বছর শেষে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। পরের বছর লোকসভা নির্বাচন। এর মধ্যেই মোদী সরকার ভারতে WhatsApp-এর জন্য একটি কড়া নিয়ম চালু করতে চলেছে। একটা WhatsApp মেসেজের ‘ফার্স্ট অরিজিনেটর’ অর্থাৎ ‘প্রথম সূত্র’ বা ‘প্রথম উদ্যোক্তা’র (সহজ কথায় যার, যে নম্বর থেকে প্রথম পাঠানো হয়েছে আলোচনার কেন্দ্রে থাকা ভিডিয়োটি) যাবতীয় বিবরণ প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক করতে চলেছে কেন্দ্র। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্ট অনুযায়ী, কৃত্রিম মেধা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স দ্বারা উৎপন্ন ভুরি-ভুরি ভুল তথ্যের বাড়বাড়ন্তের সময়ে এই কড়া পদক্ষেপটি করতে চলেছে ভারত সরকার। প্রসঙ্গত, তথ্যপ্রযুক্তি আইনকে আরও কড়া করার ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরেই সোচ্চার মোদী সরকার। বিভিন্ন সময়ে টেক-কোম্পানিগুলি নিজের ইচ্ছে মতো যে সব নিয়ম কার্যকর করে রেখেছে, সেগুলির বিরুদ্ধেও শোনা গিয়েছে কেন্দ্রের ‘জ়িরো টলারেন্স’ নীতির কথা।
এখন কেন্দ্র যদি সত্যিই হোয়াটসঅ্যাপকে ‘প্রথম উদ্যোক্তা’র তথ্য প্রকাশ করার নোটিস পাঠায়, তাহলে 2021-র ইনফরমেশন টেকনোলজির নিয়মের আওতায় প্রথম বারের মতো কোনও সরকারি আদেশ দেওয়া হবে কোনও ইন্টারনেট প্ল্যাটফর্মকে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ওই রিপোর্টে একজন সরকারি আধিকারিককে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, WhatsApp-এ ডিপ ফেক (Deep Fake) ভিডিয়ো যে ভাবে মানুষকে বোকা বানাচ্ছে, সেই বল্গাহীন বাড়াবাড়িকে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্য নিয়েই ‘প্রথম উদ্যোক্তা’র বিষয়টি বিবেচনা করছে ভারত সরকার।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ডিপ ফেক ভিডিয়োগুলি যে ভাবে ইন্টারনেটের আনাচেকানাচে ছড়িয়ে পড়ছে, তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার সত্যিই উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে, রাজনৈতিক নেতাদের ভাইরাল হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিয়োগুলিই তাদের শিরঃপীড়ার কারণ হয়ে উঠেছে। হোয়াটসঅ্যাপকে ‘ফার্স্ট অরিজিনেটর’-এর নোটিস পাঠানো হলে, সেই বিতর্কিত ব্যক্তির সব তথ্য জানাতে হবে—যে ব্যক্তি বার্তাটি সর্বপ্রথম প্রেরণ করেছিলেন। এখানে ডিপফেক প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এমনই ভিডিয়ো তৈরি করা হয়, যা একজন ব্যক্তির মুখ বা শরীরে অন্য আর একজনের মুখ বা শরীর বসিয়ে দেওয়া হয়। এই ধরনের ‘কারচুপি’র কাজ এতটাই নিপুণ ভাবে করা হয় যে, কোনটা আসল আর কোনটা নকল, তা-ই গুলিয়ে যায়! মূলত, ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যের প্রচারেই এই ডিপফেক কারসাজির শরণাপন্ন হয় প্রতারকরা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কাছে ওই সরকারি কর্মকর্তা দাবি করেছেন, ভারতের ‘নির্বাচনী সার্বভৌমত্ব’ কথা মাথায় রেখেই এই নিয়ম কার্যকর করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে এহেন পদক্ষেপ আবার নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিতে পারে। কারণ, হোয়াটসঅ্যাপ ও মেটা এর আগেই ভারত সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি আইনের এই ধারাটিকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। সে সময় তারা দাবি করেছিল, যে কোনও ব্যবহারকারীর পরিচয় প্রকাশ তাদের প্ল্যাটফর্মের গোপনীয়তা নীতির সম্পূর্ণ বিরোধী। মামলাটি এখনও আদালতে বিচারাধীন।
শুধু ভারত কেন, এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে সর্বাধিক ব্যবহৃত ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম WhatsApp, যারা এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশনের মাধ্যমে টেক্সট, ভিডিয়ো, ছবি সব কিছুর নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বলে বারবার দাবি করে আসে মেটা। একে-অপরের সঙ্গে গোপন কথাবার্তা গোপনেই রাখে এই এনক্রিপশন সিস্টেম। কিন্তু ভারত সরকারের 2021 তথ্যপ্রযুক্তি আইনের এই ধারাটি দু’জন ব্যবহারকারীর গোপন কথাবার্তায় সরাসরি আঘাত হানে বলে আগেই জানিয়েছিল হোয়াটসঅ্যাপ। এই ধরনের নিয়মের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুললে সংশ্লিষ্ট ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং প্ল্যাটফর্মটি তার নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে আপস করা হবে বলে জানিয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপের দাবি, এর ফলে রাষ্ট্রীয় স্তরে ‘গণ নজরদারি’ শুরু হতে পারে।