প্রথম প্রচেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর ফের চাঁদে সফট ল্যান্ডিংয়ের লক্ষ্যে পাড়ি দিতে চলেছে চন্দ্রযান-3। শুক্রবার, 14 জুলাই, ঠিক দুপুর 2টো 35 মিনিটে শ্রীহরিকোটা থেকে এই চন্দ্র মিশন উৎক্ষেপণ করা হবে। মানুষ যদিও আজ থেকে 50 বছর আগে চাঁদে অবতরণ করেছিল। কিন্তু সেই প্রক্রিয়া এখন বড়ই কঠিন হয়ে গিয়েছে। 2019 সালের সেপ্টেম্বরে চন্দ্রযান-2 মিশন ব্যর্থ হয়েছিল। কারণ, বিক্রম ল্যান্ডার চাঁদের পৃষ্ঠে বিধ্বস্ত হয়েছিল। সে বছরের শুরুতেই ইজ়রায়েলের নেতৃত্বাধীন বেরেশিট মিশনেরও এই একই পরিণতি হয়েছিল। চলতি বছরের এপ্রিল মাসেও জাপানি Hakuto-R মিশনও চাঁদে সফট ল্যান্ডিং করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়।
এগুলির সবই ব্যর্থ মিশন, যেগুলি উৎক্ষেপিত হয়েছিল চাঁদকে স্পর্শ করার আশা নিয়ে। 1960 সালের দিকে মহাকাশ প্রতিযোগিতার সময়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন একাধিক মহাকাশযান বিধ্বস্ত করেছিল, যতক্ষণ না পর্যন্ত কারা সফল অবতরণ করতে পারছিল। চিন প্রথম দেশ হিসেবে চাঁদে সফট ল্যান্ডিং করতে সক্ষম হয়। 2013 সালে Chang’e-5 মিশনের মাধ্যমে তারা প্রথম চেষ্টাতেই এটি করতে সক্ষম হয়েছিল। তারপর রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও সফট ল্যান্ডিংয়ে সফল হয়। এখন ভারতের চন্দ্রযান-3 যদি সফট ল্যান্ডিংয়ে সফল হয়, তাহলে তা বিশ্বের চতুর্থ দেশ হিসেবে এই অনন্য কৃতিত্ব অর্জন করবে। কিন্তু এত বছরের লাগাতার মহাকাশ অনুসন্ধানের পরেও টার্গেট হিসেবে চাঁদ এত কঠিন কেন?
চাঁদে অবতরণ
চাঁদে অবতরণের প্রসঙ্গে যেতে হলে আপনাকে প্রথমেই জানতে হবে, কীভাবে সেখানে যাওয়া যায়। গড়পড়তা হিসেবে চাঁদ আমাদের গ্রহ থেকে প্রায় 3,84,400 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মহাকাশযান দ্বারা অতিক্রান্ত পথের উপর নির্ভর করে সেই দূরত্ব অনেক বেশি হতে পারে। এই দীর্ঘ যাত্রায় যে কোনও জায়গায় ব্যর্থ হতে পারে চন্দ্রমিশনটি। অনেক ক্ষেত্রে অবতরণে না গিয়ে কেবল চাঁদে ভ্রমণ করেই মিশন সমাপ্ত করতে হয়। নাসাকে তার লুনার ফ্ল্যাশলাইট মিশনটি বন্ধ করতে হয়েছিল কারণ মহাকাশযানের প্রপালশন সিস্টেমে ব্যর্থতার কারণে এটি চাঁদের কক্ষপথে প্রবেশ করতে পারেনি।
চাঁদে গতি ধীর করা
আর্টেমিস 1 মিশনের পরে NASA-র ওরিয়নের মতো আমাদের গ্রহে ফিরে আসা মহাকাশযানগুলি পৃথিবীর ঘন বায়ুমণ্ডলের উপর নির্ভর করতে পারে। কিন্তু চাঁদে যে মহাকাশযানগুলি প্রবেশ করে, তাদের বায়ুমণ্ডল অত্যন্ত পাতলা হয়। এমন পরিস্থিতিতে মহাকাশযানের গতি কমিয়ে দিতে পারে তার প্রপালশন সিস্টেম। এর অর্থ হল, মহাকাশযানটিকে প্রচুর জ্বালানি বহন করতে হবে, যাতে নিরাপদে অবতরণের জন্য সে নিজেকে ধীর করতে পারে। কিন্তু বেশি জ্বালানি বহন করার অর্থ হল মহাকাশযানটি ভারী। তবে তার আরও জ্বালানির প্রয়োজন। এই বিষয়টিকে বলা হয়, ‘টাইর্যানি অফ দ্য রকেট ইকুয়েশন’।
চাঁদে ঘোরাফেরা করা
সত্যি কথা বলতে গেলে কী, চাঁদে তো আর কোনও GPS নেই। তাই, মহাকাশযান একটি নির্দিষ্ট স্থানে অবতরণ করার জন্য উপগ্রহের নেটওয়ার্কের উপরেও নির্ভর করতে পারে না। কারণ, চাঁদে তার কোনও অস্তিত্বই নেই। তাই, চাঁদের নির্দিষ্ট স্থানে অবতরণ করতে মহাকাশযানটির অনবোর্ড কম্পিউটারগুলিকে দ্রুত গণনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিষয়টি তখন সবথেকে বেশি জটিল হয়ে ওঠে, যখন মহাকাশযান তার শেষ কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে থাকে। সেই সময় মহাকাশযানের বোর্ডে থাকা কম্পিউটারগুলিকে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। কিন্তু তা-ও খুবই সমস্যার হয়ে ওঠে, কারণ প্রপালশন সিস্টেমের ধাক্কায় সেন্সরগুলি বিভ্রান্ত হতে পারে।
নেচার জার্নালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রক্রিয়াটি আরও জটিল হয়ে ওঠে, যখন একটি মহাকাশযান তার শেষের গুরুত্বপূর্ণ কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে চলে যায়। সেই মুহুর্তে মহাকাশযানের বোর্ডে থাকা কম্পিউটারগুলিকে আরও দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে হয়। তার উপরে আবার প্রপালশন সিস্টেম ক্রমাগত ধাক্কা দিতে থাকার ফলে প্রচুর পরিমাণে ধুলোর সৃষ্টি হয়, যা সেন্সরগুলিকে ভুল পথে চালিত করতে পারে। রয়েছে আর একটি বড় সমস্যা- চাঁদের অসম পৃষ্ঠে অসংখ্য গর্ত এবং বোল্ডার কাজটিকে আরও কঠিন করে তোলে।