পোল্ট্রি ফার্মিং বা মুরগির চাষ বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। আগাগোড়াই পরিবেশবিদরা এই ধরনের ফার্মিংকে পরিবেশের জন্য খুব একটা ভাল বলে বিবেচিত করেন না। পরিবেশের উপর এর প্রভাব ভয়াবহ। কিন্তু এই পোল্ট্রি ফার্মিং বন্ধ করলে খাদ্যের উপর বিরাট প্রভাব পড়বে। তাই সমাধানে এসেছেন বিজ্ঞানীরা। মুরগির পালককে কাজে লাগানো হবে পরিবেশের স্বার্থে। মুরগির পালক দিয়েই তৈরি হবে বিদ্যুৎ। একটি নতুন গবেষণায়, বিজ্ঞানীরা মুরগির পালক থেকে এক প্রকার সূক্ষ্ম ফাইবার তৈরি করেছেন, যা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এমনকি সেই ফাইবার যে কোনও প্রকার জ্বালানীতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। মুরগির পালককে বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়ার দিন এবার শেষ।
ফার্ম থেকে নির্গত হয় ক্ষতিকারক গ্যাস…
প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় 40 মিলিয়ন টন পালক পোড়ানো হয়, যা শুধুমাত্র CO2 নির্গত করে তা নয় বরং সালফার ডাই অক্সাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাসও বের হয়, যা পরিবেশের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকারক। তাই বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত নেন এই মুরগির পালকই বর্জ্য শক্তির উৎস হিসেবে কাজে লাগবে। সিঙ্গাপুরের নানিয়াং টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটি (NTU) মুরগির পালক নিয়ে গবেষণা শুরু করে। আর এটি থেকে শক্তি উৎপাদন করার কথা জানায়। গবেষণায় দেখা যায়, মুরগির পালক 90 শতাংশ কেরাটিন দিয়ে তৈরি। এটি একই প্রোটিন থাকে মানুষের চুলেও।
এই প্রোটিন থেকেই উৎপন্ন হবে বিদ্যুৎ…
কেরাটিন প্রোটিন থেকে একটি বিশেষ শক্তি করা তৈরি হবে। গবেষকরা এমন একটি সিস্টেম তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে এই প্রোটিন বের করতে পারবেন। আর সেই প্রোটিনই খুব সূক্ষ্ম ফাইবারে রূপান্তরিত করা হবে। সেই ফাইবারকে অ্যামাইলয়েড ফাইব্রিল বলা হয়। এগুলি জ্বালানী কোষে পরিণত করা হবে। সেই জ্বালানী কোষ, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন মিশ্রিত করে বিদ্যুৎ, তাপ এবং জল উৎপন্ন হয়, যা CO2-মুক্ত বিদ্যুৎ। এই গোটা পদ্ধতির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এতে জ্বালানী কোষ তৈরির জন্য বিষাক্ত রাসায়নিক ব্যবহার করতে হবে না। ফলে পরিবেশের পাশাপাশি মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক নয় এই বিদ্যুৎ। তবে গবেষকদের মতে, এই গোটা পদ্ধতি শুনতে সহজ মনে হলেও মুরগির পালক থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা মোটেই সহজ কাজ নয়। সবই সময়ের অপেক্ষা। তবে পরবর্তীকালে যে মুরগির পালককে আর আবর্জনায় ফেলতে হবে না, তা বলা যেতেই পারে।