বাঁকুড়া: ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে (Post Poll Violence) ক্রমেই জাল গুটিয়ে আনছে সিবিআই (CBI)। সোমবার ফের ইন্দাসে গেলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের প্রতিনিধি দল। এদিন নাড়রা গ্রামের বিজেপি কর্মী অরূপ রুইদাসের রহস্য-মৃত্যুর ঘটনায় ইন্দাসের ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি শেখ হামিদকে তলব করে সিবিআই। চলে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ।
সিবিআই ও পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি প্রতিনিধি দল নাড়রা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃণমূল নেতা শেখ হামিদকে ডেকে পাঠান। শেখ হামিদ ছাড়াও আরও ২০ জন তৃণমূল কর্মীকে এদিন জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হয়। গত ৫ মে বিজেপি কর্মী অরূপ রুইদাসের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
প্রসঙ্গত, নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরেই গত ৫ মে নাড়রা গ্রামের বিজেপি কর্মী ও দলীয় বুথ এজেন্ট অরূপ রুইদাসের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়, খণ্ডঘোষ থানার একটি মাঠ থেকে। বিজেপি কর্মীর এ হেন অকস্মাত্ মৃত্যুতে স্বাভাবিকভাবেই তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে পদ্ম শিবির। সোমবার, মৃত অরূপের বাড়িতে গিয়ে তাঁর পরিজনের সঙ্গে দেখা করেন তদন্তকারীরা। এছাড়াও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দেখেন।
এর আগে গত অগস্টেও ইন্দাসে তদন্তে এসেছিলেন সিবিআই কর্তারা। সোমবারের পর এ নিয়ে দ্বিতীয়বার নাড়রা গ্রামে এলেন তাঁরা। এদিন, সিবিআই জিজ্ঞাসাবাদের পরে তৃণমূল নেতা শেখ হামিদ অবশ্য এ বিষয়ে বিশেষ মুখ খুলতে চাননি। অন্যদিকে বিজেপি বিধায়ক নির্মল ধারা বাঁকুড়া জেলা বিজেপির সভাপতি সুজিত অগস্তিকে প্রশ্ন করা হলে তাঁরাও কিছু বলতে চাননি।
উল্লেখ্য, রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) সুপারিশকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল রাজনৈতিক তরজা। পক্ষপাতিত্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। কিন্তু, সেই মামলায় জোর ধাক্কা খেয়েছে রাজ্য সরকার। ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাগুলির তদন্তভার তুলে দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর হাতে। অন্যদিকে, বাকি হিংসার ঘটনার তদন্তের জন্য রাজ্য পুলিশের তিন সদস্যের একটি সিট গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে ওঠে রাজ্য সরকারের জন্য। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন নিজের রিপোর্টে উল্লেখ করে, এ রাজ্যে আইনের শাসন নেই, শাসকের আইন রয়েছে। যা তীব্র অস্বস্তির মধ্যে ফেলে রাজ্যকে। কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তের থেকেও মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টই যেন গলার কাঁটা হয়ে ফুটছে। যে কারণে গোটা মামলায় হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয় রাজ্য সরকার।
ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় ইতিমধ্যেই প্রায় চারটি চার্জশিট দাখিল করেছে সিবিআই। শুক্রবার সেই চার্জশিটের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৫টি। বেড়েছে মামলার সংখ্যাও। আরও ৩ টি এফআইআর রুজু করেছে সিবিআই। মামলার সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৫। ভোট পরবর্তী হিংসার তদন্তে মোট ৮৪ জন তদন্তকারী অফিসার বা আইও-র মধ্যে ইন্সপেক্টর, ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার রয়েছেন। এছাড়া ২৫ জন কর্তা রয়েছেন এই দলে। জয়েন্ট ডিরেক্টর, ডিআইজি, এসপি পদমর্যাদার এই ২৫ জন অফিসার।
প্রত্যেক জোনের টিমে ২১ জন করে তদন্তকারী অফিসার বা আইও। বেশিরভাগ ডিআইজি ও এসপি পদমর্যাদার কর্তা। রাজ্যে ১৫ টি খুন এবং ৬ টি ধর্ষণের মামলায় ২৭ অগাস্ট ১১টি এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই। খুন, খুনের চেষ্টা, বেআইনি অস্ত্র রাখা, অপহরণ, অনুপ্রবেশের মতো একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআরগুলি দায়ের করা হয়। ইতিমধ্যেই হিংসা মামলার তদন্তে হাইকোর্টে মুখবন্ধ খামে স্ট্যাটাস রিপোর্ট জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
আরও পড়ুন: বেছে বেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে নাম! তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে সরব দল-ই