বাঁকুড়া: উপত্যকায় মর্মান্তিক ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিন সেনা জওয়ান। বরফে চাপা পড়েই মৃত্যু হয়েছে তাঁদের। সেই তিনজনর মধ্যে রয়েছেন বাঁকুড়ার সৌভিক হাজরা। শুক্রবার তুষারঝড়ে গুরুতর আহত হন সৌভিক। পরে তাঁকে সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনায় সৌভিকের পরিবারের শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শুক্রবার জওয়ানরা যখন এলাকায় টহলদারি চালাচ্ছিলেন, তখন আচমকাই তুষার ধস নামে। দুর্ঘটনায় নিমেষের মধ্যে বেশ কয়েকজন চাপা পড়ে যান। বাকিদের উদ্ধার করা সম্ভব হলেও তিনজন জওয়ানকে প্রথমে উদ্ধার করা যায়নি। পরে তাঁদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
কাশ্মীরের মাচাল সেক্টরে টহল দেওয়ার সময় ওই ঘটনা ঘটে। রাতে হাসপাতালে ২১ বছর বয়সী সৌভিকের মৃত্যু হয়। শনিবার সকালে মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছয় বাঁকুড়ার ওন্দা থানার খামারবেড়িয়া গ্রামে সৌভিকের বাড়িতে। সৌভিকের মৃত্যুসংবাদ পৌঁছাতেই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা গ্রাম।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌভিকের যখন বয়স মাত্র পাঁচ মাস, তখনই তাঁর মা দিপালী হাজরা অসুস্থ হয়ে মারা যান। তারপর থেকে সৌভিক খামারবেড়িয়া গ্রামে মামার বাড়িতেই বড় হয়েছেন। কোলে পিঠে করে তাঁকে বড় করে তোলেন দিদিমা বাসন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১৯ সালে ওন্দা থানা মহাবিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময়ই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন সৌভিক।
প্রথমে নাসিকে প্রশিক্ষণ চলে তাঁর। পরে পাঞ্জাবে, অসমে কাজ দায়িত্ব পান। শেষে কাশ্মীরে নিযুক্ত হন তিনি। চলতি বছরের পুজোর আগে এক মাসের ছুটি নিয়ে খামারবেড়িয়া গ্রামে এসেছিলেন তিনি। পুজোর ছুটি কাটিয়ে ভাইফোঁটার দিন তুতো দিদি ও বোনেদের কাছ ভাইফোঁটা নিয়ে সেদিনই কাশ্মীরে ফিরে যান সৌভিক।
শুক্রবার সন্ধ্যাতেও কাশ্মীর থেকে ভিডিয়ো কলে পরিবারের সঙ্গে বলেন তিনি। খামারবেড়িয়া গ্রামের মানুষ এখনও যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না হাসিখুশি সৌভিকের এই মর্মান্তিক খবর।
জানা গিয়েছে শনিবারই সৌভিকের কফিনবন্দী দেহ বিমানে আনা হতে পারে দমদম বিমানবন্দরে। সেখান থেকে দেহ নিয়ে যাওয়ার কথা খামারবেড়িয়া গ্রামে। গ্রামের মানুষ এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সৌভিককে শেষবার দেখার জন্য।