বাঁকুড়া: হঠাৎ হঠাৎ বিস্ফোরণ! ঘুমের মধ্যেও চমকে চমকে ওঠেন অনেকে! ভয়ে কাঁপে শিশুরা। তারে চেয়েও বেশি ভয়, গোটা বাড়িটাই হয়ত ধসে পড়ল কখনও! বড়জোড়ার মনোহর গ্রামে এখন গ্রামবাসীরা সিঁটিয়ে রয়েছে আতঙ্কে। উড়েছে ঘুম। মনোহর গ্রামের কাছেই খোলামুখ কয়লাখনিতে (Coal Mine Blast) যখন-তখন বিস্ফোরণে এখন বিপদে গ্রামবাসীরা। তাঁদের ঘরের দেওয়ালে ছাদে ফাটল দেখা দিতে শুরু করেছে। যখন-তখন বড় বিপদ হতে পারে। তাই পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে আমরণ অনশনে বসলেন শতাধিক। অভিযোগ, খনিতে কাজের সুবিধায় ডিটোনেটর যখন-তখন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আর সেই বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের গ্রামের প্রায় ১৫০-র বেশি বাড়িতে ফাটল দেখা গিয়েছে। কিছু বাড়ির দেওয়াল ধসে পড়ার সম্ভাবনাও জোরাল।
এক গ্রামবাসীর কথায়, “বড়জোড়া নর্থ কোলিয়ারির বিস্ফোরণে জেরবার মনোহর গ্রামের বাসিন্দারা। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগমের মালিকানাধীন ওই কয়লা খনি। সেই সংস্থাকে একাধিক বার দেওয়ালে ফাটল প্রসঙ্গে অবগত করেয়া হলেও, তারা নিষ্ক্রিয়। তাই আমরা অনশনে বসতে বাধ্য হয়েছি।” বিক্ষোভকারী এক মহিলার কথায়, “আমাদের ঘরে সব ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। বাইরে খেলে। আমরাও রয়েছি। একটা কোনও দুর্ঘটনা হলে কি সরকার আমাদের বাঁচাবে? আমরা তাই বাধ্য হয়ে অনশনে বসেছি।” অন্য আরেক গ্রামবাসী জানিয়েছেন, কয়লা উত্তোলনের কাাজ হচ্ছে হোক। কিন্তু, যখন-তখন যেখানে সেখানে যেন বিস্ফোরণ না ঘটানো হয়। ভাল করে খতিয়ে দেখিয়েই কাজ চলে। প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন দেওয়া হোক।
যদিও ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক ভাস্কর রায় বলেন, “খনির বিস্ফোরণের কারণে ওই ফাটল হয়নি। আমার কাছে জমা পড়া তদন্ত রিপোর্টে সেই উল্লেখ করা আছে। ওই গ্রাম খনি এলাকার অন্তর্গত নয়। তাই পুনর্বাসনের কোনও প্রশ্ন নেই।”
যত্রতত্র খনি তৈরির ধূমে রাস্তার হাল বেহাল। একটানা বৃষ্টি হলেই ধস নেমে সরে যায় মাটি। টানা কয়েক দিন বৃষ্টি হলেই মাথায় হাত পড়ে আমজনতার। এইসব বিপদ তো রয়েছেই। তারউপরে বাড়িতে বাড়িতে ফাটল। খনিসংলগ্ন গ্রামের পথে দেখা যায় কয়লা পরিবহনের জন্য দু’রকম ব্যবস্থা। একটি, বড় বড় আধুনিক ডাম্পারের কয়লা নিয়ে যাওয়া হয় রেল ইয়ার্ডের দিকে। অন্যটি হল খনিশ্রমিকদের মাধ্যমে। মাটির অনেক গভীরে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ খনি থেকে কয়লা যেমন তোলা হয়, তেমনই খোলামুখ খনি থেকেও তোলা হয়। ১০০-২০০ ফুট মাটি সরিয়ে কয়লার স্তরের একটা অংশ উন্মুক্ত করা হয়।
বড়জোড়ার অনেক আন্ডারগ্রাউন্ড বা ভূগর্ভস্তরীয় খনিই এখন পরিত্যক্ত। তবে তাতে কিছু পরিমাণ কয়লা রয়েছে। কয়লার স্তর আংশিক কেটে বাকিটা স্তম্ভের মতো রেখে দেওয়া হয়। ভূস্তরের ভার ধরে রাখতেই এমন ব্যবস্থা। এইভাবে একাধিক স্তর থাকে। সব স্তর শেষ হলে খননকার্যও শেষ হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূগর্ভে এ রকম ফাঁপা অসংখ্য খোপ তৈরি হয়েছে। কিছুটা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে হলেও অধিকাংশই অবৈজ্ঞানিক ভাবে তৈরি হয়েছে। মাটি ধসে যাওয়া ও পুরনো খনিতে আগুন লাগা রোজকার সমস্যা। কয়েকটি নির্দিষ্ট জায়গায় খোপ বুজিয়ে ফেলতে বালি ফেলা হয় সরকার-অধিগৃহীত ইস্টার্ন কোলফিল্ডস লিমিডেট বা ইসিএল-এর উদ্যোগে। কিন্তু, বড়জোড়ায় যে তা হয়নি এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশ।
আরও পড়ুন: ‘শুভেন্দুর মেজাজ হারানো স্বাভাবিক, ওতে আমি কিছু মনে করি না’