আলিপুরদুয়ার: নিরাপত্তার অভাবজনিত কারণ খাড়া করে ডুয়ার্সের রামঝোড়া চা-বাগান ছেড়ে চলে গেল মালিকপক্ষ। ম্যানেজার সহ মালিকপক্ষের লোকেরা রাতারাতি বিনা নোটিসে ঝাঁপ নামালেন ব্যবসার। অনিশ্চিত হয়ে পড়ল রামঝোড়া চা-বাগানের ১১০৩ জন শ্রমিক ও কর্মচারীর ভবিষ্যৎ। আর তার মধ্যে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক দোষারোপের পালা।
জানা গিয়েছে, কয়েকদিন ধরে মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে ১০০ দিনের কাজ নিয়ে রেষারেষি চলছিল। এনিয়ে দু’ দিন আগে ডিবিআইটি অফিসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকও ডাকা হয়। কিন্তু তাতে যে কোনও কাজই হয়নি জানা গেল রবিবার। এভাবে হঠাৎই মালিকপক্ষ রামঝোড়া চা-বাগান ছেড়ে যাওয়ায় দুর্ভাবনায় শ্রমিক ও কর্মচারীরা। এদিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বারলা ওই চা বাগানে গিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন। আশ্বাসও দেন তাঁদের। সোমবার অবশ্য সাসপেনশন অব ওয়ার্কের নোটিস ঝুলিয়েছে মালিকপক্ষ।
বর্তমানে চা বাগানে শুখা মরসুম চলছে। এই সময় চা-বাগানে উৎপাদন বন্ধ। শুধুমাত্র বাগান পরিচর্যার কাজ এই সময় হয়। সূত্র মারফত খবর, বাগানের উৎপাদন বন্ধ থাকায় এখানে ১০০ দিনের কাজের মাধ্যমে বাগান পরিচর্যার কাজ চালাতে চায় মালিক পক্ষ। তারা শ্রমিকদের মজুরি কোম্পানি থেকে দিতে রাজি নয়। এদিকে শ্রমিকরা তাঁদের ন্যায্য মজুরি দাবি করেন। বকেয়া রয়েছে গ্র্যাজুয়িটি ও পেন্ডিং শ্রমিক নিয়োগ। এর মধ্যে কর্তৃপক্ষ বাগান ছেড়ে চলে যাওয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন শ্রমিকরা। যদিও বাগান বন্ধের বিষয়টি সরকারি ভাবে শ্রম দফতরকেও জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। সূত্রের খবর, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উদ্যেগ নিচ্ছে শ্রম দফতর।
এদিকে লক আউটের নোটিস কিংবা সাসপেনশনের নোটিস ঝোলানো হয়নি বলে দাবি করেছে শাসক দল। তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইক বলেন, “রামঝোড়া চা বাগানে কোনও সমস্যা নেই। বিজেপি অভিযোগ করছে। ওদের বিধায়ক, সাংসদ আছেন। কিন্তু কোনও কাজ ওঁরা করেন না। উলটে বিভ্রান্তি ছড়ান। প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে শাসক দলের নেতা বীরেন্দ্র বরা ওরাও এই বাগানের ম্যানেজমেন্ট চলে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। পাল্টা বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গার দাবি, “সরকার কোনওদিন কোন কিছুই দেখেনি। বাগানটির বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে। বাগান ছেড়ে ম্যানেজমেন্ট চলে গিয়েছে”। চা বাগানে এসে শ্রমিকদের সাথে কথা বলেন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বারলা ও মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক মনোজ টিগ্গা। টিগ্গা জানান বিনা নোটিসে কাউকে কিছু না জানিয়ে রামঝোরা চা বাগান ছেড়ে চলে গিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ। তাঁরা চান বাগান কর্তৃপক্ষ শ্রমিক সংগঠনের সাথে বসে আলোচনা করে সমস্যা সমাধান করুন।
এভাবে বাগান ছেড়ে যাওয়ায় নিন্দা করেছেন শ্রমিক নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, মতবিরোধ হতেই পারে। তা বলে এভাবে শ্রমিকদের অনিশ্চয়তার মুখে ফেলে চলে যাওয়া অভিপ্রেত নয়। ক্ষুব্ধ শ্রমিক মহলও। রামঝোড়া চা-বাগান নিয়ে শাসক ও বিরোধী দুই রাজনৈতিক দলের চাপানউতোর শুরু হয়েছে। সেই চাপান উতোরে অনিশ্চয়তায় ১১০৩ জন শ্রমিক।
আরও পড়ুন: Purba Medinipur: ১৫ হাজারি মাদুলিতে বাই-বাই করোনা! পুলিশের তাড়া খেয়ে ভ্যানিশ মাদুলিবাবা