চলতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসে উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়েছিল। সেই দুর্যোগের কারণ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। বলা হচ্ছে, একটি সুবিশাল এবং ভারী পাথর ও আইস অ্যাভালাঞ্চের কারণেই ধস নেমেছিল চামোলিতে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি উত্তরাখণ্ডের এই এলাকায় মাটি ধস এবং বন্যা একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল। প্রাণ হারিয়েছিলেন ২০০- র বেশি মানুষ। বৈজ্ঞানিকরা গবেষণার পর জানিয়েছেন, হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল থেকে সুবিশাল একটি পাথরের চাঁই এবং বরফাবৃত স্তূপ ভেঙে পড়েছিল চামোলি এলাকায়। আর তার জেরেই ঘটেছিল এই ভয়ানক দুর্যোগ।
চামোলি এলাকা সংলগ্ন তিনটি স্থানীয় নদী উপত্যকা রন্তি গাড, ঋষিগঙ্গা এবং ধৌলিগঙ্গার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছিল ওই পাথরের এবং বরফের চাঁইয়ের ডেব্রিস। মাটি, কাদা, জল সবের মিশ্রণে ধস আর বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছিল গোটা এলাকা। ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল নির্মিয়মাণ দু’টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
সম্প্রতি একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে চামোলির এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণ বর্ণনা করেছে ইউরোপীয়ান স্পেস এজেন্সি বা ইএসএ। মূলত স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে এই কারণ বোঝা সম্ভব হয়েছে। এর জন্য International Charter: Space and Major Disasters সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এই পরিষেবার মাধ্যমে প্রকৃতি এবং মনুষ্য সৃষ্ট জরুরিভিত্তিক অবস্থার স্যাটেলাইট ইমেজ সংগ্রহ করা যায়। চামোলির দুর্যোগের সুনির্দিষ্ট কারণ জানার জন্য এই পরিষেবাকে সক্রিয় করা হয়েছিল। আর তার জেরেই হাতে এসেছে নতুন তথ্য।
এই দুর্যোগের আগের এবং পরবর্তী পর্যায়ের বেশ কিছু ছবি ভাল করে খতিয়ে দেখেছেন বিজ্ঞানীরা। এছাড়াও ল্যান্ডস্যাট এবং the Copernicus Sentinel-2 missions- এর মাধ্যমে সহজে যেসব ছবি পাওয়া যায় তার সঙ্গেও ছবিগুলো তুলনা করে বিশ্লেষণ করেছেন। মূলত অ্যাভালাঞ্চের ভলিউম বা পরিমাণ, উচ্চতার ফারাক এবং অ্যাভালাঞ্চের গতিপ্রকৃতি খতিয়ে দেখেছেন বৈজ্ঞানিকরা। আর এইসব পরীক্ষা নিরীক্ষার পরই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে হিমবাহ লেকের বিস্ফোরণের কারণে চামোলির দুর্যোগ হয়নি। বরং রন্টি পিক থেকে ধসে গিয়েছিল একটি সুবিশাল পাথরের চাঁই এবং বরফখণ্ড। পরবর্তী কালে চামোলিতে আছড়ে পড়ার পর সেটা পরিণত হয়েছিল কাদা এবং ডেব্রিস ফ্লো বা বন্যায়। আর এর প্রভাবেই কার্যত তছনছ হয়ে গিয়েছিল উত্তরাখণ্ডের চামোলি।
এই দুর্যোগের পুনর্নির্মাণ করেছিলেন ৫৩ জন বৈজ্ঞানিক এবং বিশেষজ্ঞের দল। অনলাইনে একত্রিত হয়ে তাঁরা খতিয়ে দেখেছেন এই দুর্যোগের খুঁটিনাটি। কী কারণে এমন ভয়াবহ দুর্যোগ হয়েছিল আর তার প্রভাবই বা কী ছিল, সবটাই বিশ্লেষণ করা হয়েছিল। সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে এই প্রতিবেদন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান, স্থানীয় ভিডিয়ো এইসবের সাহায্যে জানা গিয়েছিল দুর্যোগের সময়কাল। তারপর অনলাইনে দুর্যোগ পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন- মহাকাশেই রাখা হোক জেফ বেজোসকে, ঢুকতে দেওয়া হবে না পৃথিবীতে, পিটিশনে সই করেছেন ৭৫ হাজারেরও বেশি মানুষ