বাঁকুড়া: রাজ্যের সাত জেলায় আগেই সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই ডিভিসির ছাড়া জলে ফুঁসছে দামোদর নদ। ফাটল দেখা দিয়েছে দামোদর নদের তীরে থাকা সোনামুখী ব্লকের সমিতি মানা এলাকা লাগোয়া নদী বাঁধে। বন্যায় সব হারানোর আশঙ্কায় প্রহর গুনছেন জেলার সোনামুখী, ইন্দাস ও পাত্রসায়ের ব্লকের হাজার হাজার মানুষ। কংসাবতীর মুকুটমণিপুর থেকে ছাড়া জলেও তৈরি হয়েছে বন্যার ভ্রুকুটি।
শুক্রবার থেকে টানা বৃষ্টিতে ফুঁসছে বাঁকুড়ার দ্বারকেশ্বর,কংসাবতি,শিলাবতী,গন্ধেশ্বরী সহ সবকটি নদী। বুকে কাঁপন ধরাচ্ছে ডিভিসির দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে ছাড়া জল। সোমবার থেকে দুর্গাপুর ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ ক্রমাগত জল ছাড়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করায় বন্যার আশঙ্কায় রাতের ঘুম উড়েছে বাঁকুড়ার সোনামুখী, ইন্দাস ও পাত্রসায়ের ব্লকের বিস্তীর্ণ নিচু এলাকায়।
ইতিমধ্যেই দামোদরের জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় তা ছুঁয়ে ফেলেছে সোনামুখীর সমিতি মানা এলাকায় থাকা মাটির কাঁচা বাঁধ। বাঁধের গা বেয়ে সেই জলস্তর বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। বাঁধের বিভিন্ন জায়গায় দেখা দিচ্ছে ফাটল ও ছিদ্র। তড়িঘড়ি সেই ফাটল ও ছিদ্র মেরামতে নেমেছে প্রশাসন।
কিন্তু দামোদরের গর্ভে যেভাবে জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে মাটির বাঁধ কতক্ষণ রক্ষা করা যাবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। এদিকে কংসাবতী নদীর মুকুটমণিপুর জলাধার থেকেও ক্রমাগত জল ছাড়ায় নিচে এলাকাগুলিতে জল ঢোকার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। জেলার বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন।
ইতিমধ্যেই জেলার প্রতিটি ব্লকের প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। সমিতি মানা এলাকায় থাকা মাটির বাঁধে ২৪ ঘণ্টা নজরদারি চালাচ্ছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। ইতিমধ্যেই জেলায় ১২ টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। শিবিরগুলিতে আশ্রয় নিয়েছেন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ। মজুত রাখা হয়েছে যথেষ্ট ত্রাণ সামগ্রী। নদী তীরবর্তী এলাকা থেকে দুর্গত মানুষদের উঁচু জায়গায় স্থানান্তর করা হচ্ছে।
সতর্কতার জন্য নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিতে নাগাড়ে চলছে মাইক প্রচার। আপৎকালীন উদ্ধার কাজের জন্য তৈরি রাখা হয়েছে ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট গ্রুপকে। বিদ্যুৎ দফতর,জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সহ সমস্ত দফতরের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা।সবমিলিয়ে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নামতে প্রস্তুত জেলা প্রশাসন।
স্থানীয় বাসিন্দা গোবিন্দ চৌধুরী বলেন, “বন্যা আসার আগে সাইডে যাতায়াত করা যাচ্ছিল। কয়েকদিন আগে জলে পড়ে গিয়ে দুজন মারা যায়। এখন ঘুরে ঘুরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। খুবই সমস্যা হচ্ছে। বাড়ি ঘরে জল ঢোকার আশঙ্কা রয়েছে।”