Samsung Space Zoom: AI কি এবার সত্যিই ক্যামেরাকে দিয়ে মিথ্যা বলাবে? Samsung ‘স্পেস জ়ুম’ নিয়ে তুঙ্গে বিতর্ক
AI Tools In Smartphone Camera: স্যামসাং ফোনের Space Zoom ফিচার সম্প্রতি বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। যে চাঁদ সাধারণ ক্যামেরায় ঝাপসা ধরা পড়ে, তা এই ফিচারের সাহায্যে যেন আপনার হাতে চলে আসছে! এখন AI টুল ফটোগ্রাফারদের জন্য কি বড় সমস্যার সৃষ্টি করবে, সেই প্রশ্নটাই আরও একবার উঠে গেল।
Samsung ফোনের ‘স্পেস জ়ুম’ ফিচার নিয়ে আলোচনা চলছে অনেক দিন ধরেই। কয়েক দিন আগেই এক ব্যবহারকারী সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করেছিলেন, Space Zoom ফিচারটি ভুয়ো। একটি চাঁদের ছবি পোস্ট করে তিনি দাবি করেছিলেন, সেখানে ক্যামেরা বা লেন্সের কোনও কেরামতি নেই। পুরোটাই AI-এর কারসাজি বলে গুরুতর অভিযোগ করেছিলেন তিনি। ‘আইব্রেকফটোজ়’ নামের ওই অপেশাদার ফটোগ্রাফার ‘স্পেস জ়ুম’ নামক বৈশিষ্ট্যটি আসলে কীভাবে কাজ করে, তা খুঁজে বের করতে তাঁর Samsung ফোনে একটি পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, Samsung Space Zoom ফিচারটি সর্বপ্রথম রিলিজ় হয় 2020 সালে। সংস্থার তরফ থেকে সে সময় দাবি করা হয়েছিল, এটি 100X জ়ুম রেট সাপোর্ট করে। সে সময় এই বৈশিষ্ট্যের মার্কেটিংয়ের জন্য স্যামসাং কিছু ঝাঁ চকচকে চাঁদের ছবি ব্যবহার করে।
আইব্রেকফটোজ় যে সব ছবিগুলি তুলেছেন, সেগুলির সবই প্রায় ঝাপসা, তাতে কোনও কিছুই নিখুঁত ভাবে ধরা পরেনি। ছবি তোলার পরে তিনি লক্ষ্য করেন যে, তাঁর ফোনটি কিছু ক্রেটার যোগ করেছে। আসলে ফোনের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যার ডেটা ব্যবহার করছিল তার ‘ট্রেইনিং’ থেকে। কথা ছিল, অন্য আরও চাঁদের ছবিগুলিতে ডিটেলিং যোগ করবে বৈশিষ্ট্যটি। কিন্তু সেখানে ডিটেলিংয়ের কিসসু ছিল না।
বহু মানুষের মধ্যেই Samsung-এর এই স্পেস জ়ুম ফিচার নিয়ে ধন্দের সৃষ্টি হয়েছিল। টুইটারে একাধিক বার স্পেস জ়ুম নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল স্যামসাংকে। এমনই একটা পরিস্থিতিতে আইব্রেকফটোজ় এই ফিচার ব্যবহার করে চাঁদের ছবি তোলার পর লিখছেন, “স্যামসাং থেকে তোলা চাঁদের ছবিগুলি ভুয়ো।” তাঁর এই বার্তাই যেন প্রমাণ করে দিচ্ছে মানুষজন স্পেস জ়ুমের মাধ্যমে চাঁদের যে শটগুলি নেন, সেগুলি তাঁদেরই কি না। অথবা সেগুলিকে আদৌ ফটোগ্রাফ হিসেবে বর্ণনা করা যায় কি না, এই টুইট দেখার পর অনেকেই তা আরও একবার ভাবতে বসবেন।
তবে Samsung কিন্তু তার ফিচার নিয়ে অন্য দাবি করছে। সংস্থাটি জানাচ্ছে, তারা ছবিগুলিকে ‘ওভারলে’ করে না এবং উল্লেখ করেছে যে, ব্যবহারকারীরা চাইলে এই ফাংশনটি বন্ধ করতে পারেন। তবে ক্যামেরার ফিচারের মধ্যে AI পুট করার দৌড়ে স্যামসাং একা নেই। সেই 2016 সাল থেকে Google Pixel এবং Apple iPhone মডেলগুলিতে AI দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, AI একটা ছবির উপর কী-কী করতে পারে? লাইটিং থেকে শুরু করে ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার করা, পোর্ট্রেইটে মানুষজনের চোখ আরও তীক্ষ্ণ করা ইত্যাদি কাজগুলি করে থাকে। আর এগুলির সবই ঘটে ব্যবহারকারীর অজান্তেই। পাশাপাশি এই প্রযুক্তি ব্যাকগ্রাউন্ডগুলিকে রূপান্তর করতে পারে এবং ছবি থেকে মানুষকেও বাদ দিয়ে দিতে পারে। তবে AI নিয়ে এমনতর বিতর্ক যে কেবল শৌখিনদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা নয়। এখন পেশাদার সংস্থাগুলিও AI নিয়ে যথেষ্ট আশঙ্কিত।
সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের একটি রিপোর্টে ব্রিটেনের রয়্যাল ফটোগ্রাফিক সোস্যাইটির মাইকেল প্রিচার্ডকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, “এই অটোমেশনটি একটি ফটোগ্রাফ এবং শিল্পকর্মের মধ্যের সীমানাকে ক্রমশ ঝাপসা করে দিচ্ছে।” তাঁর আরও বক্তব্য, ফটোগ্রাফির আগেকার প্রযুক্তিগুলির থেকে AI অনেকটাই আলাদা। কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বললেন, প্রযুক্তিটি ফিল্ম বা সেন্সর দ্বারা রেকর্ড করা জিনিসগুলির বাইরে নতুন একাধিক উপাদান যোগ করতে পারে। প্রিচার্ড বলছেন, “ফটোগ্রাফি কী এবং কতটা বাস্তব, তা পুনরায় সংজ্ঞায়িত করার মৌলিক চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে আসে এই প্রযুক্তি।”
স্পেস জ়ুম ফিচারের বিভিন্ন দিকগুলি রেডিটে তুলে ধরেছেন আইব্রেকফটোজ় নামের ওই ব্যবহারকারী। তিনি বলছেন, AI-এর পিছনে যে টেকনিক্যাল ভাষাগুলি রয়েছে, তা সবসময় বোঝা সম্ভব নয়। সংবাদমাধ্যম AFP-র কাছে তিনি বলেছেন, “আমি এটা বলব না যে, ক্যামেরায় AI ব্যবহারে আমি খুশি। কিন্তু যতক্ষণ না এর প্রতিটি প্রসেসিং পাইপলাইন সম্পর্কে স্পষ্ট করা হয়, ততক্ষণ আমি এর সঙ্গেই রয়েছি।” পাশাপাশি তিনি তাঁর আসল নামটিও ওই সংবাদ সংস্থার কাছে প্রকাশ করতে চাননি। AI প্রযুক্তি কি ফটোগ্রাফির সংজ্ঞা বদলে দিতে চলেছে, পেশাদার ফটোগ্রাফারদের এই আশঙ্কাই যেন Samsung Space Zoom ফিচারের মধ্যে দিয়ে আরও জোরদার হল।