ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সতীর ৫১ পিঠ। তবে শাস্ত্রভেদে এই পিঠের সংখ্যার তারতম্য রয়েছে। যেমন শিবচরিত গ্রন্থে এই ৫১টি শক্তিপীঠ ছাড়াও রয়েছে ২৬টি উপপিঠের উল্লেখ। দিনের বেলায় অন্ধকার! ঘন জঙ্গলের মধ্যে সতীর উপপীঠ নোয়াজনি মাতার মন্দির।
গা ছমছমে পরিবেশ। নিরালা, নিঝুম। শোনা যায় শান্তিপুর শহরের উপকণ্ঠে এই আম বাগানের ভিতরে দেবী দাক্ষায়নীর হাতের নোয়া পড়ে তৈরি হয় এই নোয়াজনি মাতার পিঠ। এও শোনা যায় শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসের গুরু, তোতাপুরী বাবা আজ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশ বছর আগে সাধনা করতেন এই পিঠে। সেই সময়ে এই অঞ্চলে গভীর বনের মধ্যে ছিল একটি শ্মশান।
এক সময়ে এই অঞ্চলে লোহাজং নামক এক আদিবাসী সম্প্রদায়ের বাস ছিল। লোকমুখে শোনা যায় তাদের আরাধ্য প্রকৃতি দেবী ছিলেন ঈশ্বরী নোয়াজনি মাতা। স্থানীয়রা অনেকে বলেন এই প্রস্তর খণ্ডের আকারের সঙ্গে আফগানিস্থান আর সাঁচির বৌদ্ধ স্তুপে ব্যবহৃত পাথরের সঙ্গে অদ্ভুত সাদৃশ্য রয়েছে।
অথচ পুরা প্রত্ন বিভাগ বা এই অঞ্চলের প্রাচীন কোনও পাণ্ডুলিপিতে এই মন্দিরের শিলামূর্তি নিয়ে নেই প্রশাসনিক ও সরকারি স্তরে কোনও উদ্যোগ। মন্দির চত্বরে রয়েছে একটি মনসা আর শিব মন্দির। ধুনি জ্বালিয়ে এখানে সাধনা করতেন নাগা সন্ন্যাসীরা। বহু নাগা সন্ন্যাসী বারেবারে এখানে এসেছেন তোতাপুরীর টানে। কিন্ত থাকতে পারেন নি বেশি দিন।
বর্তমানে বিশ্বনাথ চক্রবর্তী এই মন্দির সংলগ্ন একটি কুটিরেই বাস করেন। তিনিও অনুভব করেন প্রতিনিয়ত কেউ যেন আধ্যাত্মিক ভাবে নজরদারি চালায় এই মন্দির প্রাঙ্গণে। ব্যাখ্যার অতীত একটা পরিমণ্ডল। এলাকার মানুষজনও জানেন নোয়াজনি মন্দিরের এই মাহাত্ম্য।