আসানসোল: শুক্রবার রাতে ‘নাটকীয়ভাবে’ তৃণমূলে (TMC) প্রত্যাবর্তন হয়েছে জিতেন্দ্র তিওয়ারির (Jitendra Tiwari)। বৃহস্পতিবার তিনি পুর প্রশাসক ও দলের জেলা সভাপতি পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পরেই জেলা জুড়ে চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছিল। তৃণমূলের একাংশ জিতেন্দ্র তিওয়ারির নামে প্রকাশ্যে গালিগালাজ শুরু করেন। ‘বিশ্বাসঘাতক’ তকমা দিয়ে শহরজুড়ে তাঁর ছবি দেওয়া পোস্টার ছিঁড়ে দেয়ে, কালি লেপে দেওয়া হয়। কিন্তু শুক্রবার রাতেই তিনি ক্ষমা চেয়ে দলে ফিরে যেতেই পরিস্থিতি বদল হতে থাকে। এবার জিতেন্দ্র অনুগামীরা ক্ষেপে উঠেছেন ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ ওই তৃণমূল সমর্থকদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ, তৃণমূল নেতা রাজু আলুওয়ালিয়ার উপর শুক্রবার সকালেই হামলা চালাতে আসে কিছু দুষ্কৃতী। রাজুর দাবি, তাঁরা জিতেন্দ্র অনুগামী। যেহেতু রাজু জিতেন্দ্রর পোস্টার ছেঁড়া ও কালি লেপায় বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিলেন, তাই এই আক্রোশ বলে অভিযোগ। একইভাবে পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল ব্লক সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জিতেন্দ্র তিওয়ারির বিধায়ক কার্যালয় দখল করে নেন। প্রকাশ্য সভায় বিধায়কের নামে হুঁশিয়ারি দেন, পাণ্ডবেশ্বর ঢুকলে পা ভেঙে দেবেন। এই সমস্ত ঘটনা দেখে জিতেন্দ্র অনুগামীরাও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। দু’পক্ষ লড়াইয়ের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
অপরদিকে ফেসবুক জুড়ে তৃণমূলের একাংশ বৃহস্পতিবার বিকেল থেকেই জিতেন্দ্রর নামে ‘কুৎসা ও গালিগালাজ’ শুরু করে দেয় বলে অভিযোগ। কেউ কেউ শালীনতার মাত্রাও ছাড়িয়ে যায়। এই পরিস্থিতি নিয়ে জেলা তৃণমূল নেতৃ্ত্ব মুখে কুলুপ আঁটলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে জিতেন্দ্র তিওয়ারিকে শনিবার ভিডিয়ো বার্তা দিতে হয় তৃণমূল কর্মী উদ্দেশে। তিনি বলেন “গত তিনদিন ধরে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে তৃণমূল কর্মীদের একাংশ আবেগতাড়িত হয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন।” তিনি বলেন, “আমাকে যাঁরা ভালোবাসেন তারা এসব করবেন না। এসব করলে তৃণমূল কংগ্রেস কমজোর হবে। বদলার মনোভাব নিয়ে কিছু করলে দলের ক্ষতি হবে।”
আরও পড়ুন: ‘তোলাবাজ ভাইপো হঠাও’, বিজেপিতে যোগ দিয়েই সুর চড়ালেন শুভেন্দু
এই ঘটনাকে ‘যন্ত্রণাদায়ক’ স্মৃতি বলে আখ্যা দিয়ে একে ভুলে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন জিতেন্দ্র। তিনি সকলকে হিংসা থেকে বিরত থাকার বার্তা দেন। অন্যদিকে পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল ব্লক সভাপতিও নরেন চক্রবর্তীও পাল্টা ভিডিয়ো বার্তা দিয়ে বলেন, জিতেন্দ্র তিওয়ারি দল ছাড়ার পর ধারণা হয়েছিল তিনি বিজেপিতে যাচ্ছেন। তাই অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। পরে যখন জানলাম তিনি দলেই ফিরে আসছেন, তখন আমরা খুশি হলাম। তাই এই ঘটনার মধ্য দিয়ে যেন অশান্তির বাতারবরণ না ছড়ানোর আবেদন জানিয়ে ভিডিয়ো প্রকাশ করেন তিনি।
এদিন বার্নপুরে বেনামী কিছু পোস্টার দেখা যায়। যেখানে লেখা ছিল, জিতেন্দ্র তিওয়ারি হঠাও, আসানসোল বাঁচাও। কোথাও কোথাও বিজেপির নামাঙ্কিত এই পোস্টার দেখা যায়। তবে তৃণমূল নেতৃত্ব মুখে কিছু না বললেও কটাক্ষ করে সব থেকে বেশি চর্চা হয় ফেসবুকে। এই পরিস্থিতিতে বিজেপি সমর্থকদের দেখা যায় বাবুল সুপ্রিয় ও অগ্নিমিত্রা পালকে ধন্যবাদ জানাতে। জিতেন্দ্র তিওয়ারি বিজেপিতে যোগদান আটকে দেওয়ায় তাঁরা নেতৃত্বকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তবে রবিবার রাতে জিতেন্দ্র তিওয়ারি আসানসোল ফিরছেন বলে খবর। তাঁর অনুগামীরাও প্রস্তুত তাঁকে বরণ করে নেওয়ার জন্য বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের একাংশ।
আরও পড়ুন: ‘খবরদারি করব না, মাতব্বরিও করব না’, শাহি মঞ্চে আশ্বস্ত করলেন শুভেন্দু