বাঁকুড়া: রাজ্য জুড়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। কিন্তু বাঁকুড়ার শুশুনিয়া পাহাড়ে বর্ষ শেষ ও নববর্ষের আনন্দ উপভোগ করতে আসা পর্যটকদের বেশিরভাগেরই মুখে মাস্ক নেই। শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার বিন্দুমাত্র চেষ্টাও নেই তাঁদের মধ্যে । মাস্ক ছাড়াই দেদার চুটিয়ে চলছে পিকনিক, আড্ডা , রান্নাবান্না , পাহাড়ে চড়া। কেন মাস্ক নেই তা জিজ্ঞাসা করতেই নিজের মতো সাফাই দিচ্ছেন পর্যটকেরা।
সংক্রমণের গ্রাফ প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে লাফিয়ে লাফিয়ে । বৃদ্ধি পাচ্ছে নমুনা পরীক্ষার পজিটিভিটির হারও। সম্প্রতি স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে পাওয়া খবরে, রাজ্যের ৬ জেলার পজিটিভিটি হারকে রীতিমত অ্যালার্মিং বলে উল্লেখ করে। ওই ৬ জেলাকে সতর্ক করে নমুনা পরীক্ষার হার দ্রুত বৃদ্ধির নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর । এই ৬ জেলার মধ্যে একেবারে শীর্ষে থাকলেও বাঁকুড়া জেলায় নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে একেবারে হাতেগোনা ।
পরিসংখ্যান বলছে, বাঁকুড়া জেলায় সরকারি ভাবে সংগ্রহ করা নমুনা পরীক্ষার পরিকাঠামো রয়েছে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজে । ওই কলেজে থাকা একাধিক আরটিপিসিআর যন্ত্রে প্রতিদিন ১২০০ র বেশি নমুনা পরীক্ষার পরিকাঠামো রয়েছে । কিন্তু সরকারি ভাবে আসা নমুনার অভাবে গড়ে ৫০০ টি নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে । সরকারি হিসাব বলছে, বাঁকুড়া স্বাস্থ্য জেলা থেকে প্রতিদিন যেখানে ৬০০ টি বা তার বেশি নমুনা পাঠানোর কথা, সেখানে ওই স্বাস্থ্য জেলা থেকে নমুনা আসছে গড়ে ৫০ টির আশপাশে ।
অপেক্ষাকৃত ছোট স্বাস্থ্য জেলা হিসাবে পরিচিত বিষ্ণুপুর থেকে যেখানে ৩০০ বা তার বেশি নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে সেখানে বাঁকুড়া স্বাস্থ্য জেলার হাল অত্যন্ত খারাপ। স্বাস্থ্য দফতর থেকে পাওয়া সূত্রে গত ২৯ ডিসেম্বর বাঁকুড়া স্বাস্থ্য জেলা থেকে মাত্র ৩ টি ও ৩০ ডিসেম্বর মাত্র ৫৭ টি নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে । সরকারি ভাবে নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য বাঁকুড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি নির্দেশ দিয়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনও । কিন্তু তারপরও কেন এমন অবস্থা! বাঁকুড়া জেলা মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ঘুরে ঘুরে নমুনা সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় গাড়ি ও জ্বালানির অভাব এর প্রধান কারণ । পাশাপাশি সাম্প্রতিক কালে নমুনা পরীক্ষার প্রতি সাধারণ মানুষের অনীহাও কাজ করেছে বলে দাবি করেছে বাঁকুড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর । তবে স্বাস্থ্য দফতরের আস্বাস দ্রুত নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য ইতিমধ্যেই প্রতিটি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
বাঁকুড়ার স্বাস্থ্য জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শ্যামল কুমার সোরেন বলেন, “আমাদের টেস্ট কম হয়েছে। কারণ নমুনা সংগ্রহ কম হয়েছে। আমাদের গাড়ির সমস্যা ছিল। পরবর্তীতে সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে ইচ্ছারও অভাব ছিল। সচেতনতার অভাব ছিল। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখত না। এবার ব্লকগুলিকে কড়াভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
আরও পড়ুন: কাশীপুর উদ্যানবাটিতে ভক্তশূন্যভাবেই পালিত হচ্ছে কল্পতরু উৎসব