Blood Falls Update: বিশ্বের এমন কত জায়গাই আছে, যা মানুষের কাছে অজানা। আর সেই সব জায়গায় লুকিয়ে আছে অজানা সব রহস্য। সেই রহস্যের সন্ধান পেতে বিজ্ঞানীরা গবেষণার পর গবেষণা চালিয়ে যান। তারপরেও অনেক প্রশ্নের উত্তর তাঁদের কাছেও থাকে অধরা। তেমনই অ্যান্টার্কটিকার রক্তাক্ত জলপ্রপাতের কথা অনেকেই জানেন না। আবার অনেকেই হয়তো এর আগে শুনেছেন। অ্যান্টার্কটিকার ম্যাকমার্ডো ড্রাই ভ্যালিতে বরফের প্রলেপ ভেদ করে দিনের পর দিন ধরে বয়ে চলেছে রক্তলাল এক ঝর্ণাধারা, যা দেখলে আপনি শিউরে উঠতে বাধ্য। একে এক কথায় বলা হয় ‘ব্লাড ফলস’। কিন্তু রক্তাক্ত জলপ্রপাত এল কোথা থেকে? এবার এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। কী বলছেন তাঁরা?
অ্যান্টার্কটিকার রক্তাক্ত জলপ্রপাতের রহস্যের সমাধান করেছেন বিজ্ঞানীরা। যুগ যুগ ধরে এখানে উপস্থিত টেলর হিমবাহ থেকে রক্তের ঝর্ণা বয়ে চলেছে। চারিদিকে বরফে ঢাকা। তারই মাঝে হঠাৎই বয়ে চলেছে লাল রক্তের মত জলপ্রপাত। বিজ্ঞানীরা এই রক্ত প্রবাহের পিছনের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানতে পেরেছেন অবাক করা কিছু তথ্য।
এই জলপ্রপাতের শুরু কোথা থেকে?
1911 সালে অর্থাৎ 112 বছর আগে, কিছু ব্রিটিশ অভিযাত্রী অ্যান্টার্কটিকার টেলর হিমবাহে রক্ত বর্ণের জলপ্রপাত দেখেছিলেন। এক শতাব্দী আগেও মানুষ বিস্মিত ও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এই অপরূপ দৃশ্য দেখে। তারপরেই তা নিয়ে শুরু হয় বিভিন্ন জল্পনা-কল্পনা। কিন্তু সবকিছুর পিছনেই কোনও না কোনও বিজ্ঞান আছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা। তাই তাঁরা এর উত্তর খুঁজে বের করতে লেগে পড়েন। সেই মতোই রক্ত বর্ণের ঝর্ণাধারার পিছনে কারণ খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন তাঁরা। গবেষণা চলতে থাকে বহু বছর ধরে। অবশেষে হয় অসাধ্য সাধন।
রক্তবর্ণের জলপ্রপাতের রহস্যটা কী?
ব্লাড ফলস পূর্ব অ্যান্টার্কটিকার ভিক্টোরিয়া ল্যান্ডে অবস্থিত। বিজ্ঞানীদের মতো, এই লাল রঙই বলে দেয় যে এই হিমবাহের নীচে জীবনের বিকাশ ঘটছে। এই হিমবাহের রক্ত লবণাক্ত, যা একটি অতি প্রাচীন বাস্তুতন্ত্রের অংশ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞান যত এগিয়েছে, সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে এবং তারপর বিজ্ঞানীরা এর কাছাকাছি এসেছেন গবেষণার জন্য। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছেন, এর স্বাদ রক্তের মতোই নোনতা। এই জায়গাটিতে মানে জীবনের ঝুঁকি নেওয়া। জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পদার্থ বিজ্ঞানী কেন লেভি বলেছেন, “আমি মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে গবেষণা করে দেখেছি, এতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোহার টুকরো রয়েছে। এমনকী এতে লোহা ছাড়াও অনেকগুলি বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। এছাড়াও হিমবাহের নীচে রয়েছে আয়রন লবণ অর্থাৎ ফেরিক হাইড্রোক্সাইড। তাদের সঙ্গে বসবাস করে অণুজীব। সেই সব কিছু বিক্রিয়ার কারণেই কারণে লাল রঙের ফোয়ারা বের হচ্ছে।”
তবে কি এটা বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্চর্য হয়েই থেকে যাবে?
এই জায়গাটি বিরল সাবগ্লাসিয়াল ইকোসিস্টেমের ব্যাকটেরিয়ার আবাসস্থল। এই ব্যাকটেরিয়া এমন জায়গায় বেঁচে থাকে, যেখানে অক্সিজেন নেই। এবিষয়ে বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, রক্তবর্ণের জলপ্রপাতে লোহার পাশাপাশি সিলিকন, ক্যালসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম ও সোডিয়ামের কণা রয়েছে। ব্রিটিশ অভিযাত্রী টমাস এবং তার সহকর্মীরা এই লাল রঙটিকে শৈবাল হিসাবে বিবেচনা করেছিলেন। তবে এমন রক্তের মতো লাল জলধারা বয়ে যাওয়া বিশ্বের কাছে আশ্চর্য তো বটেই!