বাঁকুড়া: আদিবাসী উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারের উদ্যোগে রবিবার শুরু হচ্ছে তিন দিনের জয় জোহার মেলা। অথচ এই মেলা যাঁদের জন্য সেই আদিবাসী বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত মঞ্চ বয়কট করল সরকারি এই মেলা। সম্মিলিত মঞ্চের দাবি, অর্থের অভাবের কারণ দেখিয়ে রাজ্যের জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে একের পর এক আদিবাসী হোস্টেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুলগুলি ধুঁকছে শিক্ষকের অভাবে। সেই জায়গায় অপ্রয়োজনীয় ভাবে আদিবাসীদের সংস্কৃতি বাঁচানোর নামে সরকারি টাকা নয়ছয় করছে রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারেবারে বলেছেন, “জঙ্গলমহল হাসছে। জঙ্গলমহলের আদিবাসী মা, বোন,ছাত্র ছাত্রীরা হাসছে।” সম্প্রতি, খাতড়ার মাঠে সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানে এসেও সে কথা বারেবারে স্মরণ করে দিয়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, “এখন জঙ্গল মহলের মানুষ শান্তিতে বাস করছেন। তাঁদের ছেলে মেয়েরা এখন স্কুলে যাচ্ছেন, পড়ছেন। আমি খুশি।” কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর কথা যে শুধু মুখের কথা নয় তা মমতার জঙ্গলমহল সফর শেষ হতেই হাড়ে হাড়ে টের পেল প্রশাসন।
আজ থেকে বাঁকুড়া সহ জঙ্গলমহলের জেলাগুলিতে আদিবাসী সংস্কৃতি উন্নয়নের লক্ষে সরকারি ভাবে শুরু হল জয় জোহার মেলা। ব্লকে ব্লকে শুরু হয়েছে এই মেলা। কিন্তু মূলত যাদের উদ্যেশ্যে এই মেলা সেই আদিবাসীদের একটা বৃহত্তর অংশ কার্যত এই মেলা বয়কট করে বসলেন।
গতকাল বিকালে বাঁকুড়ার খাতড়ায় রীতিমত মিছিল করে এই ‘জয় জোহার মেলা’ বয়কটের কথা ঘোষণা করে আদিবাসীদের সম্মিলিত মঞ্চ ফোরাম ফর অল আদিবাসী অর্গানাইজেশনস। তাঁদের দাবি, অর্থ নেই এই অজুহাতে রাজ্য সরকার আদিবাসীদের একের পর এক স্কলারশিপ বন্ধ করে রেখেছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে একের পর এক আদিবাসী হোস্টেল। সাঁওতালি মাধ্যমের স্কুলিগুলি শিক্ষক ও পরিকাঠামোর অভাবে ধুঁকছে। অন্যদিকে অ আদিবাসীদের আদিবাসী হিসাবে ঢালাও সংশাপত্র দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রকৃত আদিবাসীরা বিভিন্ন সরকারি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই অবস্থায় শুধুমাত্র আদিবাসীদের ‘নাচানোর’ জন্য জয় জোহার মেলার আয়োজন করছে রাজ্য সরকার। সেই কারণেই এই মেলা বয়কটের সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন আদিবাসীদের সম্মিলিত মঞ্চের নেতারা। আগামীদিনে রাজ্য সরকারের এই দ্বিচারিতার বিরুদ্ধে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়ে রেখেছেন তাঁরা। খাতড়া তল্লাট পারগানার নেতা বাবুরাম কিস্কু বলেছেন, “আদিবাসীরা নিজেদের সংস্কৃতি সুরক্ষিত রয়েছে। তাই তাদের জন্য আলাদা করে কোনও মেলার দরকার নেই। এটা আমরা বয়কট করছি।”