পক্ষাঘাতগ্রস্ত ব্যক্তিকে 12 বছর পর হাঁটতে সাহায্য করল AI, স্রেফ তাঁর চিন্তাভাবনাকে কাজে লাগিয়েই এল সাফল্য
Brain Implants Help Paralysed Man Walk Again: একটা অকল্পনীয় কাজ করে দেখাল এআই, যা সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যক্ষেত্রেই বিরাট বিপ্লব নিয়ে আসতে পারে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক ব্যক্তি হাঁটলেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও সুইৎজ়ারল্যান্ডের একদল বিজ্ঞানীর দৌলতে। স্মরণীয় কৃতিত্ব ছাড়া কী বলবেন একে!
Paralysed Man Walks: যে সময়টায় আমরা বসবাস করছি, সত্যিই এ এক অসাধারণ সময়। এক অদ্ভুত ট্রানজ়িশনের মধ্যে দিয়ে চলেছি আমরা। বাস্তব ও কল্পনার মাঝে যে বিরাট ফাঁকটা ছিল, তার কিছুটা হয়তো আর কয়েক দিনের মধ্যেই বিলীন হয়ে যাবে! সেই জায়গাটা দখল করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটা ধাপে ধীরে ধীরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগানো হচ্ছে। AI যে কতটা শক্তিশালী হতে পারে, তার ইঙ্গিত আমরা ইতিমধ্যেই ChatGPT নামক একটি কৃত্রিম মেধা ভিত্তিক চ্যাটবটের মাধ্যমেই পেয়ে গিয়েছি। OpenAI-এর এই সৃষ্টির পরে Google থেকে শুরু করে Meta, Microsoft, প্রযুক্তি জগতের বড়-বড় মাথারাও AI দৌড়ে নেমে পড়েছে।
শুধু চ্যাটবট কেন! AI দ্বারা চালিত সফটওয়্যার, টুল, এমনকি হিউম্যানয়েড রোবটও যে কতটা ক্ষমতাসম্পন্ন হতে পারে, আমরা তার ইঙ্গিতও পেয়েছি। মানুষের মন পড়া এবং স্বপ্নের ব্যাখ্যার সন্ধানেও কৃত্রিম মেধাকে ময়দানে নামানো হয়েছে। আর একটা অকল্পনীয় কাজ করে দেখাল এআই, যা সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যক্ষেত্রেই বিরাট বিপ্লব নিয়ে আসতে পারে। পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক ব্যক্তি হাঁটলেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও সুইৎজ়ারল্যান্ডের একদল বিজ্ঞানীর দৌলতে। স্মরণীয় কৃতিত্ব ছাড়া কী বলবেন একে!
গর্ট-জান ওস্কাম (Gert-Jan Oskam) নামের এক ব্যক্তি কোমর থেকে পা পা পর্যন্ত পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছিল। 2011 সাল থেকে দু’দিন আগে পর্যন্তও এই অবস্থাতেই ছিলেন তিনি। এআই-কে কাজে লাগিয়ে যদি ব্যক্তির স্বাস্থ্যের উন্নতি করা যায়, আদা জল খেয়ে পরীক্ষা করতে লেগে গিয়েছিলেন ইউরোপিয়ান ওই বিজ্ঞানীরা। শেষমেশ তাঁদের হাতযশেই প্রায় 12 বছর পর আবার হাঁটার ক্ষমতা ফিরে পেলেন ওস্কাম। AI ওই 40 বছর বয়সীকে এমনই ক্ষমতা দেয়, তিনি শুধু তাঁর চিন্তাভাবনা ব্যবহার করেই অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছিলেন।
কৃত্রিম মেধার আধুনিক প্রযুক্তি ওই ব্যক্তিকে এমনই ক্ষমতাবলে বলিয়ান করেছিল যে, দুটি ইমপ্ল্যান্টের (Brain Implants) কারণে তাঁর মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের মধ্যে সংযোগ পুনরুজ্জীবিত করেছিল। এএফপি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ওস্কাম বলেছেন, “ডাক্তাররা আমাকে মুখের উপরে পরিষ্কার বলে দিয়েছিলেন, কোনও ভাবেই তাঁরা সাহায্য করতে পারবেন না। আমি আমার বাহু নাড়াচাড়া করতে পারতাম। ডাক্তাররা বলেছিলেন, এতেই খুশি থাকো। কিন্তু আমি কখনও বিশ্বাস করতাম না যে, কখনও আর হাঁটতে পারব না।”
কীভাবে এল সাফল্য?
ফ্রান্স এবং সুইজারল্যান্ডের গবেষকরা ওস্কামের মস্তিষ্ক এবং মেরুদণ্ডের মধ্যে একটি ডিজিটাল সেতু তৈরি করেন। এবং তার করতে একটি অভিনব উপায়ও খুঁজে পান তাঁরা। এই সেতুটি ওস্কামের শরীরের সমস্ত আহত অংশকে বাইপাস করে তাঁকে আবার হাঁটতে সাহায্য করেছিল। 2011 সালে একটি সাইকেল দুর্ঘটনায় পড়ে গিয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, 10 বছরেরও বেশি সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করার পরেই এই সাফল্য এসেছে।
দলের একজন স্নায়ুবিজ্ঞানী গ্রেগোয়ার কোর্টিন বলছেন, তারা একটি ডিজিটাল সেতু তৈরি করে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের যোগাযোগ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই পন্থা আদতে ওস্কামের চিন্তাভাবনাকে কর্মে রূপান্তরিত করেছে। মস্তিষ্কের একটি অঞ্চলে ইমপ্ল্যান্ট করার মাধ্যমে এমনটা সম্ভব হয়েছিল, যা সাধারণত পায়ের পেশীগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ইমপ্ল্যান্টগুলি আসলে ব্যক্তির চিন্তাভাবনা ক্যাপচার করে এবং মেরুদণ্ডের জন্য বৈদ্যুতিক সক্রিয়তায় রূপান্তরিত করে পায়ের পেশীগুলিকে সক্রিয় করে।
বিজ্ঞানীরা বলছিলেন, তাঁদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল ওস্কামকে সচল রেখে তাঁর জীবনের মান উন্নত করা। তাঁরা জানিয়েছিলেন, আপাতত ওস্কাম আমাদের বেশিরভাগের মতো স্বাভাবিকভাবে হাঁটতে পারেন না।