তারারাও কত আলোকবর্ষ দূরে! তারও দূরে…! এবার সবথেকে দূরের তারার (Most Distant Star) সন্ধান পেলেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। তাঁরা জানিয়েছেন যে, সূর্যের (Sun) জন্মের আগেও ওই নক্ষত্রের আলো পৃথিবীতে পৌঁছে যেত। সেই একমাত্র তারাটি খুঁজে বের করেছে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ (Hubble Space Telescope)। লেখকদের ভাষায় সবথেকে দূরবর্তী সেই তারার একটি ডাকনামও রয়েছে – ইয়ারেন্ডেল। এই ঘটনা প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগেকার। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মহাবিস্ফোরণে মহাবিশ্বের জন্মের পর প্রথম বিলিয়ন বছরের মধ্যে এই নক্ষত্রটির অস্তিত্ব ছিল। আশ্চর্যজনক এই আবিষ্কারকে নাসা বলছে, “রেকর্ড ব্রেকিং”। বুধবার, ৩০ মার্চ এই খবরটি নাসার তরফ থেকে জানানো হয়েছে।
এদিকে এই নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ তাদের অফিসিয়াল পেজে লিখছে, “নতুন সনাক্ত করা নক্ষত্রটি এত দূরে যে, তার আলো পৃথিবীতে পৌঁছতে ১২.৯ বিলিয়ন বছর সময় লেগে গিয়েছে। আর এমনই একটা সময়ে তা হয়েছিল, যখন মহাবিশ্ব তার বর্তমান বয়সের মাত্র 7 শতাংশ ছিল।” গবেষণা দলটি অনুমান করেছে, ইয়ারেন্ডেল সূর্যের ভরের অন্তত ৫০ গুণ এবং লক্ষ লক্ষ গুণ উজ্জ্বলও। শুধু তাই নয়। উজ্জ্বল এই নক্ষত্র আমাদের পরিচিত সবচেয়ে বড় তারার প্রতিদ্বন্দ্বীও বটে।
বাল্টিমোরের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রায়ান ওয়েলচ-এর নেতৃত্বাধীন দলটি এই অসাধ্য-সাধনের জন্য একটি প্রাকৃতিক ‘ম্যাগনিফায়িং গ্লাস’ হিসেবে একটি গ্যালাক্সি ক্লাস্টার ব্যবহার করেছিল। এই গ্যালাক্সি ক্লাস্টার একটি প্রাকৃতিক ম্যাগনিফায়িং গ্লাস তৈরি করে যা বিকৃত করার মধ্যে দিয়ে এর পিছনে দূরবর্তী কোনও বস্তু থেকে আলোকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
নতুন অন্বেষণ সম্পর্কে গবেষক ব্রায়ান ওয়েলচ বলছেন, “ঠিক যেন মনে হচ্ছিল, আমরা কোনও আকর্ষণীয় বই পড়ছি। কিন্তু সেই বইয়ের দ্বিতীয় চ্যাপ্টার থেকেই আমরা শুরু করেছিলাম। আর এখন আমাদের কাছে এমনই একটা সুযোগ এসে উপস্থিত হয়েছে, যেখানে আমরা দেখতে পারব – এই সব কিছু কী ভাবে শুরু হয়েছিল।”
তবে শুধু হাবল স্পেস টেলিস্কোপই নয়। পৃথিবীর সবথেকে দূরের তারা ইয়ারেন্ডেলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করবে পৃথিবীর সবথেকে বড় টেলিস্কোপ জেমস ওয়েবও। নক্ষত্রটি সম্পর্কে আরও বিশদে জানার জন্য কাজে লাগবে, ওয়েব টেলিস্কোপের ইনফ্রারেড আলোর প্রতি উচ্চ সংবেদনশীলতা। কারণ, মহাবিশ্বের প্রসারণের ফলে এর আলো দীর্ঘতর ইনফ্রারেড তরঙ্গদৈর্ঘ্যে স্থানান্তরিত হয়।
ওই গবেষণাদলের এক সদস্য জোসে মারিয়া বললেন, “জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ দ্বারা তোলা ছবি ও স্পেকট্রা বা বর্ণালী আমাদের নিশ্চিত করবে যে, ইয়ারেন্ডেল প্রকৃতপক্ষেই একটি তারা। সেই সঙ্গেই আবার জানা যাবে, তার বয়স, তাপমাত্রা, ভর এবং ব্যাসার্ধ সংক্রান্ত সমস্ত জরুরি তথ্য।”
আরও পড়ুন: ফের বিস্ফোরণ সূর্যে, পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে জিওম্যাগনেটিক স্টর্ম
আরও পড়ুন: ৫০ বছরে এই প্রথম! সূর্যের এত স্পষ্ট ছবি এর আগে প্রকাশ্যে আসেনি
আরও পড়ুন: আমাদের সৌরজগতের বাইরে ৫০০০- এর বেশি এক্সোপ্ল্যানেট রয়েছে, দাবি নাসার