আলিপুরদুয়ার: এক্কেবারে ফিল্মি কায়দায় স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পনা করেছিলেন। প্রেমিকার সঙ্গে বসে গর্ভবতী বউকে খুনের ব্লুপ্রিন্ট তৈরি করেন। ভাবেননি অনাগত সন্তানের কথাও। বেড়ানোর নাম করে হাইওয়েতে স্ত্রীর গলার নলি কেটে খুন করেন স্বামী। সেখানেও সঙ্গী প্রেমিকা। আলিপুরদুয়ারের হাসিমারায় বধূ হত্যার পাঁচদিনের মাথায় বেরিয়ে এল বিস্ফোরক সব তথ্য। পুলিশি জেরায় নিজে খুনের কথা স্বীকার করলেন স্বামী।
প্রেমিকাকে ডেকে এনে নৃশংসভাবে ৮ মাসের গর্ভবতী স্ত্রীকে হত্যা করেন। তার পর নাটক করে নিজেকে জখম করে কোচবিহারের একটি নার্সিংহোমে ভর্তিও হয়ে যান। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের চোখে ধুলো দিলেও খুনের ৫ দিনের মাথায় পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন হাসিমারা জাতীয় সড়কের ধারে গৃহবধূ খুনের মূল অভিযুক্ত। তিনি আর কেউ নন, মৃতারই স্বামী একরামুল হক। তাঁর সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রেমিকা রাহেলা সুলতানাকেও। দু’জনকেই মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ার আদালতে তোলা হয়। গোটা ঘটনা জেনে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছে পুলিশও।
যা ঘটেছিল:
মঙ্গলবার থেকে ঠিক ৫ দিন আগে কালচিনি ব্লকের হাসিমারায় এশিয়ান হাইওয়ের ধারে গলার নলি কাটা অবস্থায় উদ্ধার হয় মজিদা বেগম নামে এক মহিলার দেহ। তবে ঘটনার পরদিনই আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশী জানান, “আমরা এটাকে আপাতত খুন, ছিনতাই হিসেবে দেখছি না। অন্যরকম ঘটনা সন্দেহ করছি”। তদন্তের জন্য ৩টি আলাদা টিম গঠন করা হয়। যার নেতৃত্বে ছিলেন জয়গাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুন্তল ব্যানার্জি।
তদন্তে যা বেরিয়ে এল:
স্বামীর পরকীয়ার বলি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী! সোমবার রাতে পুলিশের ম্যারাথন জেরার ভেঙে পড়ে নিজের কীর্তির কথা জানান একরামুল স্বীকার করে নেন বলে দাবি পুলিশের। তার পর তাঁর প্রেমিকা রাহেলা সুলতানাকেও গ্রেফতার করা হয়।
জানা যায়, গত ১৩ জানুয়ারি নিজের বিলাসবহুল গাড়িতে চেপে স্ত্রীকে নিয়ে কোচবিহারের ঘোকসাডাঙা থানার কুশিয়ারবাড়ি বেড়াতে বেরোন একরামুল। তার আগেই প্রেমিকাকে মাদারিহাট থেকে ডেকে এনেছিলেন। এশিয়ান হাইওয়ের ধারে সেদিনই সন্ধ্যাবেলা গাড়ির ভেতর হত্যা করা হয় তার স্ত্রীকে।
তবে টহলের দায়িত্বে থাকা পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় মজিদা বেগম ও একরামূল হককে উদ্ধার করে হাসিমারার বায়ু সেনা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে মজিদাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। জখম অবস্থায় একরামুল হককে ভর্তি করা হয় কোচবিহারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। ঘটনার তদন্ত চেয়ে পুলিশের কাছে লিখিত আবেদন জানায় মজিদার পরিবার। তবে একরামুলের ফাঁদা গল্প শুনে প্রথম দিন থেকেই রহস্যের গন্ধ পায় পুলিশ।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে দু’বছর আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হয় একরামুল ও রাহেলার। সেখান থেকে ঘনিষ্ঠতা। যা পরে পরকীয়ায় পরিণত হয়। স্ত্রীকে সরাতে প্রেমিকার সঙ্গে ছক করে খুন করেন স্বামী। মঙ্গলবার আলিপুরদুয়ার এসিজেএম আদালতে খুনে অভিযুক্ত প্রেমিক- প্রেমিকার পেশ করে সাত দিনের হেফাজতের আবেদন করে পুলিশ। ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে বলে জানিয়েছেন জয়গাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: China illegal bridge: প্রবল শীতে প্যাংগং হ্রদের উপর অবৈধ সেতু বানাচ্ছে চিন, ফুটে উঠল উপগ্রহ চিত্রে