Global Warming Update: পৃথিবীকে যে কোনও রকম ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে তৎপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা। বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিমাণ যে হারে বাড়ছে, তাতে বিশ্বের বড় বড় হিমবাহগুলি একের পর এক গলতে শুরু করেছে। সেই মতোই এক বিরাট পদক্ষেপ নিয়েছে চিনও। চিনা বিজ্ঞানীরা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 3 মাইল উপরে দাগু হিমবাহের (তিব্বতে অবস্থিত) চূড়ার বরফ সংরক্ষণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করে চলেছেন। শুনলে অবাক হবেন, দাগু হিমবাহের বরফ রক্ষার জন্য সেখানে বিজ্ঞানীদের একটি দল 4,300 বর্গফুট এলাকা জুড়ে সাদা কাপড় বিছিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু এমনটা করা কি সত্যিই সম্ভব? হয়তো এই অসাধ্য সাধন বিজ্ঞানীদের পক্ষেই সম্ভব। তাঁরা পুরো দাগু হিমবাহকে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলতে চাইছেন। কিন্তু তাতেই কি বরফ গলাকে আটকানো যাবে? কী বলছেন বিজ্ঞানীরা?
এ কোনও সাধারণ সাদা কাপড় নয়:
এই সাদা চাদরের বিশেষত্ব হল, এটি সূর্যের রশ্মিকে বরফ অবধি পৌঁছাতে দেবে না। তার আগেই বায়ুমণ্ডলে প্রতিফলিত করবে। এই সাদা চাদরটি আসলে তাপ নিরোধক। এটি বানানোর আসল উদ্দেশ্য হল বরফ সংরক্ষণ করা। আর সেভাবেই এটিকে ডিজাইন করা হয়েছে। দাগুর হিমবাহকে ঢেকে রাখার জন্য যে চাদর ব্যবহার করা হচ্ছে, তা সূর্যের আলোকে 93% প্রতিফলন করতে সক্ষম। এই সাদা চাদরে ফিল্ম সেলুলোজ অ্যাসিটেট থেকে তৈরি করা হয়েছে, যা একটি প্রাকৃতিক ফাইবার। এটি উদ্ভিদ থেকে তৈরি করা হচ্ছে।
কেন এমন পদক্ষেপ করেছে চিন?
এই দাগু পর্বতের এলাকায় যুগ যুগ ধরে হাজার হাজার মানুষ বসবাস করে। পর্বতকে ঘিরেই তাঁরা জীবন যাপন করে। হিমবাহের বরফ গলা জল এই বাসিন্দাদের কাছে পানীয় জল হিসেবে পৌছায়। আর সেই বরফ গলা জল জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। প্রতি বছর 2 লাখেরও বেশি পর্যটক এই হিমবাহের সৌন্দর্য দেখতে তিব্বতে আসেন। বর্তমানে পৃথিবীর তাপমাত্রা যেভাবে বৃদ্ধির পাচ্ছে, তাতে প্রচুর পরিমাণে বরফ গলছে। এভাবে চলতে থাকলে আর কিছু বছর পর সেখানকার মানুষদের কাছে জীবনযাপন করা খুব কঠিন হয়ে পড়বে। তাই বিজ্ঞানীদের এমন পদক্ষেপ। গত অর্ধ শতাব্দীতে হিমবাহটির ইতিমধ্যে 70% এরও বেশি বরফ গলেছে। তাই এই অভিনব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
বিজ্ঞানীরা কীভাবে এই কাজ করছে?
হিমবাহের উপর সাদা চাদর বিছানোর প্রক্রিয়াটি সহজ কাজ নয়। মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব এবং অক্সিজেনের অভাবের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতায় অবস্থিত বিজ্ঞানীদের অনেক অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। এছাড়া হিমবাহের গভীরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাঁদের কোমর পর্যন্ত তুষারে ঢেকে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বহুক্ষণ এই কাজ চালিয়ে যাওয়া বিজ্ঞানীদের কাছে কঠিন হয়ে পড়ছে। এমনকী এই পুরো ব্যাপারটাই তাঁদের কাছে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। ফলে ড্রোনের সাহায্যে এই চাদরগুলি হিমবাহে ছড়িয়ে দেওয়া যায় কি না, সেই নিয়ে পরীক্ষা করছেন চিনের বিজ্ঞানীরা।
আদৌ কি এটা কাজ করবে?
বিশ্ব উষ্ণায়নের মূল কারণ হল কার্বন ডাই অক্সাইডের ব্যাপক নির্গমন। আর গোটা বিশ্বে চিনই এমন একটি দেশ, যেখান থেকে সব থেকে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ হয়। তারপরেই তালিকায় রয়েছে রাশিয়া ও জাপান। সেখানে দাঁড়িয়ে বিজ্ঞানীদের এই সাদা চাদর কীভাবে কাজ করে, সেটাই দেখার।