Zakir Hussain: জাকির হুসেন কীভাবে নিজের নামকে তবলার সঙ্গে সমার্থক করলেন?
শুধুমাত্র এক শিল্পীর তবলা বাজানো শুনতে, তাঁকে দেখতে হাজার হাজার মানুষ লাইন দিচ্ছেন— এই বিষয়টি সম্ভব করেছিলেন যিনি, তিনি জ়াকির হুসেন। কিন্তু কীভাবে? উস্তাদ আল্লারাখার মত বাবার নামের পাশে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করা কি চারটি খানি কথা? কীভাবে তবলার সঙ্গে নিজের নামকে সমার্থক করলেন জাকির হুসেন? কীভাবে তাঁর সতীর্থদের স্মৃতি জুড়ে শুধুই তাঁর হাসিমুখের ছাপ?
তাল কাটল ১৫ তারিখ। মনিটরে লাইনটা ফ্ল্যাট। যে মানুষটার মধ্যে এত প্রাণশক্তি, যে মানুষটার মধ্যে এত জীবন, সে নেই! দুনিয়াকে আর একটু বেতালা করে চলে গেলেন তিনি। যে দুনিয়ায় রোজ আমাদের খারাপ খবর তাড়া করে বেড়ায়, যুদ্ধ, হানাহানি, দুর্নীতিতে প্রাণ ওষ্ঠাগত, সেখানে এই তাল কেটে যাওয়াকে মেনে নেওয়া খুব মুশকিল! যে মানুষটা তবলার স্বতন্ত্র অস্তিত্বকে তুলে ধরলেন গোটা দুনিয়ার সামনে। ॥দেখাব আজকের নিউজ সিরিজে। আজকের বিশেষ নিউজ সিরিজ ‘অজানা জাকির’
সেগমেন্ট ১
ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল। ভারতীয় উপমহাদেশের ধ্রুপদ সংগীত। রাজপ্রাসাদের অন্দরমহল। হাভেলির গমগমে আবহ। খানদানি রাজকীয় ভার ছিল তাঁর। ইন্ডিয়ান ক্লাসিকাল বা ধ্রুপদ সঙ্গীত সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছতে সময় লেগেছিল অনেকটা। পাঁচের দশকের শেষে বিশ্বজুড়ে মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল ক্লাসিকাল মিউজিক। উপমহাদেশের গন্ডি ছেড়ে। রবিশঙ্কর, আলী আকবর খান, আল্লা রাখার হাত ধরে। সেই ধারাকেই সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছে দিয়েছেন জাকির হুসেন। ভারতীয় ধ্রুপদ সঙ্গীতের ব্র্যান্ড তৈরী করলেন তিনি। তখন তাঁর বছর কুড়ি বয়স। বাবার সঙ্গেই বাজাচ্ছিলেন কনসার্টে। পিতা-পুত্রের যুগলবন্দী। অনুষ্ঠান শেষে একজন আল্লা রাখাকে বলেছিলেন, তাঁর ছেলের বাজনা এক্কেবারে বাবার মতোই। উত্তরে আল্লা রাখা কী বলেছিলেন জানেন?
সেগমেন্ট ২
আজ তিনি আর নেই। তাঁর মৃত্যুর পর বন্ধুর চোখে জল। সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টে বন্ধু জাকিরের স্মৃতিচারণ করেছেন তিনি। তাঁর মনে পরে গেছে তাদের যৌবনের কথা। কার্নেগি হলে দুই পরিবারের একসঙ্গে ডিনার করার কথা। ডিগা রিদম থেকে প্ল্যানেট ড্রাম। ৫০ বছরের বন্ধুত্বের কথা। কে সেই বন্ধু? ফেব্রুয়ারি,১৯৭০। তখন তিনি মিউনিখে। ফোন এসেছিল রবিশঙ্করজীর। উস্তাদ আল্লা রাখা অসুস্থ হওয়ায় সঙ্গত দিতে হবে তাকেই। পরপর চার পাঁচটি কনসার্ট। রবিশঙ্কর ও জাকির হুসেইন। প্ল্যান ছিল, কনসার্ট শেষে দেশে ফিরবেন তিনি। ফেরা হলো না। আটকে দিলেন রবিশঙ্করই। উস্তাদজীর ছিল বাৎসল্য, অগাধ স্নেহ। যেমনটা তিনি পেয়েছেন তাঁর বাবার কাছে। জীবনে একবারই গায়ে হাত তুলেছিলেন বাবা।
সেগমেন্ট ৩
তখন তাঁর বয়স বারো। সেদিনও তাঁর বাবা ভরসা করেছিলেন তাঁকে। বড় কনসার্টে আল্লারাখা নিজের বদলে তুলে দিয়েছিলেন ছেলেকে। সেই বয়সেই বাজিমাত। মন্ত্রমুগ্ধ শ্রোতারা। সেদিন তিনি নজর কেড়েছিলেন আরও একজনের। কে জানেন? একরাশ চুল, মুখে হাসি। সুচতুর অভিনয়। শুধু তবলার বোল নয়, তাঁর সবটাই ছিল পারফরম্যান্স। ভরপুর এনার্জি।জাকির হুসেনের জনপ্রিয়তা প্রথম থেকেই আকাশছোয়া। ১৯৯৪ সাল। জেন্টলম্যান পত্রিকা। মহিলা পাঠকদের ভোটে সেক্সিয়েস্ট ম্যান অফ ইন্ডিয়া হলেন তিনি। কাকে হারিয়েছিলেন জানেন?
সেগমেন্ট ৪
অভিনয়ের ইচ্ছে বরাবরই ছিল। কিন্তু বাবার আপত্তিতে অভিনয় করা হয়নি। জীবনে আদ্যোপান্ত প্রেমিক ছিলেন জাকির হুসেন। প্রথম ডেটের গল্পও বলেছেন সাক্ষাৎকারে। রসিক তিনি। তিনি সিরিয়াসও। যেমন জানতেন স্নেহ করতে, তেমনই জীবনের তালিমও দিয়েছেন অনেককে। গুরুর মতো আগলে রাখতেন সতীর্থদের। পথ দেখিয়েছেন পরবর্তী প্রজন্মকে। যেকোনও এক্সপেরিমেন্টে উৎসাহ দিয়েছেন বারবার। তাই হয়তো, তাঁকে নিয়ে কথা বলতে গেলে অজান্তেই মাথা নত করে ফেলেন অনেকেই। তাঁর আঙুলের ছোয়ায় প্রাণ পেত যে তবলা। সেটা বেজে উঠবে না আর। তবলার বোলে কথা বলবেন না ঝাঁকড়া চুল, হাসিমুখ সেই মানুষটি। শুধু এই চেনা ছবিটা থেকে যাবে। যতদিন সঙ্গীত থাকবে।