Siahen Glacier: সেনামুক্ত সিয়াচেন! গোলাপের দেশে, কাণ্ড সর্বনেশে…

Siachen Glacier: সিয়াচেনের ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় মাইনাস ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কেন বছরভর সেনা মোতায়েন রাখা হয়, তা কি সরকার জানত না? সিয়াচেনের একদিকে চিন। অন্যদিকে কাশ্মীর। দুই ভূখণ্ডেরই অবস্থান অনেকটা নীচুতে। ফলে সিয়াচেন থেকে দু-দিকেই নজর রাখা সম্ভব। সিয়াচেন দুর্ভেদ্য দেওয়ালের মতো আড়াল করে রেখেছে কাশ্মীরের বড় অংশ আর লাদাখের নুব্রা উপত্যকাকে। একবার ভারতীয় সেনা ওই হিমবাহ এলাকা ছেড়ে দিলেই সেখানে উঠে আসবে পাক সেনা। তখন ওসব চুক্তি ছেঁড়া কাগজে পরিণত হবে। এটা মাথায় আসেনি সরকারের?

Siahen Glacier: সেনামুক্ত সিয়াচেন! গোলাপের দেশে, কাণ্ড সর্বনেশে...
| Updated on: Aug 10, 2024 | 10:01 PM

আমাদের সরকারই থালায় সাজিয়ে পাকিস্তানের হাতে সিয়াচেন তুলে দিচ্ছিল। সেনার আপত্তিতে অনেকটা এগিয়ে গিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়। ইউপিএ ওয়ানের সময় ঠিক কী হয়েছিল, ১৮ বছর পর তা সামনে এল। তত্‍কালীন সেনাপ্রধান জেনারেল জেজে সিংয়ের দাবি, ২০০৬ সালের শেষদিকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সিয়াচেন সম্পর্কে জানতে চায়। দিল্লিতে মন্ত্রকের হেড কোয়াটার্সে সেই ব্রিফিং শেষ হওয়ার পর সেনা অফিসারদের বলা হয়, সিয়াচেনে বছরভর নজরদারি চালাতে গিয়ে প্রবল ঠাণ্ডায় প্রাণহানি হচ্ছে। আমাদের বিকল্প ভাবতে হবে। সেনাকর্তারা প্রশ্ন করেন, বিকল্প মানে? উত্তর আসে, আমরা সিয়াচেনকে সেনামুক্ত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করতে চাই। পাকিস্তানের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা চলছে। মানে সিয়াচেন নিয়ে সেনার বক্তব্য না শুনেই পাকিস্তানের সঙ্গে চুক্তি করতে যাচ্ছিল কেন্দ্র। সেই চুক্তির খসড়াও ওই বৈঠকে সেনা কর্তাদের দেখানো হয়। জেনারেল জেজে সিং, যিনি জেনারেল জেজে নামেই পরিচিত, তিনি বলছেন, আমরা নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারিনি। এত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ে আগে থেকে আমাদের বিন্দুবিসর্গ জানানো হয়নি। আমি ভাবছিলাম, সীমান্তেও তো গুলিগোলা চলে। সেনাদের প্রাণ যায়। তা হলে সীমান্ত থেকেও সেনা সরিয়ে নেওয়া হবে? সরকারি বৈঠকে জেনারেল জেজে বলেন, সিয়াচেন নিয়ে পাকিস্তানের বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস সবার জানা। ১৯৮৪ সালে ভারতীয় সেনা অপারেশন মেঘদূতের মতো কঠিন অভিযান চালিয়ে সিয়াচেন দখল করে। দুনিয়ায় কঠিনতম সেনা অপারেশনে ৮৯০ জন জওয়ান ও অফিসার শহিদ হয়েছিলেন। আমাদের ঘাড়ের কাছেই, সিয়াচেনের একটা অংশ এখনও পাকিস্তানের দখলে। অধিকৃত কাশ্মীরের শাক্সগ্রাম এলাকা সেই ১৯৬৩ সালেই চিনের হাতে তুলে দিয়েছে পাকিস্তান।

এই অবস্থায় আমরা সিয়াচেন নিয়ে আর কোনও ভুল করতে পারি না। সেনাপ্রধানের বক্তব্যের মূলত তিনটে পয়েন্ট ছিল। এক, ভারতীয় সেনা সিয়াচেন হাতছাড়া করতে চায় না। দুই, সেনা সরানোর আগে ওই এলাকার খুঁটিনাটি, স্যাটেলাইট ম্যাপ সব ভারতকে দেওয়ার গ্যারান্টি দিতে হবে পাক সেনাকে। তিন, পাকিস্তানকে লিখিতভাবে মানতে হবে সিয়াচেন নিয়ে তাদের কোনও দাবি নেই। জেনারেল জেজে আরও একটা কথা বলেছেন। তাঁর বক্তব্য, তত্‍কালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এমকে নারায়ণনের পরামর্শ উপেক্ষা করেই সিয়াচেন নিয়ে এগিয়েছিল তত্‍কালিন সরকার। নারায়ণন সাফ বলে দিয়েছিলেন, সিয়াচেন নিয়ে এমন কোনও সিদ্ধান্ত আত্মহত্যার সামিল। পাকিস্তানকে বিশ্বাস করে ভারত বারবার খেসারত দিয়েছে। সিয়াচেন নিয়ে ফের ভুল হলে আর ভুল শোধরানোর সুযোগ থাকবে না। প্রশ্ন হলো সেইসময়ে সিয়াচেনকে ডিমিলিটারাইজ করতে কেন্দ্র এতটা উতলা হয়ে উঠেছিল কেন? জেনারেল জেজে-র দাবি, আমাদের বলা হয়েছিল, সিয়াচেন সেনামুক্ত হলে কাশ্মীরে শান্তি ফিরবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে পাকিস্তান। ওঁরা জঙ্গি সংগঠনগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করার আশ্বাস দিয়েছিল। তাতে ভরসা রেখেই হয়তো সরকার এগিয়েছিল। শুনে অবাকই হলাম। সিয়াচেনের ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় মাইনাস ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কেন বছরভর সেনা মোতায়েন রাখা হয়, তা কি সরকার জানত না? সিয়াচেনের একদিকে চিন। অন্যদিকে কাশ্মীর। দুই ভূখণ্ডেরই অবস্থান অনেকটা নীচুতে। ফলে সিয়াচেন থেকে দু-দিকেই নজর রাখা সম্ভব। সিয়াচেন দুর্ভেদ্য দেওয়ালের মতো আড়াল করে রেখেছে কাশ্মীরের বড় অংশ আর লাদাখের নুব্রা উপত্যকাকে। একবার ভারতীয় সেনা ওই হিমবাহ এলাকা ছেড়ে দিলেই সেখানে উঠে আসবে পাক সেনা। তখন ওসব চুক্তি ছেঁড়া কাগজে পরিণত হবে। এটা মাথায় আসেনি সরকারের?

Follow Us: