বেছে বেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে নাম! তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে সরব দল-ই

Duare Sarkar: অভিযোগ, দেখা যায়, কলসুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অজয় বৈদ্য় ও উপপ্রধান গফফুর আলি মোল্লা দুজনে মিলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম ঝাড়াই-বাছাই করছেন।

বেছে বেছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে নাম! তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে সরব দল-ই
বিক্ষোভ তৃণমূল কর্মীদের, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 26, 2021 | 12:05 AM

উত্তর ২৪ পরগনা: দুয়ারে ‘দুর্নীতি’! তৃণমূল (TMC) পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ দলের একাংশের। অভিযোগ, তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধান নিজ মনোনীত ব্যক্তিদের নাম বাছাই করে ফর্ম বিলি করছেন। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বুধবার, দেগঙ্গার জীবনতলা রোডে রাস্তা অবরোধ করে  বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তৃণমূল অধিকৃত পঞ্চায়েতের অন্যান্য সদস্যরা।

তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যদের অভিযোগ, কলসুর গ্রামে দুয়ারে সরকারে প্রায় সাড়ে তিনহাজার আবেদন জমা পড়েছে। স্থানীয়রাই অভিযোগ করেছেন শিবিরে লাইন দিয়েও তাঁরা সুবিধা পাচ্ছেন না। সেই অভিযোগ পেয়ে সরেজমিনে নামেন পঞ্চায়েতের অন্য সদস্যরা। অভিযোগ, তখনই দেখা যায়, কলসুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান অজয় বৈদ্য় ও উপপ্রধান গফফুর আলি মোল্লা দুজনে মিলে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম ঝাড়াই-বাছাই করছেন। তা নিয়ে প্রশ্ন করায় দুজনেই কোনও উত্তর দেননি বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েত সদস্যদের আরও অভিযোগ, নিজেদের ‘মনপসন্দ’ লোকজনের নামই আগে নথিভুক্ত করছিলেন তাঁরা। ঘটনার পরেই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন তাঁরা।

প্রাক্তন তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান মাধুরী চৌধুরী  বলেন, “আমাদের এখানে প্রায় সাড়ে তিনহাজার আবেদন জমা পড়েছে। আমরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, পঞ্চায়েত প্রধান ও উপপ্রধান সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিজেদের মনোনীত কিছু মানুষকে পাইয়ে দিচ্ছেন। ফলে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। আমরা প্রশ্ন করায় আমাদের এড়িয়ে গিয়েছেন। কোনও উত্তর করেননি। মঙ্গলবার, আমরা পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে দেখি দুজন মিলে ফর্ম ঝাড়াই বাছাই করছেন। তাই আমরা বাধ্য হয়ে আজ রাস্তায় নেমেছি। আমরা ব্লক উন্নয়ন আধিকারিককেও জানিয়েছি। তিনি এসে যা ব্যবস্থা করার করবেন। এই প্রথম নয়, এর আগেও বার্ধক্য ভাতা থেকে শুরু করে যেকোনও সরকারি কাজে ওঁরা এই স্বজনপোষণ করে আসছেন।”

পাল্টা, পঞ্চায়েত প্রধান অজয় বৈদ্য অভিযোগের সুরে বলেন, “আমরা কোনও দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত নই। আমাদের বিডিও ফর্ম স্ক্রুটিনি করতে বলেন। সেই নিয়ম মেনেই আমরা ফর্মগুলো বেছে রাখছিলাম। কে কী সুবিধা পাবেন, কে কোন সুবিধা পাবেন না, এই হিসেবটা আমাদেরই রাখতে হবে। কিন্তু কিছুজন মনে করছেন আমরা দুর্নীতি করছি। তাই পঞ্চায়েত অফিসে এসে দলবল নিয়ে হামলা চালিয়েছেন। আমাদের মারধর করেছেন।”

প্রায় একই সুর উপপ্রধানের গলাতেও। তিনি বলেন, “প্রায় সাড়ে তিন হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এখন সব মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুবিধা পাবেন এমন নয়। কারণ, অনেকেরই স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হয়নি। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড যাঁদের নেই তাঁদের আগে সেই কার্ড দেওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে আমাদেরই ফর্ম ঝাড়াই-বাছাই করতে হয়েছিল। সেটা দেখে দলেরই কিছু সদস্য মনে করে আমরা নিজেদের লোকেদের আগে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। কিন্তু, তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি।”

প্রশ্ন উঠছে, দুয়ারে সরকারের কর্মসূচিতে আবেদনকারীর তথ্য় যাচাই করার এক্তিয়ার কেবল সরকারি কর্মীদের রয়েছে। তাহলে পঞ্চায়েত সদস্যরা কী করে সেই কাজ করছেন? যদিও বা করে থাকেন, সেই যাচাই বা ‘ঝাড়াই-বাছাই’ সম্পর্কে কি আদৌ ওয়াকিবহাল ব্লক থেকে জেলা প্রশাসন। সে প্রসঙ্গে সাফাইয়ের সুরে পঞ্চায়েত প্রধান বলেন, “জেলায় সর্বত্রই দুয়ারে সরকার চলছে। এত এত নাম তো ব্লক অফিসার বা সরকারি আধিকারিকদের পক্ষে খুঁজে বের করে এত কম সময়ে তথ্য যাচাই করা সম্ভব নয়। তাই আমরাই সেই কাজটাই করছি।” ঘটনায় স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, সরকারি প্রকল্পের মধ্যে এমন ঝাড়াই-বাছাইয়ের পরিকল্পনা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। এরফলে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন। সরকারি প্রকল্পে এ হেন দলীয়রাজ জারি তৃণমূলের পক্ষেই সম্ভব বলে পাল্টা কটাক্ষ করেছে গেরুয়া শিবির। আরও পড়ুন: ২০ মিনিট থানায়, বিষ্ণুপুরের ‘কত্তাবাবু’-র সঙ্গে ‘সৌজন্য সাক্ষাত্‍’ সৌমিত্রর!