মহাকাশের গভীর থেকে গভীরতম অংশে মানুষকে পাঠাতে কোনও কসরতই বাকি রাখছে না নাসা (NASA)। কিন্তু মহাকাশচারীদের (Astronauts) জন্য শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস খুঁজতে গিয়ে বারবারই হোঁচট খাচ্ছে তারা, তা হল খাবার। স্পেস স্টেশনে মানুষের থাকার জন্য যেন এই একটা শক্তিরই স্থায়ী সমাধানসূত্র যেন অনেকদিন ধরেই বের হচ্ছে না। সেই বিষয়টাকে আরও মান্যতা দিতে কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির সঙ্গে কোঅর্ডিনেট করে ডিপ স্পেস ফুড চ্যালেঞ্জের (Deep Space Food Challenge) ঘোষণা করল নাসা। হ্যাঁ, ফুড চ্যালেঞ্জ! যেখানে এটি জনসাধারণকে সৃজনশীল এবং টেকসই খাদ্য উৎপাদন প্রযুক্তি বা সিস্টেম বিকাশ করতে বলা হয়েছে, যার জন্য ন্যূনতম সম্পদের প্রয়োজন হয় এবং সম্ভাব্য সর্বনিম্ন পরিমাণ বর্জ্য উৎপাদন করা যায়। আর খাবারের উৎসের যদি স্থায়ী কোনও সমাধানসূত্র কোনও মানুষ বের করে দিতে পারেন, তাহলে তাঁকে মোটা অঙ্কের পুরস্কারও দিতে চলেছে নাসা।
সাইটেকডেলি-র তরফ থেকে এই রিপোর্টটি সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয়। জেনে রাখা ভাল যে, কোনও খাবার একটা নির্দিষ্ট সময় পরে তার পুষ্টি হারায়। যেমন, মঙ্গল-মিশনে যাবেন মহাকাশচারীরা, যার জন্য বেসশ কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে। আর সেই সময় পর্যন্ত মহাকাশচারীদের সুস্থ থাকতে দরকার প্যাকেজ করা খাবারের কোনও কার্যকর বিকল্প।
বিজ্ঞানীরা ডিপ স্পেস ফুড চ্যালেঞ্জের মতো উদ্যোগের মধ্যে দিয়ে বাড়ি এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশনগুলির থেকে কম্প্যাক্ট এবং উদ্ভাবনী উন্নত খাদ্য ব্যবস্থার সমাধানগুলিও বিকাশ করতে চাইছেন। বিশেষ করে, বন্যা, খরা ইত্যাদির সময় জরুরি পরিস্থিতির জন্যও যাতে সেই খাবারগুলি কাজে লাগে। কারণ এই ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সেই ব্যবস্থা সফল হলে, তবে স্পেস স্টেশনেও তা কার্যকর হওয়ার একটা চান্স তো থেকেই যায়।
চ্যালেঞ্জটির মধ্যে দিয়ে প্রতিযোগীদের একটি খাদ্য উৎপাদন প্রযুক্তি ব্যবস্থা তৈরি করতে বলা হচ্ছে যা গভীর মহাকাশে তিন বছরের অভিযানে চার জন নভোচারীর ক্রুকে টিকিয়ে রাখার জন্য একটি সম্পূর্ণ খাদ্য ব্যবস্থায় সংহত করা যেতে পারে। ক্রুদের কাছে খাবার সঞ্চয়, প্রস্তুত এবং সরবরাহ করার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু বিবেচনা করতে হবে উদ্ভাবকদের। এর মধ্যে উৎপাদন, পরিবহন, ব্যবহারের পাশাপাশি বর্জ্য নিষ্পত্তির বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
নাসা স্পেস টেকনোলজি মিশন ডিরেক্টরটের অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জিম রয়টার, সংস্থার ওয়াশিংটনের এজেন্সি হেডকোয়ার্টার থেকে বললেন, “মহাকাশ ভ্রমণের সীমাবদ্ধতার মধ্যে দীর্ঘ সময় ধরে মহাকাশচারীদের খাওয়ানোর জন্য উদ্ভাবনী সমাধানের প্রয়োজন। খাদ্য প্রযুক্তির সীমানা ঠেলে ভবিষ্যৎের অভিযাত্রীদের সুস্থ রাখবে। এমনকি এখানে লোকেদের বাড়িতে খাওয়াতেও সাহায্য করতে পারে।”
প্রতিযোগিতার প্রথম পর্বটি সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে। মোট ১৮ জনকে নাসা ৪৫,০০০ মার্কিন ডলার করে পুরস্কার দিয়েছিল। উদ্ভাবনী খাদ্য উৎপাদন প্রযুক্তির জন্য তাঁদের ধারণা, নিরাপদ, গ্রহণযোগ্য, সুস্বাদু, পুষ্টিকর খাদ্য পণ্য তৈরি করে দেখিয়েছে। পাশাপাশি আবার খুব অল্প সম্পদের মধ্যে দিয়েই স্থিতিশীলতা, গুণমান বজায় রাখে – এই সবের ভিত্তিতেই বিজয়ীদের বেছে নেওয়া হয়েছিল।
১০টি আন্তর্জাতিক টিমকে স্বীকৃত দিয়েছিল নাসা এবং কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি। তাঁদের সাপোর্ট পার্টনার ছিল মেথুসেলা ফাউন্ডেশন, যারা দুটি আন্তর্জাতিক দলকে তাঁদের অভিনবত্বের জন্য ২৫,০০০ মার্কিন ডলার পুরস্কার দিয়েছিল। অন্য দিকে কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সি ১০টি দলের প্রত্যেককে ৩০,০০০ মার্কিন ডলার দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল।
এখন নাসা নতুন এবং বিদ্যমান উভয় দলকেই দ্বিতীয় পর্বে প্রবেশের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সেখানে তাঁদের পরীক্ষার জন্য শেষ খাদ্য পণ্যের সঙ্গে তাদের ডিজাইনের প্রোটোটাইপ তৈরি এবং ডেমো করতে হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অংশগ্রহণকারীরা ফেজ ২-এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে, যেখানে তাঁদের ১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পর্যন্ত পুরস্কারমূল্য জিতে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন: ভুলে যাওয়া ভুল নয়, আসলে তা শেখারই অঙ্গ, দাবি বিজ্ঞানীদের
আরও পড়ুন: জাপানে পুলিশের পরিবর্তে রাস্তায় রোবট! AI-এর মাধ্যমে ঘনঘন টহলদারি, ধরছে চোর-ডাকাতও