বাঁকুড়া: শিশু পাচারের অভিযোগে বাঁকুড়ার কালাপাথর এলাকার এক স্কুলের অধ্যক্ষ-সহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এদিকে ধৃতদের জেরা করে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে উঠে আসছে তদন্তকারীদের।
পুরুলিয়া রোডে ২৭ একর জমির উপর রয়েছে জওহর নবোদয় বিদ্যালয়। এটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ। এখানে থেকে পড়াশোনা করারও ব্যবস্থা রয়েছে। এই স্কুলের সামনে থেকেই গত রবিবার দুপুরে হাতেনাতে স্কুলের অধ্যক্ষকে শিশু পাচারের সময় ধরা হয় বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে স্কুলের এক কর্মী-সহ আরও কয়েকজনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতার করা হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রবিবার দুপুরে রাস্তার ধারে একটি মারুতি ওমনি ভ্যান দাঁড়িয়ে ছিল। তার ভিতর দুই শিশু কন্যা বসে কাঁদছিল। দু’জনের বয়স ৪ থেকে ৬ বছরের মধ্যে বলেই জানান স্থানীয়রা। সঙ্গে আরও তিন শিশু ছিল। এদিকে ওই গাড়ির সামনে তখন নবোদয়ের অধ্যক্ষও দাঁড়িয়েছিলেন। যা দেখে হইচই শুরু হয়। এরপরই পুলিশ এসে অধ্যক্ষ কেকে রাজোরিয়া-সহ ৮ জনকে গ্রেফতার করে।
পুলিশের দাবি, জেরার মুখে বাকি অভিযুক্তরা শিকার করেছেন অধ্যক্ষের নির্দেশেই শিশু পাচার করা হচ্ছিল। প্রসঙ্গত, কেকে রাজোরিয়া ছাড়া বাকি ধৃতদের অধিকাংশের বাড়িই দুর্গাপুরের কাদা রোডে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। কাদা রোড মূলত নিষিদ্ধ পল্লি এলাকা। অর্থাৎ শিশু পাচারের সঙ্গে এই নিষিদ্ধ পল্লি যোগের অভিযোগও উঠতে শুরু করেছে। তেমনটা সত্যি হলে ভয়ঙ্কর মোড় নেবে এই শিশু পাচারের অভিযোগ।
এমনও হতে পারে শিশুদের নিষিদ্ধ পল্লিতে বিক্রি করার পরিকল্পনা ছিল। কিংবা তার মাধ্যমে অন্যত্র দেহ ব্যবসার জন্য পাঠানোর সম্ভাবনাও ভিত্তিহীন নয়। ইতিমধ্যে পাঁচজন শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তা জানতে তদন্ত চলছে।
তদন্তের আরও একটি অভিযোগ সামনে এসেছে। এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন সুষমা শর্মা ও তাঁর স্বামী ব্যাঙ্ককর্মী সতীশ ঠাকুর। সুষমা ওই স্কুলেরই শিক্ষিকা। নবোদয়ের ভিতরেই থাকতেন তাঁরা। অভিযোগ, এই দম্পতির কাছ থেকে ৯ মাসের একটি শিশুপুত্রকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়াও ধৃত গাড়ির চালক সাগর বাদ্যকর, স্বপন দত্ত বলে দুর্গাপুরের কাদা রোডের চা দোকানের মালিক। স্বপন দত্ত পাচারের এজেন্ট ছিল বলে মনে করছে পুলিশ। ধৃত সুনীতা বাদ্যকর, রিয়া বাদ্যকর, দেব বাদ্যকর নামের তিনজন দুর্গাপুরের কাদা রোডের বাসিন্দা।
রবিবার রিয়া বাদ্যকর নামে এক তরুণীকে পাকড়াও করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই এই সুষমা ও সতীশের কথা জানতে পারে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা দিয়ে এই শিশুটিকে কিনেছিলেন নিঃসন্তান দম্পতি সুষমা ও সতীশ। অভিযোগ, অর্থের বিনিময়ে এই শিশু নেওয়ার প্রক্রিয়ায় মূল মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় ছিলেন অধ্যক্ষ রাজোরিয়া।
তদন্তে জানা গিয়েছে অধ্যক্ষের কোয়ার্টারে দুই শিশুকন্যা ছিল। এদিকে সেখানে অধ্যক্ষ একাই থাকতেন। দুই শিশুর একজনের বয়স চার অন্যজন ছয়। এত ছোট বাচ্চা দেখে সন্দেহ হয়েছিল স্কুল কর্মীদেরও। কারণ, এই স্কুলে ১২ বছরের পর বাচ্চারা ভর্তি হয়। যদিও প্রিন্সিপ্যাল ওই দুই শিশুকন্যাকে আত্মীয়ের বাচ্চা বলে পরিচয় দেন বলে অভিযোগ। অর্থাৎ এই শিশু পাচারের ঘটনার প্রতি পরতে যে নয়া মোড় অপেক্ষা করছে তা বলাই বাহুল্য।
Murky stories of @BJP4Bengal doesn’t seem to end!
Principal of Jawahar Navodaya Vidyalaya, Bankura has been accused in a child trafficking case. Alarming connection with BJP MP @Drsubhassarkar! Does BJP give shelter to such known criminals?!
See it to believe it ?? pic.twitter.com/72vFRye53F
— Dr. Shashi Panja (@DrShashiPanja) July 18, 2021
ইতিমধ্যেই শিশু পাচারকাণ্ডে বিজেপি যোগের সম্ভাবনা তুলে ধরে টুইট করেছেন রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকারের সঙ্গে অধ্যক্ষের একই মঞ্চের ছবিও টুইট করেছেন তিনি। বাঁকুড়া-১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি সন্দীপ বাউড়ির দাবি, “এই অধ্যক্ষ তো যে সমস্ত বাড়িতে সুন্দরী মহিলা রয়েছে সেখানেই চা খেতে যেতেন। এলাকার বিজেপি নেতাদের সঙ্গেও বেশ ভাল যোগাযোগ ছিল। আমার তো মনে হয় সুভাষ সরকার কেন্দ্রের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হওয়ার পর এই অধ্যক্ষের সাহসটাও বেড়েছিল।”
যদিও এ বিষয়ে বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “এ নিয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। আইন আইনের পথে চলবে। কিন্তু কারও সঙ্গে কারও ছবি নিয়ে কাউকে বিজেপি কর্মী বানিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। তিনি দোষী নাকি নির্দোষ আমার জানা নেই। দলেরও জানা নেই। তবে টুইট করে যিনি বলছেন সুভাষ সরকারের সঙ্গে ধৃতের ছবি আছে, এরকম ছবি তো অনেকেরই থাকে।” আরও পড়ুন: ২১ জুলাইয়ের মঞ্চে বক্তব্য রাখবেন মমতা, অনলাইনে ভেসে উঠবে ‘জাগো বাংলা’র নতুন কলেবর