আলিপুরদুয়ার: করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং ওমিক্রনের বাড়বাড়ন্তে চিন্তায় স্বাস্থ্য দফতর থেকে প্রশাসন। আশঙ্কা ও আতঙ্কে সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়তে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা শুরু করল আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে এই অ্যালকোহল বেস্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া,অধ্যাপক সহ অন্য স্টাফদের চাহিদা মিটিয়ে জেলার স্বাস্থ্য দফতরকেও এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিলি করা হবে। এমনকী আলিপুরদুয়ার শহর ও গ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যেও একেবারে বিনামূল্যে এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিলি করা হবে বলে জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতরও।
আলিপুরদুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডঃ মহেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন পাঠন বন্ধ থাকায় আমরা সিন্ধান্ত নিই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করব। তাই এদিন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ল্যাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি শুরু করা হয়। আমাদের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপকরা এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছেন। আগামী দিনে আমরা হ্যান্ড গ্লাভসও তৈরি করব”।
করোনার জন্য আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত স্কুল, কলেজের পঠন পাঠন বন্ধ রাখার নির্দেশ রয়েছে। তবে শিক্ষক,অধ্যাপকদের যথারীতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসতে হবে বলেও জানানো হয়েছে সরকারি নির্দেশিকায়। তাই মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসে সিন্ধান্ত নেন তাঁরা এই করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু কী ভাবে তা সম্ভব তা নিয়ে অধ্যাপকরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। পরে সিন্ধান্ত নেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ল্যাবলেটরিতে তাঁরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করবেন।
ওই স্যানিটাইজার তাঁরা নিজেদের ব্যবহারের জন্য রাখার পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এবং স্বাস্থ্য দফতরকেও বিলি করবেন। এর পরেই বুধবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ল্যাবে এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি শুরু করেন অধ্যাপকরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপিকা ডঃ রিঙ্কু চক্রবর্তী বলেন, “আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন মেনেই অ্যালকোহল বেস হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করছি। এই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের নাম রাখা হয়েছে ‘সেভ ডুয়ার্স।”
অধ্যাপক বিকাশ ডাকুয়া বলেন, “আমাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ৭৫ শতাংশ অ্যালকোহল আছে।এছাড়াও মেশানো হয়েছে অ্যালোভেরা ও নিমের সংমিশ্রণ। যা এই হ্যান্ড স্যানিটাইজারকে করে তুলেছে আরও কার্যকারী”।
প্রাথমিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপকরা প্রায় ২০ লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করেন। এবার থেকে প্রতিদিন ৫০ লিটার করে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন তাঁরা। এক লিটার হ্যান্ড স্যনিটাইজার তৈরি করতে প্রায় ৪৫০ টাকা খরচ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ফান্ড থেকেই তা বহন করা হচ্ছে বলে জানান অধ্যাপকরা। এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ছোটো ছোটো কন্টেনারে ভরা হবে। সেগুলিই বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, অধ্যাপক এবং স্টাফদের দেওয়া হবে।
এর পর উৎপাদিত হ্যান্ড স্যানিটাইজার সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করার জন্য আলিপুরদুয়ার পুরসভার হাতেও তুলে দেওয়া হবে। পাশাপাশি আলিপুরদুয়ার স্বাস্থ্য দফতরের হাতেও বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে তৈরি হ্যান্ড স্যানিটাইজার তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপার চিন্ময় বর্মন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়।