বাঁকুড়া: ১০ কোটি টাকার বিষ্ণুপুর টেণ্ডার দুর্নীতি-কাণ্ডে এ বার কয়েক লক্ষ টাকার গয়না বাজেয়াপ্ত। রাজ্য়ের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্য়ামাপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায়ের (Shyamaprasad Mukherjee) ঘনিষ্ঠ ধৃত রামশঙ্কর মহন্ত ওরফে খোকনকে জিজ্ঞাসাবাদের পরে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লকারের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। সেখান থেকেই গয়নার সন্ধান মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ধৃত রামশঙ্কর মহন্তকে জেরা করার পরেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে লকারের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। রামশঙ্কর মহন্তের নামে সেই লকার ভাড়া নেওয়া হলেও আসলে সবই ছিল শ্যামাপ্রসাদের (Shyamaprasad Mukherjee) সম্পত্তি। রামশঙ্কর কেবল জমা রাখতেন। এমনটাই জেরায় জানিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ। যা গয়না পাওয়া গিয়েছে তার বাজার মূল্য প্রায় লক্ষাধিক। তবে, ঠিক কত পরিমাণ গয়না রয়েছে তা এখনও জানা সম্ভব না হলেও মূলত সোনা ও রূপো রয়েছে বলেই খবর সূত্রের।
অন্যদিকে প্রাক্তন মন্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট গুলি রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্রের খবর, ঐ অ্যাকাউন্ট গুলিতে বিভিন্ন সময়ে ২০ লক্ষ টাকা থেকে ৭০ লক্ষ টাকা নগদে জমা করা হয়েছে। এমনকি বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০ লক্ষ টাকা জমা করার তথ্যও হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এছাড়াও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের ছেলে-মেয়ের অ্যাকাউন্টগুলিতে। তাঁদের অ্যাকাউন্টে প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি জমা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তবে, টাকার পরিমাণ সঠিকভাবে কত সে বিষয়ই এখনও স্পষ্টত মুখ খোলেননি তদন্তকারীরা। প্রশ্ন উঠছে প্রাক্তন মন্ত্রীর এত জমানো টাকার উত্স কী? সূত্রের খবর, টেণ্ডার দুর্নীতির ঘটনায় আরও এক প্রাক্তন মন্ত্রী ঘনিষ্ঠকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা।
শনিবারই বুকে ব্যথা নিয়ে বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর রবিবার রাজ্য়ের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে (Shyamaprasad Mukherjee) আদালতে তোলা হয়। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে এদিন, তিনি যান বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে। এদিন, আদালতে সওয়াল জবাবের পর আদালত রাজ্য়ের প্রাক্তন মন্ত্রীকে ১১ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জারি থাকবে এই নির্দেশ বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। সরকারি আইনজীবীর কথায়, “শ্যামাপ্রসাদবাবুর থেকে একাধিক নথি ও তথ্য পাওয়া গিয়েছে। আরও এভিডেন্স আসছে। তদন্ত চলছে। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় (Shyamaprasad Mukherjee) একা নন, তিনি ও তাঁর একাধিক সহকারী এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত।”
গতকালই, বিষ্ণুপুর টেণ্ডার দুর্নীতি-কাণ্ডে শ্যামাপ্রসাদ ঘনিষ্ঠ রামশঙ্কর মহন্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রামশঙ্করের বাড়ি থেকে ১৯ লক্ষ টাকা-সহ চারটি জমির দলিল এবং স্থানীয় পোস্ট অফিসে শ্যামাপ্রসাদের নামে আটটি সেভিংস অ্যাকাউন্টের পাশবইও হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। শ্যামাপ্রসাদের টাকা রামশঙ্করের মাধ্যমেই বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ত। প্রাক্তন মন্ত্রীর জমি কেনাবেচা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব কিছুই দেখতেন রামশঙ্কর অনুমান গোয়েন্দাদের। ইতিমধ্যেই প্রাক্তন মন্ত্রীর আরেক ঘনিষ্ঠ বিষ্ণপুর পুরসভার প্রাক্তন ওভারশেয়ার দিলীপ গড়াইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। টেন্ডার দুর্নীতিতে তাঁর সক্রিয় যোগ রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
ইতিমধ্যেই, তদন্তে নেমে শ্যামাপ্রসাদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে মোট ৬টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে পুলিশ। পাশাপাশি শ্যামাপ্রসাদের নামে একাধিক জমির হদিশও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। একাধিক পেট্রোল পাম্পের মালিক হিসাবেও উঠে এসেছে প্রাক্তন মন্ত্রীর নাম। তদন্তকারীরা বলছেন, এই মামলার জট অত্যন্ত গভীরে। জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, “শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের অ্যাকাউন্টের নথি খতিয়ে দেখে দেখা গিয়েছে, অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। আর্থিক লেনদেনের হিসাব পাওয়া যায়নি। এছা়ডা অনেক জমি ও পেট্রোল পাম্পেরও মালিকানার হদিশ মিলেছে। সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” আরও পড়ুন: তৃণমূল বিধায়ক রাজ চক্রবর্তীকে ‘পেছন থেকে হামলা’, অশান্ত ‘অর্জুন গড়’