বোলপুর: শান্তিনিকেতন আগের মতো নেই। বৃহস্পতিবার, সরস্বতী পুজোর বিকালে বিশ্বভারতীর আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রী ও অধ্যাপকদের সঙ্গে আলোচনার পর এমনই মন্তব্য শোনা গেল নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের মুখে। বিশ্বভারতীর বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। পাশাপাশি বিশ্বভারতীর জমি দখল করা নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, এদিন তারও জবাব দেন অমর্ত্য সেন।
জানা গিয়েছে, এদিন বিকেল ৩টে নাগাদ শান্তিনিকেতনে অমর্ত্য সেনের বাড়িতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বিশ্বভারতীর আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রী ও অধ্যাপকেরা। তাঁরা বিশ্বভারতীর বর্তমান পরিস্থিতি, অধ্যাপক, ছাত্রছাত্রীদের সাসপেন্ড করা সহ সামগ্রিক অবস্থার কথা তুলে ধরেন। সমস্ত ঘটনা শোনার পর বেশ উদ্বিগ্ন দেখায় নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনকেও। আক্ষেপের সুরে নোবেলজয়ী বলেন, “এটা (বিশ্বভারতী) পশ্চিমবঙ্গের একটা ঐতিহ্য ছিল। শান্তিনিকেতন আর আগের মতো নেই।” বিশ্বভারতীর বর্তমান সমস্যার সমাধান কী ভাবে হবে? তা নিয়েই বারবার প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বিশ্বভারতীর পরিস্থিতির পাশাপাশি জমি-বিতর্ক নিয়ে তাঁকে নোটিশ পাঠানোর প্রসঙ্গ উঠে এলে ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য করেন অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন, “অনেকেই আমাকে পছন্দ করেন না। তাঁরাও এর পিছনে থাকতে পারে।” তবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বর্তমানে যে দাবি জানাচ্ছে, বিশ্বভারতীর জমি অমর্ত্য সেনের বাড়ির মধ্যে ঢুকে গিয়েছে বলে যে অভিযোগ তুলেছে, তার কোনও ভিত্তি নেই বলেও দাবি জানান অমর্ত্য সেন। তিনি বলেন, “এই বাড়ির কিছুটা অংশ বিশ্বভারতীর লিজ নেওয়া জমি এবং পরে বাকিটা অংশ কেনা হয়েছে।”
তবে জমি-বিতর্ক নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাতে নারাজ ৯০-এর দোরগোড়ায় পৌঁছনো নোবেলজয়ী। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “আমি নিজে উপাচার্যের বাড়ি গিয়ে বলতে পারতাম যে, এই বাড়ি আমার পিতামহ কিনেছিলেন এবং মাপজোক করাতে চাই।” এখন আর তিনি বিষয়টি নিয়ে আদালতে ছুটতে চান না। তবে আইনি জবাব দেবেন বলেও জানিয়েছেন। অমর্ত্য সেনের কথায়, “আগেও যেমন আইনতভাবে উত্তর দেওয়া হয়েছিল, এবারেও আবার আমার আইনজীবী মারফৎ উত্তর দেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরেই বিশ্বভারতীতে আন্দোলন চালাচ্ছেন ছাত্র-ছাত্রী ও অধ্যাপকদের একাংশ। বিভিন্ন ইস্যুতে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে তাঁরা বারবার সরব হয়েছেন। আর এবার অমর্ত্য সেনের সঙ্গে দেখা করেও বিশ্বভারতীর সামগ্রিক বিষয়বস্তু তুলে ধরলেন তাঁরা।