চাঁদে সফল ভাবে স্পেসক্রাফ্ট পাঠিয়ে সারা বিশ্বের নজর কেড়ে নিয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ISRO। তবে জানলে অবাক হবেন যে, ইসরোর অস্তিত্ব কিন্তু শুধুই ভারতের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর নেটওয়ার্ক বেঙ্গালুরুর সরু রাস্তা থেকে আন্টার্কটিকার হিমশীতল এলাকা পর্যন্ত সুবিস্তৃত। হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন। আন্টার্কটিকাতেও ইসরোর একটি স্টেশন রয়েছে, যা গ্রহের এক প্রান্ত সর্বদা হিমায়িত থাকে।
ইসরোর সেই স্টেশনটির নাম দ্য আন্টার্কটিকা গ্রাউন্ড স্টেশন ফর আর্থ অবজ়ার্ভেশন স্যাটেলাইটস (AGEOS)। আন্টার্কটিকার লার্সম্যান হিলসে ভারতী স্টেশন অবস্থিত এই স্টেশন। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে আন্টার্কটিকায় এই ভারতীয় স্টেশনটি পরিষেবা দিয়ে আসছে। 2013 সালের অগস্টে এই স্টেশনটির কমিশন করা হয়।
কী কাজ এই ISRO স্টেশনের?
বিভিন্ন ভারতীয় রিমোট সেন্সিং (IRS) স্যাটেলাইট থেকে ডেটা রিসিভ করে AGEOS। তার মধ্যে রয়েছে CARTOSAT-2 সিরিজ়, SCATSAT-1, RESOURCESAT-2/2A এবং CARTOSAT-1। সংগৃহীত সেই ডেটা তারপরে ট্রান্সফার করা হয় ভারতে, হায়দরাবাদের শাদনগরে ন্যাশনাল রিমোট সেন্সিং সেন্টারে (NRSC)। এই উন্নত গ্রাউন্ড স্টেশনটি ISRO-র আর্থ অবজ়ার্ভেশন (EO) ডেটা সংগ্রহকে পরিপূরক করে তোলে। আক্ষরিক অর্থেই ইসরোর এই পরিষেবা বিশ্ব দরবারে দেশের ক্ষমতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে তোলে।
AGEOS স্টেশনটি ইসরো ইঞ্জিনিয়ারদের একটি দল দ্বারা ক্রমাগত পরিচালিত এবং রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় যারা নিয়মিত ভারতী স্টেশনে নিযুক্ত হন। তাদের দক্ষতা স্টেশনের মসৃণ কার্যকারিতা নিশ্চিত করে, যা ISRO-এর রিমোট সেন্সিং মিশন সফলভাবে সম্পাদনে অবদান রাখে। AGEOS স্টেশনটি পরিচালনা করে ইসরো ইঞ্জিনিয়াররা। ভারতী স্টেশন থেকেই তারা যাবতীয় কাজকর্ম করেন এবং তাঁদের দক্ষতা স্টেশনের কার্যকারিতা নিশ্চিত করে, যা ISRO-র রিমোট সেন্সিং মিশন সফলভাবে সম্পাদনে অবদান রাখে।
আন্টার্কটিকাই কেন?
মেরু অঞ্চলে আর্থ স্টেশন থাকার সবথেকে বড় সুবিধা হল, বর্ধিত দৃশ্যমানতা পাওয়া যা অন্য কোনও অঞ্চল থেকে সম্ভব নয়। প্রত্যেকটি মিশনের জন্য AGEOS প্রতিদিন 10টি পর্যন্ত পাস পর্যবেক্ষণ করতে পারে, যা পৃথিবীর পৃষ্ঠের একটি বিস্তৃত দৃশ্য প্রদান করে। কৌশলগত অবস্থানটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে গ্লোবাল রিমোট সেন্সিং ডেটা সংগ্রহের অনুমতি দেয়। সেই তালিকায় রয়েছে, কৃষি, জলসম্পদ, নগর পরিকল্পনা, গ্রামীণ উন্নয়ন, খনিজ সম্ভাবনা, পরিবেশ, বন, সামুদ্রিক সম্পদ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দিক।
সর্বক্ষণ অ্যাক্টিভ থাকে এই স্টেশন। ভিডিয়ো কনফারেন্সিং, ভিডিয়ো স্ট্রিমিং এবং ইন্টারনেট ব্রাউজ়িং অ্যাপ্লিকেশনগুলির জন্য একটি ডেডিকেটেড কমিউনিকেশন লিঙ্কও সেখানে স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও এই স্যাটেলাইট কমিউনিকেশন স্টেশনটি আন্টার্কটিকার আর একটি ভারতীয় স্টেশন মৈত্রীতে গবেষণা পরিচালনায় দেশের বৈজ্ঞানিক কমিউনিটিকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।