বিষ্ণুপুর: মল্ল রাজাদের হাত ধরে আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে প্রাচীন মল্লগড়ে শুরু হয়েছিল রথ উৎসব। সাড়ে তিনশো বছর পরেও বিষ্ণুপুরের সেই রথকে ঘিরে মল্লভূমবাসীর উন্মাদনায় ভাটা পড়েনি এতটুকুও। সাড়ে তিনশো বছরের রীতি মেনে রবিবার রথযাত্রার দিন সাতসকালে বিষ্ণুপুরে রথের রশিতে টান দিলেন অগণিত ভক্তদের দল।
বিষ্ণুপুরে রথ উৎসবের সূচনা আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর আগে। শোনা যায়, ১৬৬৫ সালে বিষ্ণুপুরের তৎকালীন মল্লরাজা বীর সিংহ, রানি শিরোমনির ইচ্ছাপূরণে মল্লগড় বিষ্ণুপুর শহরের মাধবগঞ্জ এলাকায় মাকড়া পাথরের মদন গোপাল মন্দির নির্মাণ করান। সেই মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত হয় রাধা মদন গোপাল জিউয়ের বিগ্রহ। রাজ আনুকূল্যে এই মন্দিরের আদলেই পিতলের সুবিশাল রথ তৈরি করে শুরু হয় রথযাত্রা। সাড়ে তিনশো বছর পেরিয়েও যে রথযাত্রা উৎসবের চেহারা অমলিন।
সুপ্রাচীন রীতি মেনে এদিন সকালে মদন গোপালের মন্দির থেকে একদফা পুজো পাঠ করে রাধা মদন গোপাল জিউয়ের বিগ্রহ কীর্তন ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে শোভাযাত্রা করে নিয়ে আসা হয় রথে। সেখানে আরেক প্রস্থ চলে পুজো পাঠ। এরপর রথের রশিতে টান দেন উপস্থিত অগনিত ভক্ত ও মল্লভূমের মানুষ। বিষ্ণুপুরের রথের মূল বিশেষত্ব হল এই রথে কৃষ্ণ, বলরাম ও সুভদ্রা নয় রথে সওয়ার হন রাধা মদন গোপাল জিউ।
মল্ল রাজারা নেই। কালের নিয়মে হারিয়ে গেছে তাদের রাজত্বও। কিন্তু মল্ল রাজাদের হাতে শুরু হওয়া বিষ্ণুপুরের রথযাত্রা উৎসব আজো আছে নিজের অটুট গরিমা আর আবেগ নিয়ে। রথযাত্রার সাত সকালে যে বিষ্ণুপুর বাসীর আবেগ আছড়ে পড়ল রাধা মদন গোপাল জিউয়ের মন্দির চত্বরে। পাশাপাশি এদিন বিষ্ণুপুরে সোজা রথের সাথে সাথেই শুরু হয়ে গেল উল্টো রথের কাউন্টডাউন।