১৫ বছরের কিশোরী ফ্রান্সিসকা সিসারিনি। জন্ম থেকেই দুটো হাত এবং একটা পা নেই তার। কিন্তু একটু বড় হতেই ইতালির বাসিন্দা ফ্রান্সিসকা মাকে বলেছিল একজন অ্যাক্রোব্যাটিক পোল ড্যান্সার হতে চায় সে। মেয়ের অদ্ভুত শখ শুনে খানিক চমকেই গিয়েছিলেন ফ্রান্সিসকার মার। কিন্তু সময় এগোতেই বুঝতে পারেন, এটা ফ্রান্সিসকার নিছক শখ নয়, বরং তার প্যাশন, স্বপ্ন। ২০২১ সালে International Pole Sports Federation- এর ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড পোল এবং এরিয়াল চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে ফ্রান্সিসকা। মাকে নিজের স্বপ্নের কথা জানানোর পর তিন বছর নিজেকে তৈরি করার সময় নিয়েছিল কিশোরী। আর তারপরেই সাফল্য এসেছে জীবনে।
ফ্রান্সিসকার কথায়, সে জানে না কেন এমন অদ্ভুত ইচ্ছে হয়েছিল তার। হয়তো সোশ্যাল মিডিয়ায় কোথাও কিছু দেখে সে। কিংবা কোনও স্বপ্ন দেখেছিল। তাই একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে শুধু মাকে গিয়ে ফ্রান্সিসকা জানিয়েছিল যে একজন অ্যাক্রোব্যাটিক পোল ড্যান্সার হতে চায়। ১৫ বছরের ফ্রান্সিসকাকে এখন চেনেন বিশ্বের অনেক প্রান্তের অনেক মানুষ। এ বছর কোভিডের কারণে বিশ্বের সব প্রান্ত থেকেই পোল ড্যান্সররা তাঁদের ভিডিয়ো অনলাইনে আপলোড করেছিলেন। আর তা দেখেই বিচারকরা বেছে নিয়েছেন যোগ্য প্রতিযোগীদের। ফ্রান্সিসকা ছিল একমাত্র অ্যাথলিট যে, ডিসএবিলিটি ক্যাটেগরিতে অংশগ্রহণ করেছি। সোনার মেডেল পুরস্কার পেয়েছে এই কিশোরী।
দেখুন ফ্রান্সিসকার ভিডিয়ো
WATCH: Meet the Italian teen with one leg and no hands finding freedom in acrobatic pole dancing https://t.co/Bmwak6cP8g pic.twitter.com/DTyAHY7y3Z
— Reuters (@Reuters) December 11, 2021
আর পাঁচজন সাধারণের কাছে যে খেলা বড় কঠিন, সেটাই বেছে নিয়েছিল ফ্রান্সিসকা। কারণ অ্যাক্রোব্যাটিক পোল ড্যান্স করে নিজেকে মুক্ত মনে হত তার। এমনটাই জানিয়েছে ফ্রান্সিসকা। বাড়ির কাছে স্থানীয় জিমে ফ্রান্সিসকাকে প্রশিক্ষণ দিতেন এলিনা নামের এক ট্রেনার। আর বাড়িতে নিজেই সেটা অভ্যাস করত ফ্রান্সিসকা। কিশোরীর ট্রেনার জানিয়েছেন, যখন শুধু একটা পায়ের উপর নির্ভর করে শরীরকে নিয়ন্ত্রোণ করতে হয়, সেটা বেশ কষ্টকর এবং জটিল। বিশেষ করে হাত বা পা ঠিকভাবে না থাকলে সমস্যা বাড়ে। ফ্রান্সিসকার নিজের রক্ত-মাংসের পায়ের সঙ্গে রয়েছে একটি প্রস্থেটিক লেগ বা পা। প্রস্থেটিকের হারও ছিল তার। কিন্তু আট বছর বয়সে সেটা আর ব্যবহার করবে না বলে ঠিক করে নেয় ফ্রান্সিসকা। সেই থেকে এখন পর্যন্ত ওই আর্টিফিশিয়াল হাতের ব্যবহার করেনি ফ্রান্সিসকা। এমনটাই জানিয়েছেন, কিশোরীরর মা ভ্যালেরিয়া মেনকারোনি।
মেয়ের জন্য গর্বিত বাবা মার্কো সিসারিনি এখন বলছেন, ফ্রান্সিসকা এমন মেয়ে যে জানে ও কী পেতে চাই। ওর জীবনের কিছু লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে, যা ও পূরণ করতে চায়। হাত নেই তো কী হয়েছে। ফ্রান্সিসকা তাতেই অভ্যস্ত। আর্টিফিশায়ল হাত ব্যবহার করে লক্ষ্য পূরণের বদলে সে যেমন তেমনভাবেই স্বপ্ন পূরণ করেছে কিশোরীর ফ্রান্সিসকা।