বাঁকুড়া: কলকাতার একাধিক সরকারি হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজে ইতিমধ্যেই হানা দিয়েছে কোভিড। জেলা হাসপাতালগুলিতেও ক্রমেই সেই ছবি প্রকট হচ্ছে। এবার বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। হাসপাতালে কর্মরত একাধিক চিকিৎসক, নার্স করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য পরিষেবাকে যথাযথভাবে ধরে রাখাই সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ কর্তৃপক্ষের।
গোটা রাজ্যেই বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সিংকর্মীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় উদ্বেগে স্বাস্থ্য দফতর। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হল বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নামও। গত কয়েকদিনে এই হাসপাতালের ১৫ জন চিকিৎসক ও ১৯ জন নার্সিংকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর।
চিকিৎসক, নার্সিংকর্মী ও চিকিৎসাকর্মীদের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় শনিবার সকাল থেকে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজে স্যানিটাইজেশনের কাজ শুরু করেছে দমকল বিভাগ। সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে ইতিমধ্যেই হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে বাঁশ দিয়ে ব্যারিকেড করে সাধারণের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, এভাবে হাসপাতালের কোভিড যোদ্ধারা করোনায় আক্রান্ত হতে থাকলে সেক্ষেত্রে হাসপাতালের পরিষেবাতেও প্রভাব পড়তে পারে।
এ প্রসঙ্গে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তরুণকুমার পাঠক বলেন, “কোভিডের যে তৃতীয় ঢেউ বলছি তাতে আমাদের মেডিকেল কলেজে জানুয়ারি মাসে এখনও পর্যন্ত ১৫ জন ডাক্তারবাবু আক্রান্ত হয়েছেন, নার্সিং স্টাফ আক্রান্ত হয়েছেন ১৯জন। এর মধ্যে একজন ডেপুটি নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট আছেন। এই অবস্থায় যাঁদের হোমের আইসোলেশন সম্ভব, তাঁদের আমরা নিভৃতবাসে থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। যাঁদের আমাদের কাছে রেখে চিকিৎসা বা দেখাশোনার ব্যাপার রয়েছে তাঁদের জন্য আমরা একটা ওয়ার্ডে ২০-২৫ জনের ব্যবস্থা করতে পেরেছি। আগামিদিনে হয়তো আমাদের এই পরিকাঠামো বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে , সেটাও আমরা নজরে রেখেছি। একটা জায়গা নজরেও রয়েছে। তবে যেটা জেলার সেফ হোম সেখানে আমাদের হাসপাতাল থেকে কোনও স্বাস্থ্যকর্মী যাননি।”
তরুণকুমার পাঠকের কথায়, “আমাদের এখানে যাঁরা কোভিড পজিটিভ রোগী আছেন, তাঁদের আমরা সবরকম পরিষেবা দিচ্ছি। তবে এবার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে হোম আইসোলেশনে থেকেই শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়ে যাচ্ছে। সে জন্য অতটা বেড আমাদের এখনই লাগছে না। তবে আমরা তৈরি থাকছি। বর্তমানে ১০০ বেড আমরা তৈরি রেখেছি। আগামিদিনে ২০০ পর্যন্ত তা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।”
কিন্তু বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ তরুণকুমার পাঠকেরও একটাই আশঙ্কা, এই হারে চিকিৎসক, নার্স কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হলে পরিষেবা কারা দেবেন! এ প্রসঙ্গে চিকিৎসক তরুণকুমার পাঠক বলেন, “মুশকিল একটাই! যদি এই হারে ডাক্তার, সিস্টার বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা ক্রমশ পজিটিভ বেরোতে থাকেন, তা হলে আমাদের পরিষেবার ক্ষেত্রে সঙ্কট দেখা দিতে পারে। সেই জন্য আমরা নিজের মধ্যে আলোচনা করে কিছু ব্যবস্থাও নিচ্ছি। যেমন ওয়ার্ড, হাসপাতাল ক্যাম্পাস অনবরত স্যানিটাইজ করছি। এই স্যানিটাইজেশনের জন্য বাঁকুড়ার অগ্নিনির্বাপণ বিভাগ খুবই সহযোগিতা করছে। তারা এগিয়ে এসেছে। হোস্টেল থেকে সর্বত্র আমরা নিয়মিত স্যানিটাইজ করছি।”