মানবশরীরে চামড়া বা ত্বকের উপর কোনও ক্ষত চিহ্ন হলে, তা নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায়। অর্থাৎ ওষুধ লাগানোর পর ক্ষতস্থান শুকিয়ে আপনাআপনিই সেখানে নতুন চামড়া গজিয়ে যায়। এবার রোবটদের ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই হবে। মানুষের মতো রোবটের আঘাত প্রাপ্ত স্থানও ঠিক হবে আপনাআপনি। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের একদল গবেষক এমন একটি স্মার্ট ফোম জাতীয় মেটেরিয়াল আবিষ্কার করেছেন, যার সাহায্যে রোবটরা নিজেই তাদের ক্ষতস্থান ঠিক করতে পারবে। সিঙ্গাপুরের গবেষকদের আবিষ্কার করা এই উপাদানের নাম Artificially innervated foam বা AiFoam।
এই Artificially innervated foam বা AiFoam আসলে কী?
গবেষকরা বলছেন, এই AiFoam হল এক ধরনের হাইলি ইলাস্টিক পলিমার। fluoropolymer মিক্সচার বা মিশ্রণ দিয়ে তৈরি এই উপকরণ। National University of Singapore- এর গবেষকরা বলছেন, এই হাইলি ইলাস্টিক পলিমার কোনও স্পঞ্জি মেটেরিয়াল কেটে গেলে, তা সহজেই জোড়া লাগাতে সক্ষম। মূলত, রোবট এবং প্রস্থেটিক ডিভাইসের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হয়। সিঙ্গাপুরের গবেষক দলের প্রধান বেঞ্জামিন তি জানিয়েছেন, মানুষের আশপাশে থেকে কাজ করতে হলে রোবটকে আরও উন্নত এবং প্রতিভা সম্পন্ন হতে হবে। আর সেই দিকেই এক ধাপ এগোনো গিয়েছেএই নতুন পদ্ধতির সাহায্যে।
মানুষের স্পর্শের প্রতিরূপ তৈরির জন্য গবেষকরা এই উপকরণকে মাইক্রোস্কোপিক মেটাল বা ধাতব পার্টিকেলের সঙ্গে মিশিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ফোমের মধ্যে থাকাকালীন কিছু অণু ইলেকট্রোডসও যোগ করেছেন। এর ফলে যখনই চাপ সৃষ্টি হবে তখনই মেটাল পার্টিকেলগুলো পলিমার ম্যাট্রিক্সের কাছাকাছি চলে যাবে। নিজেদের ইলেকট্রিকাল প্রপার্টি বদলে ফেলবে। এই পরিবর্তন সেই সমস্ত ইলেকট্রোডসের মাধ্যমে ডিটেক্ট করা হবে যা কোনও কম্পিউটারে সংযুক্ত। এরপর রোবটকে নির্দেশ দেওয়া হবে যে এ বার তাকে কী করতে হবে।
এই ফিচারের সাহায্যে রোবটিক হাত কেবল কতটা পরিমাণ শক্তি প্রয়োগ হয়েছে, সেটাই বুঝবে না। সেই সঙ্গে কোন দিক থেকে এই শক্তি প্রয়োগ হয়েছে সেটাও বুঝতে পারবে। বেঞ্জামিন তি জানিয়েছেন, এই AiFoam হল প্রথম এমন উপকরণ যা একই সঙ্গে self-healing properties এবং প্রক্সিমিটি ও প্রেশার সেন্স করতে পারে। দু’বছরের চেষ্টায় বেঞ্জামিন এই উপকরণ তৈরি করেছে। বাস্তবে ব্যবহারের জন্য আসতে আরও বছর পাঁচেক সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি। বেঞ্জামিনের কথায়, আগামী দিনে রোবটিক আর্ম বা হাত ব্যবহারকারীরা অর্থাৎ প্রসস্থেটিক ইউজাররা কোনও জিনিস অনেক সহজে ধরতে বা মুঠো বন্দি করতে পারবেন।
আরও পড়ুন- Arctic Last Ice Area: বিজ্ঞানীদের প্রত্যাশার আগেই গলতে শুরু করেছে উত্তর মেরুর এই এলাকার বরফ