বাঁকুড়া:গতকাল ভারত বনধ ডেকেছিল মাওবাদীরা। তাদের ডাকা বনধের মিশ্র প্রভাব পড়েছিল জেলায়। কয়েক জায়গায় দোকানপাট খোলা থাকলেও, বন্ধ অনেক দোকানও দেখতে পাওয়া যায়। এরপর গতকাল রাতে একটি ব্যাগকে ঘিরে বোমাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়।
জঙ্গলমহলের সারেঙ্গা থানা এলাকার পিরোলগাড়ি মোড়। সেইখানে সন্ধে নাগাদ একটি হোটেলের সামনে ব্যাগ পড়ে থাকতেন দেখেন এলাকাবাসী। ব্যাগটির মালিক কে? সেই নিয়ে শুরু হয় জোর জল্পনা। সন্ধে গড়িয়ে রাত হলেও সন্ধান মেলে না মালিকের। ব্যাস! এরপর খানিকটা নিশ্চিত হয়ে পড়ে সেখানে উপস্থিত মানুষজন। তারা ধরেই নেন যে ওই ব্যাগটিতে রয়েছে বোমা। ততক্ষণে হইচই শুরু হয়ে যায় গোটা এলাকায়। খবর দেওয়া হয় বোমস্কোয়াড ও পুলিশে।
ইদানিং জেলায় ফের সক্রিয় হয়েছে মাওবাদী কার্যকলাপ। এখানে-সেখানে অনেক পোস্টারও পড়েছে এর আগে। গতকাল ছিল আবার ভারত বনধ। কয়েকবছর আগে ঠিক এইরকমই দিনে ওই পিরোলমোড় এলাকায় এক পুলিশ কর্মীকে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেয় মাওবাদীরা। সেই স্মৃতি ফের টাটকা হয়ে যায় সকলের। যার জেরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগে না।
কী ঘটেছিল অতীতে?
সালটা ২০০৮। বাম সরকারের আমল। তখন জেলায় মাওবাদী কার্যকলাপ চরমে। সারেঙ্গা থানার এই হোটের সামনেই কর্তব্যরত ছিলেন এক পুলিশ আধিকারিক। দিনে-দুপুরে সেই পুলিশ কনস্টেবলকে গুলি করে চলে যায় মাওবাদীরা। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। অঝোরে চলে যায় একটি তাজা প্রাণ।
এদিকে, ব্যাগটির খবর জানতে পেরেই খোঁজ চালানো হয় ব্যাগ মালিকের। পুলিশের টহলদারি ভ্যান ঘটনাস্থলে যায়। এলাকায় আসে বম স্কোয়াডও। তবে ব্যাগের চেন খুলতেই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন প্রত্যেককে। কারণ ব্যাগটি ছিল খালি। কোনও বোমাই মেলেনি সেখান থেকে। তবে কে ওই ব্যাগ ওইখানে রাখল সেই বিষয়ে খোঁজ চলে রাতভর। এরপর আজ সকালে খোঁজ মেলে ব্যাগ মালিকের। তিনি নাকি ভারি বলে ব্যাগটি ওইখানে রেখে গিয়েছিলেন। ব্যাগের মালিক বলেন, “ব্যাগটি আমার। আমার ভাইপোকে ব্যাগটি দিয়েছিলাম নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমার ভাইপো ব্যাগটি নিয়ে যায়নি। আমি হায়দরাবাদ থেকে সবে ফিরছি। ব্যাগটা খুব ভারী ছিল। সেই কারণে ব্যাগটা ওইখানে রেখে দিয়েছিলাম।”
এই এলাকায় রয়েছে একাধিক সিসিটিভি ক্যামেরা। তা সত্বেও সেগলি খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে। প্রশাসনকে বারবার অভিযোগ করলেও কোনও রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে খবর।
উল্লেখ্য, গতকাল মাওবাদীদের ডাকা ভারত বনধে বাঁকুড়া জঙ্গলমহল জুড়ে। জেলার রানিবাঁধ, বারিকুল, ঝিলিমিলি,ফুলকুশমা জঙ্গলমহলের এই বিস্তীর্ণ এলাকায় প্রভাব পড়ে। কিছু কিছু দোকানপাট খোলা থাকলেও বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ। সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ। বেসরকারি বাস রাস্তায় নামতে দেখা যায়নি। দু একটি ছোট গাড়ি চলেছে বলে খবর। এলাকার মানুষরা আতঙ্কে রয়েছেন। এর আগে শেষ এই বনধ হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকারের আমলে তারপর আবার গতকাল বনধ দেখলো জেলা।
আরও পড়ুন: Dengue: চাগিয়ে খেলছে ডেঙ্গু! সাতদিনে রাজ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭৪৭, কলকাতাতেই ২৭৩