জীবিত মানুষের ফুসফুসে (Human Lungs) রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক (Microplastics)। আর অজান্তেই মানুষ সেই বিপজ্জনক পদার্থগুলিকে শ্বাস নিচ্ছে। এই প্রথম বার বিজ্ঞানীরা (Scientists) একটি গবেষণায় জীবিত মানুষের শরীরে আটকে থাকা মাইক্রোপ্লাস্টিক আবিষ্কার করেছেন। গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, মানুষ তার অজান্তেই এই পদার্থগুলিকে শ্বাস নেওয়ার ফলে শ্বাসযন্ত্রের সিস্টেমে বিপজ্জনক প্রভাব ফেলতে পারে, যাতে গুরুতর কোনও সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। মাইক্রোপ্লাস্টিক হল ছোট প্লাস্টিকের টুকরো যা ৫ মিলিমিটারেরও কম লম্বা এবং সমুদ্র, পর্বত এবং বাতাসে তাদের ছড়িয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে। আদতে এগুলি বড় প্লাস্টিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে তৈরি হয় এবং ছোট ছোট টুকরোতে পরিণত হয়। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এই কণাগুলি খুব সহজেই জল পরিস্রাবণ ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যায় এবং সমুদ্রে গিয়ে মেশে, যা জলজ প্রাণীদের জীবনের ক্ষেত্রেও ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক।
হুল ইয়র্ক মেটিক্যাল স্কুল এবং হুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের একটি দল ১৩টি ফুসফুসের টিস্যুর নমুনার মধ্যে ১১টিতেই মোট ৩৯টি মাইক্রোপ্লাস্টিক খুঁজে পেয়েছে, যা আগেকার কোনও পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা থেকে অনেকটাই বেশি। এই গবেষণাপত্রটি টোটাল এনভায়রনমেন্ট-এর জার্নাল সায়েন্স দ্বারা প্রকাশের জন্য গৃহীত হয়েছে। গবেষণাটি জীবিত ফুসফুসের টিস্যুগুলির উপর পরিচালিত হয়েছিল যা রোগীদের রুটিন মেডিক্যাস চেকআপের অংশ হিসাবে অস্ত্রোপচার পদ্ধতি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।
এই গবেষণাপত্রের মূল লেখক এবং হুল ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার লওরা স্যাডোফস্কি বলছেন, “এর আগে মানুষের মৃতদেহের ময়নাতদন্তের নমুনায় পাওয়া মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গিয়েছিল। এই প্রথম কোনও গবেষণায় জীবিত মানুষের ফুসফুসে মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান মিলল। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ফুসফুসের নীচের অংশে রয়েছে ওই মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলি। আসলে ফুসফুসের শ্বাসনালীগুলি খুব সরু। তাই কেউ কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি যে, ওরকম একটা জায়গায় মাইক্রোপ্লাস্টিকগুলি থাকতে পারে।”
বিজ্ঞানীরা ১২টি ভিন্ন ধরনের মাইক্রোপ্লাস্টিক আবিষ্কার করেছেন, যেগুলির অনেক ব্যবহার রয়েছে। সাধারণত প্যাকেজিং, বোতল, পোশাক, সুতলি, দড়ি এবং অনেক উৎপাদন প্রক্রিয়াতে পাওয়া যায়। গবেষণা দলটি দাবি করেছে যে, তারা মহিলাদের তুলনায় পুরুষ রোগীদের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে বেশি উচ্চ স্তরের মাইক্রোপ্লাস্টিকের সন্ধান পেয়েছে।
ডক্টর লওরা বলছেন, “আমরা ফুসফুসের নিচের অঞ্চলে আমরা যে আকারের কণা খুঁজে পেয়েছি তা আগে কখনও আশা করিনি। এটি আশ্চর্যজনক কারণ ফুসফুসের নিচের অংশে শ্বাসনালীগুলি ছোট এবং আমরা মনে করি যে, এই আকারের কণাগুলি ফুসফুসের গভীরে যাওয়ার আগে ফিল্টার হয়ে যাবে বা আটকে যাবে।”
গবেষণায় ফুসফুসের উপরের অংশে ১১টি, মধ্য অংশে ৭টি এবং ফুসফুসের নীচের অংশে ২১টি মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি প্রকাশ করা হয়েছে, যা একটি অপ্রত্যাশিত আবিষ্কার বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। পাশাপাশি তাঁরা এমন আকার-আকৃতির মাইক্রোপ্লাস্টিকও খুঁজে পেয়েছেন, যা মানুষ খুব সহজেই নিঃশ্বাসে নিতে পারে।
গবেষকরা এর আগে রক্তে এই ধরনের ক্ষুদ্র প্লাস্টিকের কণা খুঁজে পেয়েছিলেন, যা বিশ্বজুড়ে রীতিমতো স্বাস্থ্য উদ্বেগ বাড়িয়েছিল। সেই ক্ষুদ্র কণাগুলি অধ্যয়নরত বিজ্ঞানীরা ফ্রেঞ্চ পাইরেনিসের ২,৮৭৭ মিটার উচ্চতায় পিক ডু মিডির চারপাশের বাতাসে তাদের সনাক্ত করেছিলেন।
আরও পড়ুন: এলিয়েনের সঙ্গে উদ্দাম যৌনতায় গর্ভবতী মহিলা! পেন্টাগনের রিপোর্টে অবিশ্বাস্য তথ্য
আরও পড়ুন: এলিয়েনদের আকৃষ্ট করতে মানুষের নগ্ন ছবি মহাকাশে পাঠাবে নাসা!
আরও পড়ুন: রহস্যময় গ্রহ, বৃষ্টিতে জলের বদলে রয়েছে পাথর