একাধিক কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের গাড়ির মার্কেটে গেম চেঞ্জার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল গাড়িটি। সেই গাড়ি এখন ভারতে অতীত হয়ে গেলেও রতন টাটার মনের গহীন কোণেই যে তার জায়গা, তা আরও একবার প্রমাণিত হল মিস্টার টাটার ন্যানো চড়েই মুম্বইয়ের তাজ হোটেলে পৌঁছানোর মধ্যে দিয়ে। একটি ভিডিয়োও ভাইরাল হয়েছে ব্য়াপক।
মুম্বইয়ের জনপ্রিয় পাপারাৎজ়ি ভাইরাল ভায়ানি সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো শেয়ার করেছেন ইনস্টাগ্রামে। সেই ভিডিয়োতে দেখা গিয়েছে, ন্যানো গাড়িতে চড়ে মুম্বইয়ের তাজ হোটেলে ঢুকছেন রতন টাটা। আর গাড়িটি চালাচ্ছেন তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী শান্তনু নাইডু। এমনকী তাঁর সঙ্গে কোনও সিকিওরিটি গার্ডও ছিল না। তাজ হোটেল ছেড়ে মিস্টার টাটা যখন বেরিয়ে গেলেন, তখনও সেই একই ছবি। কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই, ন্যানোর সামনেই বসে আছেন, আর গাড়িটি চালাচ্ছেন সেই নায়ডু।
এই ছবিটাই নেটপাড়ার লোকজনের মন জিতে নিয়েছে। তাঁর এই সহজিয়া ভাব আরও একবার যেন মানুষের মনে জায়গা করে নিল। কেউ বললেন, “এই জন্যই তাঁকে কিংবদন্তি বলা হয়।” কেউ আবার যোগ করলেন, “পৃথিবীতে এমন ডাউন টু আর্থ সফল ব্যক্তি আগে কখনও দেখিনি।” এমনই নানাবিধ কমেন্টে নেটপাড়ায় উপচে গিয়েছে। প্রত্যেকেই রতন টাটার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
অনেকেরই হয় তো মনে থাকবে, কয়েক মাস আগেই টাটা ন্যানোর ইলেকট্রিক ভার্সনটিতে চড়েছিলেন রতন টাটা। তারও একটি ছবি লিঙ্কডইনে শেয়ার করা হয়েছিল। সেই ছবিটিও খুব ভাইরাল হয়েছিল। টাটা ন্যানোর সেই ইলেকট্রিক ভার্সনটি তৈরি করেছিল ইলেকট্রা ইভি। কাস্টম বিল্ট সেই 72V Nano EV গাড়িটির সামনে দেখা গিয়েছিল শান্তনু নায়ডু এবং রতন টাটাকে। প্রসঙ্গত, এই ইলেকট্রা ইভি সংস্থাটির মালিকও রতন টাটা। মূলত বিভিন্ন গাড়ির পাওয়ারট্রেন প্রস্তুত করার জন্যই ইলেকট্রা ইভি কোম্পানিটি খোলা হয়েছিল।
ন্যানো গাড়িটা ছিল রতন টাটার ড্রিম প্রজেক্ট। বারবারই হাবেভাবে সে কথা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি। সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে একটি পোস্টে রতন টাটা জানিয়েছিলেন, কী কারণে তিনি টাটা ন্যানোর মতো কমপ্যাক্ট ও কম দামি একটা গাড়ি নিয়ে এসেছিলেন। প্রাথমিক ভাবে টাটা ন্যানো গাড়িটির যে নকশা তৈরি করা হয়েছিল, তাতে কোনও দরজা বা জানলা ছিল না। সে কথা মিস্টার টাটা নিজেই জানিয়েছেন।
ইনস্টাগ্রামের দীর্ঘ পোস্টে রতন টাটা লিখছেন, “আমি দেখতাম দেশের পরিবারগুলো একটা বাইক বা স্কুটারের মধ্যেই নিজেদের সেট করে নিত। একটা স্কুটারের মধ্যে মা-বাবার চাপে স্যান্ডউইচড হয়ে যেত বাচ্চারা। পিচ্ছিল রাস্তা হোক আর যে রাস্তাই হোক, এই ভাবেই চলছে স্কুটার বা বাইকগুলি।” সেখান থেকেই তাঁর মনে ভারতের বাজারে এমন একটা কম্প্যাক্ট গাড়ি নিয়ে আসার চিন্তাভাবনা তৈরি হয়।
২০০৮ সালের ১০ জানুয়ারি টাটা মোটরস ভারতে ন্যানো গাড়িটি লঞ্চ করে। একাধিক কারণে ভারতে টাটা ন্যানো গাড়িটির বিক্রিবাট্টায় ভাঁটা পড়ে। ২০১৮ সালে বাজার থেকে টাটা ন্যানো তুলে নেওয়া হয়। এর মধ্যেই খবর মিলেছে যে, টাটা ন্যানোর একটি ইলেকট্রিক ভার্সন ভারতে খুব শীঘ্রই লঞ্চ করতে চলেছে।