পৃথিবীর মতো বেশিরভাগ গ্রহই গোলাকার। কেবলমাত্র জুপিটার (Jupiter) বা বৃহস্পতির গঠন একটু আলাদা। কারণ মহাকাশের সবচেয়ে বড় এই গ্রহের চারপাশে রয়েছে অনেক রিং বা বলয়। কিন্তু তারপরেই একথা বলাই যায় যে বৃহস্পতি গ্রহ গোলাকার। কিন্তু সমস্ত গ্রহই কি গোলাকার? বিশেষ করে যেসব গ্রহ আমাদের সৌরমণ্ডলের (Sola Syatem) বাইরে রয়েছে তাদের আকৃতিও কি গোলাকার? সম্প্রতি বিজ্ঞানীদের একটি নতুন আবিষ্কার বলছে এই প্রশ্নের জবাব ‘না’। সম্প্রতি জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এমন একটি এক্সোপ্ল্যানেটের সন্ধান পেয়েছেন, যার আকৃতি অনেকটা আলুর (Potato Shaped Planet) সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখে। এই গ্রহের নাম WASP-103b। পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫০০ আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে এই গ্রহ। আলু ছাড়া রাগবি খেলায় যে বল ব্যবহার করা হয়, তার সঙ্গেও এই গ্রহের আকৃতির তুলনা করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।
কিন্তু কেন এই গ্রহের আকৃতি এরকম অদ্ভুত?
বিজ্ঞানীরা বলছেন WASP-103b গ্রহ আসলে একটি এফ-টাইপ নক্ষত্রের আশপাশে অবস্থিত। এই নক্ষত্র আমাদের সৌরমণ্ডলের সবচেয়ে বড় নক্ষত্র সূর্যের তুলনায় অনেকটাই বড় এবং শক্তিশালী। এমনকি WASP-103b গ্রহটিও আকার-আয়তনে বেশ বড়, বৃহস্পতির সাইজের প্রায় দেড় গুণ। এই বড় আকারের গ্রহ ওই বৃহৎ নক্ষত্রের কাছাকাছি থাকার কারণেই তার আকৃতিতে এমন অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য দেখা গিয়েছে বলে ধারণা করেছেন বৈজ্ঞানিকরা। এই গ্রহ এবং তার হোম স্টার বা ও বৃহৎ নক্ষত্রের relatively close proximity বা তুলনামূলক নৈকট্যই এই অদ্ভুত আকৃতির কারণ।
Astronomy and Astrophysics জার্নালে নতুন আবিষ্কৃত গ্রহ WASP-103b নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই গ্রহ নিজের হোম স্টারের থেকে মাত্র ২০ হাজার মাইল দূরে অবস্থান করছে। এর ফলে দুই মহাজাগতিক বস্তুর মধ্যে tidal stresses বা জোয়ারের চাপ তৈরি হতে পারে। আর তার জেরেই ওই গ্রহের উপর চাপ এবং টান সৃষ্টি হয়ে এই অদ্ভুত আকৃতি তৈরি করেছে। তুলনামূলক ভাবে দেখতে হলে সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব ৯৩ মিলিয়ন মাইল।
পৃথিবী সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করতে সময় লাগে এক বছর। সৌরমণ্ডলের অন্যান্য গ্রহের ক্ষেত্রে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার ক্ষেত্রে আরও কয়েক মাস বেশি বা বেশ কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। এছাড়াও মহাকাশে বেশ কিছু এক্সোপ্ল্যানেট রয়েছে যাদের বলা হয় ‘হট জুপিটার’। এই এক্সোপ্ল্যানেটগুলো তাদের হোম স্টারকে মাত্র কয়েকদিন বা কয়েক ঘণ্টায় প্রদক্ষিণ করতে পারে। WASP-103b- এই গ্রহের প্রদক্ষিণ সময়কাল মাত্র ২২ ঘণ্টা। গবেষকরা জানিয়েছেন, ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির CHEOPS স্যাটেলাইট ব্যবহার করেছিলেন। এছাড়া WASP-103b- এর রাগবি বলের আকৃতি বোঝার জন্য নাসার হাব্বল স্পেস টেলিস্কোপ এবং স্পিতজার স্পেস টেলিস্কোপ ব্যবহার করা হয়েছে।