ডাইনোসরের বিলুপ্তি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বিপর্যয় হিসেবে মনে করা হয়। আবার মানবসভ্যতার জন্য তা আশীর্বাদও বটে। ডাইনোসররা থাকলে কী আর আমি-আপনি বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াতে পারতাম! বলা হয় যে, একটি বিধ্বংসী উল্কাপিণ্ডের কারণেই ডাইনোসররা পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সেই উল্কাটি প্রায় 66 মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে আঘাত করেছিল। তবে সাম্প্রতিকতম গবেষণায় এক্কেবারে অন্য একটি তথ্য উঠে এসেছে। উল্কা বিপর্যয়ের অনেক আগেই যে পৃথিবীর বাতাস বিষাক্ত হতে শুরু করেছিল আন্তর্জাতিক গবেষকদের একটি দল তার প্রমাণ সহযোগে একটি নতুন দাবি করেছেন।
গবেষণা দলটি বলছে, বায়ুমণ্ডলে সালফারের পরিমাণ তখন খুবই উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। সে সময়কার আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপের লক্ষণ সম্পর্কে ধারণা করে গবেষকরা জানিয়েছেন, জলবায়ুর যথেষ্ট ক্ষতি করেছিল। তবে ডাইনোসরের বিলুপ্তির কারণ হিসেবে আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপের এহেন তত্ত্বটিকে 1991 সালেই বাতিল করা হয়েছিল অন্য আর একটি গবেষণা দলের দ্বারা। কিন্তু এখনকার গবেষণা যা বলছে, তা থেকে আগ্নেগিরির তত্ত্বকে এক্কেবারে ফেলে দেওয়াও যায় না।
পৃথিবীর তাপমাত্রা কমে যাওয়া
নরওয়ের ইউনিভার্সিটি অফ অসলোর ভূতত্ত্ববিদ সারা ক্যালেগারো এবং তাঁর সহকর্মীরা তাঁদের গবেষণাপত্রে লিখেছেন, “আমাদের গবেষণা থেকে জানতে পারছি যে, আগ্নেয়গিরির অদ্ভুত আচরণ যথেষ্ট পরিমাণে সালফার নিঃসরণ করত। তার ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা খুব অল্প সময়ের মধ্যে বারংবার নেমে যেত।” আসলে, আগ্নেয়গিরি থেকে নির্গত সালফার ডাই অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে যায় এবং জলীয় বাষ্পের সঙ্গে বিক্রিয়া করে। তার ফলেই বায়ুমণ্ডলে অ্যারোসল তৈরি হত, যা সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করত। সেই কারণেই পৃথিবীতে আলো পৌঁছানো সমস্যার হয়ে যেত এবং কনকনে ঠান্ডা থাকত।
ভারতের ডাইনোসর সংযোগ
ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি আগ্নেয়গিরির লাভা জমার জন্য পরিচিত। এই আগ্নেয়গিরির ইতিহাস এবং পরিবেশ অধ্যয়নের জন্য এখানে শিলা পরীক্ষা করে দেখেছেন গবেষকরা। সালফার সামগ্রী পরিমাপের জন্য একটি নতুন কৌশল তৈরি করেছে গবেষণা দলটি। সেই মডেল অনুসারে, ডেকান ট্র্যাপ থেকে ক্রমাগত সালফার নির্গমন বিশ্বের জলবায়ুকে শীতল করার জন্য যথেষ্ট ছিল।
গবেষকরা জানিয়েছেন, শুধুমাত্র এই আগ্নেয়গিরি এলাকা থেকেই এক মিলিয়ন ঘনকিলোমিটার গলিত পাথর বেরিয়ে এসেছে। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-রসায়নবিদ ডন বেকার বললেন, “আমাদের গবেষণা একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, সে সময় জলবায়ু পরিস্থিতি অস্থিতিশীল ছিল। কয়েক দশক ধরে ঘনঘন শীত স্থায়ী থাকত, যা সম্ভবত ডাইনোসরদের বিলুপ্তির দিকে নিয়ে গিয়েছিল।”