বাঁকুড়া: প্রত্যেক বছর মাঘের ৪ তারিখ দ্বারকেশ্বর নদের চরে বসে সুপ্রাচীন মুড়ি মেলা। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ আসেন এই মেলা দেখতে, মেলায় অংশ নিতে। শীতের আদর গায়ে মেখে চরে বসে নানান মুখরোচক দিয়ে মুড়ি খাওয়াই এই মুড়ি মেলার প্রাণ। ফি বছর বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ায় এই মেলা বসে। বাংলার ঐতিহ্য সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে হাজারও লোকাচার, উৎসব-পার্বণ। সেসব নিয়ে মেতে ওঠেন গ্রামের লোকেরা। সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এখন তো সব কিছুই এতটা প্রচার পায় যে, বাইরে থেকেও বহু মানুষ যান কেঞ্জাকুড়ার এই মুড়ি মেলা দেখতে।
কতদিনের পুরনো এ মেলা, তা স্থানীয় বাসিন্দারাও ঠিক করে বলে উঠতে পারেন না। তবে এ মেলা শতাব্দী প্রাচীন, এক কথায় মানেন সকলে। আজ শুক্রবার সকাল থেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ এসে ভিড় করেছেন দ্বারকেশ্বরের ধারে। বাঁকুড়া জেলার পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলা এমনকী কলকাতা থেকেও অনেকে গিয়েছেন।
কেঞ্জাকুড়ায় দ্বারকেশ্বরের চরে রয়েছে মাতা সঞ্জীবনীর আশ্রম। সেই আশ্রমে প্রতি বছর মকর সংক্রান্তির দিন শুরু হয় হরিনাম সংকীর্তন। ৪ঠা মাঘ অবধি তা চলে। কথিত আছে, একসময় শ্বাপদসঙ্কুল পথ পার করে এই আশ্রমে আসতেন মানুষ। রাতে আর তাঁরা বাড়ি ফিরতেন না। পরদিন সকালে নিজেদের সঙ্গে থাকা মুড়ি দ্বারকেশ্বরের জলে ভিজিয়ে খেয়ে বাড়ির পথে রওনা দিতেন। সেই থেকে এই মুড়ি মেলার শুরু।
পাহাড়ের আকার নিতে পারে এই মুড়ি মেলায় আনা মুড়ি। সঙ্গে কেউ আনেন সন্দেশ, নাড়ু, রসগোল্লা, হরেক কিসিমের মিষ্টি, জিলাপি। কেউ আবার চপ, বেগুনি, টমেটো, মূলা, শশা, লঙ্কা,পেঁয়াজ, ঘুগনি, নারকেল নিয়ে আসেন। নদের চরে গামছা বা প্লাস্টিক পেতে বসে গুছিয়ে গল্প আর মুড়ি খাওয়ার সে যে কী আনন্দ, যাঁরা এ মেলায় যান তাঁরাই জানেন। বছরভর একা একা পড়ে থাকা দ্বারকেশ্বরের এই সঞ্জীবনী ঘাটে এদিন যেন মিলনমেলা বসে।
এ মেলায় এসেছেন নন্দিতা পাল। তিনি বলেন, “আমার এখানে ১৫ বছর বিয়ে হয়েছে। আজ প্রথমবার এলাম। এতদিন শুনেছি, টিভিতে দেখেছি। আসার খুব ইচ্ছা ছিল। এবার সকলে এলাম। দারুণ ভাল লাগছে দেখে। সকলে একসঙ্গে বসে মুড়ি খাচ্ছে। চপ, টমেটো, কাঁচা লঙ্কা, একদম গ্রামবাংলার খাবার যেমন সেটাই থাকে।”
অন্যদিকে বাঁকুড়ার ছেলে বিল্বমঙ্গল পাত্র কাজের সূত্রে কলকাতা থাকেন। তবে এ দিনটা বাড়ি ফিরতেই হয়। বিল্বমঙ্গল বলেন, “এটা আমাদের কাছে একটা বিশেষ দিন। প্রতিবারই আসি। সারা বছর অপেক্ষা করে থাকি আমরা। নানারকমের জিনিস দিয়ে মুড়ি আসি মেলায়। মুড়ির সঙ্গে শশা, মটরশুটি, লঙ্কা, পেঁয়াজ, ঘুগনি কী না আনি। এটার একটা আলাদা আনন্দ। বলে বোঝাতে পারব না। আমি কাজের জন্য কলকাতায় থাকি। কিন্তু এইদিনটার জন্য বাড়ি এসেছি। আজ থেকে কাল আবার চলে যাব।”