নিমেষে জলে দ্রবীভূত হয়ে যায় এই ক্যারিব্যাগ

TV9 Bangla Digital | Edited By: দীপ্তা দাস

Aug 07, 2021 | 7:07 AM

যে মুহূর্তে পৃথিবীর ৮৮ % সমুদ্র পৃষ্ঠ প্লাস্টিক দূষণে কলুষিত হয়ে গেছে সেই পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে সুদীপ্তর এই লালন ক্যারি ব্যাগ মাটিতে মিশে যাবে মাত্র ৬ মাসে।

নিমেষে জলে দ্রবীভূত হয়ে যায় এই ক্যারিব্যাগ
এই ব্যাগ প্লাস্টিকের কোন পলিমার ছাড়াই তৈরি করা হয়।

Follow Us

আলুর স্টার্চ থেকে তৈরি এক ধরনের ক্যারি ব্যাগ বাংলার বাজারে এনেছেন তরুণ উদ্যোগী সুদীপ্ত বসু। ফুটন্ত গরম জলে ফেললে নিমেষেই দ্রবীভূত হয়ে যায় এই ক্যারিব্যাগ। ২০১৯ এ গুয়াহাটি আইআইটির উদ্যোগে উদ্ভিজ ষ্টার্চ অর্থাৎ আলু, ভুট্টা, সাবু দানা প্রভৃতি থেকে প্রাপ্ত শ্বেতসার দিয়ে পরিবেশবান্ধব ক্যারি ব্যাগ তৈরি হয়। এভাবেই বায়ো ডিগ্ৰেডেবল প্লাষ্টিকের পথ চলা শুরু। এই মুহূর্তে দক্ষিণ ভারত ও গুজরাটে এই বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক কাজ চলছে। বৈজ্ঞানিকদের দাবি, ষ্টার্চ থেকে তৈরি পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক সম্পূর্ণভাবে বায়ো ডিগ্রেডেবল। যা পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী ও অধিক টেকসই। এই ব্যাগ প্লাস্টিকের কোন পলিমার ছাড়াই তৈরি করা হয়। আর দেখতে হুবহু প্লাস্টিকের মতো হলেও তা পরিবেশে মিলিয়ে যায় মাত্র ১৮০ দিনের মধ্যে। ব্যবহারের পর মাটিতে ফেলে দিলে, মাটির কোন ক্ষতি তো করেই না বরং মাটির সাথে অতি দ্রুত মিশে গিয়ে মাটির গুনগত মান বৃদ্ধি করে ফসল উৎপাদন ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়।

বেহালা আর্য বিদ্যামন্দির এবং নিউ আলিপুর কলেজের ছাত্র সুদীপ্ত বসু দিল্লীর আইইটিই থেকে বি-টেক এবং বুন্দেলখণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবেশ বিজ্ঞান এবং ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে এম-টেক করেন। মাত্র ৭৫০ টাকার মাসিক স্টাইপেণ্ড দিয়ে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। এরপর অচিরাচরিত শক্তি নিয়ে কাজ শুরু করেন সুদীপ্ত। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সৌরশক্তি নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে কাজ করবার পর চাকরি নিয়ে চলে যান নাইজেরিয়ার লাগোসে। ২০১৮য় তিনি জানতে পারেন ব্রাজিলে পলিথিনের বিকল্প হিসাবে উদ্ভিজ্জ স্টার্চ দিয়ে তৈরি অর্গানিক পলিমার জনপ্রিয় হয়েছে। ব্যবহারের পর ওই ধরনের পলিমার সম্পূর্ণ ভাবে নাকি মিশে যায় প্রকৃতিতে। এই অতিমারীর মধ্যে দেশে ফিরে বন্ধুদের নিয়ে তৈরি করেন একটি সংস্থা লালন। আর এই ক্যারি ব্যাগ গুলোর নামও ‘লালন। খোঁজ শুরু হয় এক তরুণ বিজ্ঞানীর। নিজের চারপাশটাকে একটু সুস্থ করবার খোঁজ। এই মুহূর্তে কলকাতার বাজারে সুদীপ্ত নিয়ে এসেছেন ২ কিলো,৫ কিলো,১০ কিলো,১৫ কিলো,২০ কিলো,২৫ কিলো মাল বহনে স্বক্ষম ক্যারিব্যাগ।

বেহালা আর্য বিদ্যামন্দির এবং নিউ আলিপুর কলেজের ছাত্র সুদীপ্ত বসু।

যে মুহূর্তে পৃথিবীর ৮৮ % সমুদ্র পৃষ্ঠ প্লাস্টিক দূষণে কলুষিত হয়ে গেছে সেই পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে সুদীপ্তর এই লালন ক্যারি ব্যাগ মাটিতে মিশে যাবে মাত্র ৬ মাসে। আর ফুটন্ত জলে ফেললে তৎক্ষণাৎ দ্রবীভূত হবে এই ব্যাগ। সুদীপ্তর বন্ধুরা ছিলেন পাশে। শুভব্রত, শৌর্য, ডোনারা উৎসাহ জুগিয়ে গিয়েছেন বরাবর। এখন চেন্নাই থেকে তৈরি হয়ে আসছে এই ব্যাগগুলো। তাই দাম একটু বেশি পড়ছে। সুদীপ্ত বলছেন যদি সরকারি স্তরে প্লাস্টিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে আইন কড়া হয় আর সরকার উৎসাহ দেয় এই ধরনের বায়ো ডিগ্রেডেবল ব্যাগ ব্যবহারের জন্য তাহলে ভবিষ্যতে কলকাতাতেই লালনের উৎপাদনের জন্য একটি কারখানা তৈরি করবেন তাঁরা।

আলুর স্টার্চ বার করে ক্যারি ব্যাগ তৈরি করার পর লালনের ভাবনায় আছে ক্যাকটাসের স্টার্চ দিয়ে ব্যাগ তৈরি করার। ইতিমধ্যে দক্ষিণ কলকাতার দুটি বাজার সমিতি পরীক্ষা মূলক ভাবে এই থলিগুলো ব্যবহার করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। এইটুকু সাফল্য বাঙালি এই বিজ্ঞানী উদ্যোগপতিকে উৎসাহ দিয়েছে। তিনি বাজারে আনতে চলেছেন আরও একটি চমৎকার ! বাজরার আটা আর গুড় দিয়ে তৈরি করে ফেলেছেন থালা, বাটি, গ্লাস। এই ধরনের বাসনগুলো ব্যবহারের পর ফেলে দিলে প্রকৃতিকে দূষিত তো করবেই না বরং পথের পশুদের খাবার যোগান দেবে। আর মাটিতে পড়লে মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করবে।

একটি তথ্য বলছে ১৯৫০ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ১৫.৩ বিলিয়ন টন প্লাস্টিক উৎপাদিত হয়েছে সারা বিশ্ব জুড়ে। এই ১৫.৩ বিলিয়ন টন প্লাস্টিকের মধ্যে নবীকৃত বা রিসাইকেল হয়েছে মাত্র ৯% প্লাস্টিক পুড়িয়ে নষ্ট করা হয়েছে ১২% প্লাস্টিক আর অবিকৃত অবস্থায় পৃথিবীতেই প্রাকৃতিক পরিবেশে জমা হয়ে আছে ৭৯%। ওই ৭৯% প্লাস্টিকের ওজন ১২.৯ বিলিয়ন টনের মত এই দুনিয়ায় প্রশান্ত মহাসাগরের ওপরে প্লাস্টিক দূষণের ফলে তৈরি গ্রেট প্যাসিফিক গার্বেজ প্যাচের আয়তন প্রায় আলাস্কার সমান। সামুদ্রিক প্রাণীরা জেলিফিস ভেবে প্লাস্টিক খেয়ে নিচ্ছে, প্রতিদিন। জীবন্ত মমিতে পরিণত হচ্ছে হাজারে হাজারে সামুদ্রিক প্রাণী আর পাখি , প্রতিদিনই। সেই পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে সুদীপ্ত বসুর এই লালন ক্যারিব্যাগ ভবিষ্যতের পৃথিবীর প্লাস্টিক দূষণের সমস্যার একটা উত্তর।

Next Article