Bankura: জীবন বাজি রেখে সাতভাইকে বাঁচিয়েছিল ‘চম্পা’, বোনের স্মৃতিতে ফুটন্ত ঘিয়ে হাত ডুবিয়ে আজও সাধনা করে চলেছে ভাইয়েরা

Hirak Mukherjee | Edited By: জয়দীপ দাস

Jan 18, 2025 | 10:24 AM

Bankura: সাত ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে জীবন বাজি রেখেছিলেন একমাত্র বোন। সেই বোনের স্মৃতিতে শত শত বছর ধরে কৃচ্ছসাধন করে ফুটন্ত ঘিয়ে হাত ডুবিয়ে গুড় পিঠে তৈরf করছেন আদিবাসী পুরুষেরা। বাংলার বুকেই প্রতি বছর হয়ে আসছে বিশেষ পুজো।

Bankura: জীবন বাজি রেখে সাতভাইকে বাঁচিয়েছিল ‘চম্পা’, বোনের স্মৃতিতে ফুটন্ত ঘিয়ে হাত ডুবিয়ে আজও সাধনা করে চলেছে ভাইয়েরা
চলছে অদ্ভুত পুজো
Image Credit source: TV 9 Bangla

Follow Us

বাঁকুড়া: সাত ভাইয়ের জীবন বাঁচাতে শত শত বছর আগে জীবন বাজি রেখেছিলেন একমাত্র বোন। সেই বোনের স্মৃতিতে আজও কৃচ্ছসাধন করেন গ্রামের আদিবাসী পুরুষেরা। বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে গ্রামের অদূরে পুজোর পাশাপাশি ফুটন্ত ঘিয়ে হাত ডুবিয়ে গুড়পিঠে তৈরি করেন পুরুষেরা। বোনের জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে পুরুষদের এমন কৃচ্ছসাধনের ইতিহাস শুধু এদেশে নয় সারা বিশ্বেই বিরল। 

সাত ভাই চম্পার গল্প জানা সকলেরই। দেশে দেশে বিভিন্ন ভাষায় ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে রূপকথায় বর্ণিত হয়েছে সেই গল্প। কিন্তু, বাঁকুড়ার তালডাংরা ব্লকের পাকুড়ডিহা গ্রামে আদিবাসীদের সাত ভাই চম্পার গল্পটা একটু ভিন্ন। বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত এই গ্রাম পুরোপুরি জঙ্গলে ঘেরা। আজ থেকে কয়েক শতক আগে জঙ্গল ছিল আরও গভীর। আনাগোনা ছিল ভয়ঙ্কর সব জন্তুর। তবে এই জঙ্গলকে পাথেয় করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতো গ্রামের মানুষ। কথিত আছে আজ থেকে কয়েকশো বছর আগে পাকুড়ডিহা গ্রামে সাত ভাই ও এক বোনের এক সংসার ছিল।

সাত ভাই সকাল হলেই বের হতেন পশু শিকারে। দক্ষ শিকারী সেই সাত ভাই একদিন জঙ্গলে শিকারে গিয়ে আর ফিরে আসেননি। বোনের বুঝতে দেরি হয়নি সাত ভাই বিপদে পড়েছে। এরপর সেই বোন একাই জঙ্গল গিয়ে খোঁজ শুরু করে। দেখা যায় বন্যপ্রাণীদের কবলে পড়েছিল ভাইয়েরা। রক্তাক্ত অবস্থাতেই উদ্ধার করে বাড়িতে ফিরিয়ে আনে বোন। বোনের একার চেষ্টা, অক্লান্ত পরিশ্রম আর সেবাযত্নে ধীরে ধীরে সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসে  সাত ভাই। সেবার প্রতীক সেই আদিবাসী বোন কালক্রমে তাঁর আত্মত্যাগের জন্য আদিবাসী সমাজে দেবী রূপে প্রতিষ্ঠা পায়। পাকুড়ডিহা গ্রামে সেই বোনের স্মৃতিতেই শুরু হয় সাত ভায়া মিট্টাং মেশ্রা মতান্তরে সাত ভাইয়া মিট্টাং বেহানা উৎসবের। 

শত শত বছর পরেও আজও সেই বোনকে ভোলেনি পাকুড়ডিহা গ্রাম। আজও আপামর বোনেদের মঙ্গল কামনায় গ্রামের পুরুষেরা একমাস ধরে কঠোর ব্রত পালন করেন। ৩ মাঘ এলেই সকলে জড়ো হন গ্রামের প্রান্তের একটি মাঠে। সেখানে রীতি মেনে বিভিন্ন পুজোর পাশাপাশি মাটির খোলায় ফুটন্ত ঘিয়ের মধ্যে হাত ডুবিয়ে গুড় পিঠে ভেজে তা প্রসাদ হিসাবে নিবেদন করেন পুরুষেরা। পুরুষেরা যখন এই কৃচ্ছসাধন করেন তখন গ্রামের মহিলারা ধামসা মাদলের তালে তালে অভিবাদন জানাতে থাকেন পুরুষদের। ধীরে ধীরে পাকুড়ডিহা গ্রামের আদিবাসীদের এই উৎসব এমন জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে বর্তমানে তা মেলার রূপ নিয়েছে। আদিবাসী যুবকদের এই কৃচ্ছসাধন দেখতে ভিড় জমান আশপাশের এলাকার অনেক মানুষই। দূরদূরান্ত থেকেও আসেন অনেকে। বাংলা-সহ সারা দেশে যখন নারী নির্যাতনের সংখ্যা প্রতিদিন নতুন রেকর্ড গড়ছে তখন প্রত্যন্ত পাকুড়ডিহা গ্রামের আদিবাসীদের সাত ভায়া মিট্টাং মেশ্রা নিঃসন্দেহে নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে আধুনিক সমাজকে।  

Next Article