টাক পড়ার সমস্যা যেন দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। টাক সমস্যার সমাধানে বর্তমানে বাজারে প্রচুর ওষুধ রয়েছে। তবে ওষুধ সবসময় খুব একটা কার্যকর হয় না। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকায় ওষুধের ধার ধারেন না অনেকেই। এবার এই সমস্যাকে চিরতরে বিদায় জানানোর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন। মার্কিন বিজ্ঞানীরা ল্যাবে সফলভাবে 3D-প্রিন্টেড হেয়ার ফলিকল (3D-printed hair follicles) তৈরি করেছেন। এতে টাক পড়ার মতো সমস্যা আর থাকবে না বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীদের মতে, চুল পড়া একটি অতি সাধারণ ব্যাধি। এই ব্যাধি মানুষের আত্মসম্মান আর আত্মবিশ্বাসকে কমিয়ে দেয়। ফলে অনেক মানুষ অবসাদে ভোগেন। তাই চুল পড়ার ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য়ই এই গবেষণা শুরু করা হয়েছে। বর্তমানে তার ফলাফল অভাবনীয়।
3D-প্রিন্টেড হেয়ার ফলিকল কী?
3D-প্রিন্টেড হেয়ার ফলিকল হল এমন এক ধরনের হেয়ার ফলিকল, যা টাক পড়া মাথায় প্রিন্ট করা হলে একেবারে আসল চুলের মতোই দেখাবে। আর এই হেয়ার ফলিকল তৈরি করা হয়েছে মানুষের ত্বকের টিস্যুর সাহায্যে। এমনটা বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ইতিহাসে প্রথম হয়েছে। Science Advances-এর একটি প্রতিবেদনে এই পুরো গবেষণা ও তার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। নিউইয়র্কের রেনসেলার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এই গবেষণা করা হয়েছে। এই হেয়ার ফলিকলগুলি ত্বকের কোনও ক্ষতি করবে না। হেয়ার ফলিকলগুলি ঘাম উৎপন্ন করে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং এতে স্টেম সেল রয়েছে, যা ত্বককে নিরাময় করতে সহায়তা করে।
কীভাবে এই গবেষণা করা হয়েছে?
রেনসেলার ইনস্টিটিউটের গবেষকের দল পরীক্ষাগারে বেশ অনেকজনের মাথার চুলের গ্রন্থি কোষ নিয়ে গবেষণাটি করেছেন। অর জন্য 3D-প্রিন্টিং কৌশল ব্যবহার করেছে। অর্থাৎ মাথায় শুধু প্রিন্ট করে দিলেই আর টাক থাকবে না। গবেষকরা প্রিন্টারের জন্য একটি বিশেষ “বায়ো-কালি” তৈরি করেছেন। এই কোষগুলিকে প্রোটিনের সঙ্গে একত্রিত করার পরেই গবেষণা করা হয়েছে। এবার আপনার মনে প্রশ্ন আসতেই পারে, যে গোটা মাথায় কীভাবে 3D-প্রিন্টিং কৌশল ব্যবহার করা হবে? তার জন্য একটি অতি-পাতলা সুঁচ ব্যবহার করা হবে। তারপরে সেই প্রিন্টারের সুঁচটি চুলের প্রত্যেকটি কোষে ঢুকতে থাকে। আর তারপরে অনেকক্ষণের একটি প্রক্রিয়ায় ত্বকের কোষগুলিতে সমস্ত হেয়ার ফলিকল বসিয়ে দেওয়া হয়।
কেন করা হয়েছে এই আবিষ্কার?
এটি একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার। বিজ্ঞানীদের মতে, এই আবিষ্কারের পরে টাক পড়ার সম্ভাব্য নিরাময় সম্ভব। কারণ যখনই গোটা মাথায় প্রিন্ট হয়ে যাবে, তখন ধীরে ধীরে হেয়ার ফলিকলগুলি কাজ করা শুরু করবে। আর চুল গজাতে থাকবে। ফলে কোনও রকম উইকের প্রয়োজন পড়বে না। অবসাদ থেকেও মুক্তি পাবে বহু মানুষ। তাই এটি অসাধ্য সাধন ছাড়া আর কিছুই নয়।